লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। কিন্তু বাকি শরিকদের সমর্থনে এনডিএ সরকার গড়ে উঠবে। এটা সত্যিই প্রকৃত এনডিএ সরকার। কারণ বিজেপি এখন সংখ্যালঘু। এই আবহে বাংলার দিকে তাকালে বিজেপি জিতেছে ১২টি আসন। আগের বারের থেকে ৬টি আসন কমেছে। আর বাংলায় বাম–কংগ্রেস জোট একেবারে ধরাশায়ী হয়েছে। কংগ্রেসের পাঁচবারের সাংসদ তথা হেভিওয়েট প্রার্থী বহরমপুর থেকে অধীর চৌধুরী হেরে গিয়েছে। হেরে গিয়ে সাংসদ পদ খুইয়েছেন। এবার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদও ছাড়ার ইচ্ছেপ্রকাশ করলেন বহরমপুরের পরাজিত কংগ্রেস প্রার্থী। এমনকী তাঁর বদলে যোগ্য কাউকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদে বসানোর জন্যও কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বকে অনুরোধ করেছেন অধীর চৌধুরী।
এদিকে ইউসুফ পাঠানের গুগলিতে বোল্ড আউট হয়ে অধীর চৌধুরী কী করবেন? এই প্রশ্ন এখন উঠেছে সর্বত্র। কারণ তিনি নিজে মুখে বলেছিলেন, তৃণমূল যদি তাঁকে হারায় তাহলে তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেবেন এবং মাঠে গিয়ে বাদাম বেচবেন। পরাজয়ের পর কোনও অভিযোগ করেননি তিনি। মানুষের রায় মাথা পেতে মেনে নিয়েছেন। কিন্তু এই ফলাফলের পর সংবাদমাধ্যমে অধীর জানিয়েছেন, রাজনীতি করতে গিয়ে কোনওদিন রোজগারে মন দেননি তিনি। তাই এবার কী করবেন সেটা বুঝতে পারছেন না। দলবদল তিনি করবেন না সেটাও জানিয়েছেন। অধীর চৌধুরী বলেন, ‘আমি কোনওদিন আমার আয়ের দিকে গুরুত্ব দিইনি। রাজনীতি ছাড়া আর কিছুতেই আমার দক্ষতা নেই। তাই আমার জন্য কঠিন সময় আসছে। কেমন কাটিয়ে উঠব জানি না।’
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে থাকছেন হাসিনা–বিক্রমসিংঘে, মোদীর সঙ্গে কথা দু’জনের
অন্যদিকে লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় সবথেকে অপ্রত্যাশিত ঘটনা অধীরের হেরে যাওয়া। অধীরের কথাতেও তাই ঝরে পড়েছে বিস্তর হতাশা। তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কী হবে? সেটাও প্রশ্নের মুখে। এই বিষয়ে অধীরের বক্তব্য, ‘কী করব আমি জানি না। কোনও দিন রাজনীতি করা ছাড়া আর কিছু শিখিনি। নয়াদিল্লিতে আমি নিজেকে বিপিএল সাংসদ বলতাম। কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে ব্যবসা, বাণিজ্যও শেষ হয়ে গিয়েছে।’ ইন্ডিয়া জোটে যখন তৃণমূল কংগ্রেস আছে তখন অধীরের মমতা বিরোধী পদক্ষেপই এমন ভরাডুবির কারণ বলে অনেকে মনে করছেন। এমনকী এই নিয়ে মল্লিকার্জুন খাড়গের সঙ্গে তাঁর বাকযুদ্ধ হয়েছিল।
এছাড়া এই পরাজয়ের পর অধীরের কাছে কংগ্রেস হাইকমান্ডের কোনও ফোন এখনও আসেনি। কথা হলে প্রদেশ সভাপতি পদ ছাড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করবেন বলে জানিয়েছেন অধীর চৌধুরী। তাঁর কথায়, ‘ভোটের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা এবং অর্থ ঢুকে যাওয়াই এই পরাজয়ের জন্য দায়ী। আমি তো আগেই বলেছিলাম আমার বদলে অন্য কাউকে প্রদেশ সভাপতি করা হোক। কারণ সময় দিতে পারতাম না। সোনিয়া গান্ধী বলেছিলেন বলে এই পদে ছিলাম। এখন দল যোগ্য কাউকে এই পদে বসাক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার কোনও ব্যক্তিগত সংঘাত নেই। দিল্লি বললে জোট হতো। আমি বলেছিলাম এখানকার সরকার আমাদের দল করতে দিচ্ছে না। এখন আমার অনুরোধ পশ্চিমবঙ্গে তো সব দখল হয়ে গিয়েছে। তাই আমার উপরে যা খুশি করুন। কিন্তু কংগ্রেস করার অপরাধে কারও উপরে আক্রমণ করবেন না।’