একেবারে অশান্তির চেনা ছন্দে ফিরল বীরভূম। চড়াম চড়াম, গুড় বাতাসার জন্য কুখ্যাত ছিল বীরভূম। সেই বীরভূমের বেতাজ বাদশা অনুব্রত মণ্ডল। তিনি বর্তমানে তিহাড় জেলে বন্দি। তাতে কী? অশান্তির সেই চেনা ছবি দেখা গেল বীরভূমের বিভিন্ন প্রান্তে।
বীরভূমে নথি পুড়িয়ে দেওয়া হল। দাউ দাউ করে জ্বালিয়ে দেওয়া হল বাইক। ব্যালট পেপার পুড়িয়ে দেওয়া হল। ময়ুরেশ্বরে ব্যালট পেপার ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হল পুকুরে। ভোটকর্মীদের শাসানো চলে পুরোদমে। আসলে ছাপ্পা দিতে এসেছিল কয়েকজন দুষ্কৃতী। তারপরই এই অশান্তি।
এক মহিলা ভোটকর্মী সংবাদমাধ্য়মে জানিয়েছেন, হঠাৎ করে কয়েকজন এসে ব্যালট পেপার নিয়ে নিল। ওদের মুখ বাঁধা ছিল। এরপর কয়েকজন এসে ব্যালট বাক্স নিয়ে চলে গেল। কেন্দ্রীয় বাহিনীর কেউ এলাকায় ছিল না। জানিয়েছেন মহিলা ভোটকর্মী। আর কোনওদিন ভোট করাতে আসবেন?
অপর এক মহিলা ভোটকর্মী বলেন, একজন মাত্র বন্দুকধারী পুলিশ ছিলেন। তার পক্ষে সবদিক সামাল দেওয়া সম্ভব ছিল না। আর কোনওদিন ভোট করাতে আসব না।
এক মহিলা ভোটকর্মী বলেন, প্রায় ২০০র কাছাকাছি ভোট হয়েছিল। দৌড়তে দৌড়তে এল ওরা। ব্যালট নিয়ে বাক্সে ঢোকাল। এরপর কয়েকজন এসে ব্যালট বাক্স নিয়ে চলে গেল। কেন্দ্রীয় বাহিনী কেউ ছিলেন না। আর ভোট হলে থাকব না।
পরিস্থিতি কার্যত ভয়াবহ। আতঙ্কে সিঁটিয়ে আছেন ভোটকর্মীরা। কী করবেন তারা বুঝতে পারছেন না। ভোটগ্রহণকেন্দ্রের সামনে পড়ে রয়েছে পোড়া বাইক। একেবারে যেন যুদ্ধক্ষেত্র। চারদিকে ছড়িয়ে রয়েছে পোড়া ব্যালট। ভোটের লাইনে একজনও নেই। সবাই আতঙ্কে গ্রামের মধ্য়ে চলে গিয়েছেন। এলাকায় শুধু মুখ বাঁধা দুষ্কৃতীদের দাপট। বাইক বাহিনীর দাপট।
ময়ূরেশ্বরের গ্রাম পঞ্চায়েতের রাজচন্দ্রপুরের ১৪৭ নম্বর বুথে বুথের ভেতর ঢুকে ভয়াবহ তাণ্ডব। প্রথমে ছাপ্পা দেওয়ার চেষ্টা। এরপর ব্যালট পেপার লুঠ করে তাতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হল। জ্বালিয়ে দেওয়া হল বাইক। তবে অনেকের মতে, এই ছবি আগে থেকেই দেখতে অভ্যস্ত বীরভূম।
২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটের দিনও একই ছবি দেখা গিয়েছিল বীরভূমে। সেবারও অশান্ত হয়েছিল বীরভূম। সেই ছবিই ফের ফিরল এদিন। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বর্তমানে তিহাড় জেলে বন্দি। গোটা ভোটপর্ব জুড়ে তিনি বীরভূমে আসেননি। হুমকির তো কোনও প্রশ্নই নেই। কিন্তু তিনি জেলবন্দি থাকলে কী হবে, চেনা সেই অশান্তির ছন্দেই ফিরল বীরভূমে।