কেন্দ্রে সরকার গড়তে না পারলেও লোকসভা ভোটে বিপুল সাফল্য পেয়েছে ইন্ডিয়া জোট। রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেসও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। শেষ কয়েক বছরে বারবারই পরিবারতন্ত্র নিয়ে গান্ধী পরিবারকে একহাত নিয়েছে বিজেপি। একের পর এক সভা থেকে কংগ্রেসকে পারিবারিক পার্টির আখ্যা দিয়েছেন বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। ২০১৯ সালে কংগ্রেসকে অধিকাংশ রাজ্যে মানুষ প্রত্যাখ্যান করলেও ২০২৪ লোকসভাতেই রাহুল গান্ধী ঘটিয়েছেন উলটপুরাণ। এবারের চিত্রটা অনেকটাই বদলে গেছে। ইন্ডিয়া জোট ২০০ পার করে ফেলেছে, কংগ্রেসও ১০০-র কাছাকাছি পৌঁছে গেছে, ফলে আগের থেকে তাঁদের লড়াইয়ের ঝাঁঝ আরও বাড়তে চলেছে।
লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের ভালো ফলের তাৎপর্য রয়েছে আরও একটি কারণে। এই লোকসভা ভোটে সাফল্য আগামী দিনে বিভিন্ন রাজ্যে হওয়া বিধানসভা ভোটেও কিছুটা প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিকহমল। সেক্ষেত্রে কংগ্রেসের এক সময়ের গড় হিসেবে থাকা বেশ কয়েকটি রাজ্যেই নতুন করে লড়াইয়ের জমি ফিরে পাবে তাঁরা। কর্মীরা যেমন চাঙ্গা হবেন, তেমনই বিধানসভা নির্বাচনের ক্ষেত্রে মানুষের ভরসা জিততে লোকসভার ফলও বড় হাতিয়ার হতে চলেছে কংগ্রেসের।
আরও পড়ুন-ওয়ার্নারের সঙ্গে জুটি ভয়ঙ্কর হবে,স্পিনও ভালো খেলে ডেভ…হুঙ্কার অজি ওপেনারের
কংগ্রেসের এই কামব্যাকে রাহুল গান্ধীই হিরো। গত পাঁচ বছর ধরে গোটা দেশের প্রায় ১০০০০ কিলোমিটার রাস্তা তিনি হেঁটেছে। কংগ্রেসের ভারত জোড়ো যাত্রা এবং ভারত জোড়ো ন্যয় যাত্রা এক্ষেত্রে সুপারহিট বলা যেতে পারে, কারণ এই দুই ক্যাম্পেনের দৌলতে মানুষেকর একদম কাছাকাছি চলে আসতে পেরেছেন রাহুল গান্ধী। সামনাসামনি কথা বলে মানুষের সমস্যার কথা শুনতে পেরেছেন, আর সেটাই তাঁকে জনগনের আরও কাছে নিয়ে গেছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। অবশ্য ওয়েনাড় এবং রাইবেরেলি থেকে জেতার পর এখন তাঁর কাছে উভয় সঙ্কট, কোন সিটে তিনি সাংসদ থাকবেন, তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে তাঁকে।
দুই যাত্রা দিয়েই কার্যত পাঁচ বছর ধরে এবারের লোকসভা ভোটের ঘুঁটি সাজাচ্ছিলেন রাহুল গান্ধী। প্রত্যেকটি পদযাত্রাতেই দেখা যেত, হাতে সংবিধানের বই নিয়ে চলতেন তিনি, এক্ষেত্রে সংবিধানরক্ষার যে দায়িত্ব তিনি নিয়েছেন, তা মানুষকে বোঝানোর ক্ষেত্রে সফল হয়েছেন রাহুল গান্ধি। মঙ্গলবার ইন্ডিয়া জোটের ভালো ফলাফলের পর রাহুল গান্ধি সাংবাদিক সম্মেলনের সময়ও সামনে রেখেছিলেন ছোট আকারের একটি সংবিধানের বই। ২০১৪ এবং ২০১৯ সালে কংগ্রেসের মুখ হিসেবে তিনি লড়াই করেছিলেন, তবে বিপুল হার দেখতে হয়েছিল, ফল রাস্তাটা মোটেই মসৃণ ছিল না তাঁর কাছে।
আরও পড়ুন-বিজেপির সঙ্গে দর কষাকষি শুরু নীতীশের…চার মন্ত্রক,বিহারে দ্রুত নির্বাচনের দাবি জেডিইউর
সোশাল মিডিয়ায় রাহুল গান্ধী যুব ভোটারদের টানার জন্যেও বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন, আর সেই কাজে তিনি সফলও হয়েছেন। এক্ষেত্রে কখনও নিজের ছোটবেলায় দিদির সঙ্গে তার কাটানো সময়ের কথা উল্লেখ করেছেন, কখনও নিউ ইয়ারে কেক বানানোর গল্প বলেছেন। আবার রাজনীতিতে নিজের ছাপ রাখতে, মহাত্মা গান্ধীর মূর্তির নিচে বসে প্রধানমন্ত্রীকে নিশানাও করেছেন। নরমে গরমেই বুঝিয়েছেন, তিনি লড়াইয়ের ময়দান ছেড়ে পালিয়ে যাননি ব্যর্থতা সত্ত্বেও।
আরও পড়ুন-ক্রস ভোটিং,দলীয় কোন্দলে হার প্যারালিম্পিক্সে জোড়া স্বর্ণপদকজয়ী দেবেন্দ্র ঝাঝারিয়ার
এক্ষেত্রে গতবছর মার্চ মাসে রাহুলের লোকসভার সদস্যপদ বাতিল করে দেওয়ার বিষয়টি বিজেপির আখেরে ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। টানা আদানিদের নিয়ে মোদী সরকারকে টার্গেট করেছেন। পাশাপাশি আরও একটি বিষয় উল্লেখ্যযোগ্য, রাহুল গান্ধীর বক্তব্যে সচরাচর নেহেরু বা ইন্ডিরা গান্ধীর প্রসঙ্গ টানেন না, অর্থাৎ পরিবারতন্ত্রের অভিযোগের থেকে নিজেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেন । অগ্নিবীর স্কিম নিয়ে বারবার তিনি বিজেপিকে টার্গেট করেছেন। ফলে এক নয়, একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কারণ মিলে যাওয়াতেই সাফল্য পেয়েছে কংগ্রেস।