তিনি আছেন। কিন্তু খবর এল তিনি নেই। আর এই খবর আসতেই পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া। শাসকদলও ধরে নেয় তাঁদের আরও এক সৈনিক পঞ্চায়েত নির্বাচনের বলি হয়েছেন। তবে ভুলটা হাসপাতাল করেনি। ভুলটা করেছেন তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক। আর তার জেরে রটে যায় বাসন্তীর তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী আজহার লস্কর মারা গিয়েছেন। বিধায়কের থেকে এই খবর চাউর হওয়ায় কেউ অবিশ্বাস করেননি। সবাই ধরেই নিয়েছেন মৃত্যু হয়েছে আজহার লস্করের। অথচ তখন তিনি জীবিতই রয়েছেন। এই বিষয়ে ভুল হয়েছে বুঝতে পেরে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন বাসন্তীর তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক শ্যামল মণ্ডল।
কেন এমন ঘটনা ঘটল? তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক শ্যামল মণ্ডল ভুল স্বীকার করে নিলেও তিনি জানান, এই খবর তিনি রাতে পেয়েছেন আজহারের পরিবার এবং স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্বের কাছ থেকে। এখন প্রশ্ন উঠছে, তাহলে আজহারের পরিবার এবং তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব কার কাছ থেকে এমন খবর পেল? পরিবারই যদি তাঁর বাড়ির সদস্যের মৃত্যুসংবাদ জানায় তাহলে অন্যের ভুলটা কোথায়! তবে সবার ঘোর কাটে রবিবার সকালে। হাসপাতাল থেকে খবর নিয়ে সবাই জানতে পারেন, আজহার বেঁচে আছেন। শুধু তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক।
আজহারের ঠিক কী ঘটেছিল? শনিবার গ্রামবাংলা জুড়ে পঞ্চায়েত নির্বাচন চলছিল। সেদিন নানা জেলায় হিংসা হয়েছে বলে অভিযোগ। যদিও ভোটপর্ব মিটে যায় বিকেলে। এরপর রাধারানিপুরের ২৪১ নম্বর বুথের সামনে সংঘর্ষ শুরু হয় আরএসপি এবং তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীদের মধ্যে। তুমুল মারপিঠে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় বাসন্তী। দু’পক্ষের সংঘর্ষে কমপক্ষে ১০ জন মারাত্মক জখম হন। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু আজহারের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। তখন তাঁকে প্রথমে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতাল এবং পরে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।
আরও পড়ুন: পাথর ছুড়ে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে ডিএসপি ট্রাফিকের, ধুন্ধুমার কাণ্ড মালদায়
তারপর ঠিক কী ঘটল? মৃত্যুসংবাদ যখন গ্রামে পৌঁছেছে তখন শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বিধায়কও এই খবর ফোনে দিতে শুরু করেন। সেখান থেকে তা সংবাদমাধ্যমে জায়গা করে নেয়। সংবাদমাধ্যমে এমন খবর দেখে নড়েচড়ে বসে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এসএসকেএম সূত্রে খবর, আজ, রবিবার সকালে আজহারের অস্ত্রোপচার করা হয়। কিন্তু হাসপাতাল এমন খবর কাউকে দেয়নি। বিধায়ক সেই ভুল বুঝতে পেরে বলেন, ‘শনিবার আজহার মারাত্মকভাবে জখম হন। তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। মাঝরাতে অবস্থা সংকটজনক হয়। তারপর তাঁর পরিবার আমাদের জানিয়েছিল, আজহারের মৃত্যু হয়েছে। তাই এই খবর সর্বত্র জানিয়ে দিই। কিন্তু হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, ভোরে আজহারের অস্ত্রোপচার হয়েছে। তিনি মারা যায়নি। ঈশ্বরের কৃপায় এখন ভাল আছেন। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমি ক্ষমা চাইছি।’