ধর্মশালায় অনুষ্ঠিত পঞ্জাব কিংস বনাম দিল্লি ক্যাপিটালস ম্যাচের প্রথম স্ট্র্যাটেজিক টাইমআউট চলাকালীনই আইপিএল চেয়ারম্যান অরুণ ধুমাল বুঝতে পারেন যে এই ম্যাচ আর চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এর কারণ হল কাছাকাছি দুটি শহরে এয়ার রেইড সাইরেন বেজে উঠেছিল, যার একটি ধর্মশালার থেকে মাত্র ১০০ কিমি দূরে ছিল। অথচ স্টেডিয়ামে উপস্থিত ২৫,০০০ দর্শক তখনও এই নিরাপত্তা উদ্বেগ সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ ছিলেন।
তবে এই সময়ে একজন ক্রিকেট প্রশাসক হিসেবে অরুণ ধুমাল চেয়েছিলেন ২৫,০০০ দর্শকের শান্তিপূর্ণ সরানো। এছাড়াও খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজটি পরিচালনা করতে চেয়েছিলেন অরুণ ধুমাল। স্টেডিয়ামের ফ্লাডলাইটগুলো প্রথমে ম্লান করা হয় এবং পরে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর ব্ল্যাকআউট প্রোটোকল কার্যকর করা হয়, কারণ পাকিস্তান থেকে পাঠানো ড্রোন হামলার শিকার হয় পাঠানকোট (ধর্মশালা থেকে ৮৫ কিমি) ও জম্মু (১৯৭ কিমির একটু বেশি দূরে)।
ফ্লাডলাইট বন্ধ করা হয়-
ফ্লাডলাইট বন্ধ হওয়ার বিষয়ে স্টেডিয়ামে যথাযথভাবে ঘোষণা করা হয়। শুরুতে এই ঘটনাকে একটি ‘টেকনিক্যাল সমস্যার’ কারণ বলে জানানো হয়, যাতে উপস্থিত দর্শকদের মধ্যে আতঙ্ক না ছড়ায়। অরুণ ধুমাল সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘…যখন ঘোষণা করা হয় যে ফ্লাডলাইট বন্ধ হয়ে যাবে, তখনও মানুষ মাঠ ছাড়তে চায়নি।’
কী কারণে ‘টেকনিক্যাল সমস্যা’ বলা হয়েছিল?
এরপরে অরুণ ধুমাল বলেন, ‘আমাদের নিশ্চিত করতে হয়েছে যে দর্শকদের সরিয়ে নেওয়া হবে আতঙ্ক সৃষ্টি না করেই। কারণ আমরা কোনওভাবেই হুড়োহুড়ি বা পদদলনের পরিস্থিতি তৈরি হতে দিতে পারতাম না।’ সব প্রমাণ বলছে, ধুমল, হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা এবং স্থানীয় পুলিশ মিলেই অসাধারণ দক্ষতার সঙ্গে এই কাজটি সম্পন্ন করেছেন। আধ ঘণ্টার মধ্যেই দর্শকরা শান্তিপূর্ণভাবে স্টেডিয়াম ত্যাগ করেন।
ধুমাল নিজেও হিমাচল প্রদেশের বাসিন্দা, তিনি বলেন, ‘আপনাকে বুঝতে হবে যে ম্যাচটা খুবই উত্তেজনাপূর্ণ ছিল, বিশেষ করে পঞ্জাবের ব্যাটিং দেখার পরে সেটা মনে হয়েছিল। এই পুরো অপারেশনটি সম্ভব হয়েছে স্থানীয় পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের এক সঙ্গে কাজ করার ফলে। তারা দুর্দান্ত কাজ করেছে।’
তাঁকে স্টেডিয়ামের এক গ্যালারিতে পঞ্জাব কিংস-এর সহ-মালিক প্রীতি জিন্টার পাশে দাঁড়িয়ে দর্শকদের অনুরোধ করতে দেখা গেছে যেন সকলেই মাঠ ছেড়ে চলে যান। ধর্মশালা হল পঞ্জাব ফ্র্যাঞ্চাইজির দ্বিতীয় হোম গ্রাউন্ড।
আরও পড়ুন … ম্যাচ প্রতি প্রায় ১২৫ কোটি টাকার লোকসান! ভারত বনাম পাক যুদ্ধের ফলে IPL-এ ক্ষতির পরিমাণ কত?
নিজের সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জের কথা বলেন অরুণ ধুমাল
২২ এপ্রিল পহেলগাঁও সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত-পাকিস্তান বিরোধ চরমে ওঠার জেরে শুক্রবার আইপিএল এক সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হয়। এই রাতটি কি তাঁর আইপিএল চেয়ারম্যান হিসেবে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং সময় ছিল? ধুমাল বলেন, ঠিক তা নয়। তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯-এর সময় আমাদের আরও বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে, যখন টুর্নামেন্ট মাঝপথে থেমে গিয়েছিল। তবে গতকালের পরিস্থিতি আলাদা ছিল, কারণ আমাদের একটি লাইভ ম্যাচ মাঝপথে বন্ধ করতে হয়েছিল নিরাপত্তা প্রোটোকলের কারণে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সব কিছু যত দ্রুত সম্ভব ও যতটা মসৃণভাবে করা যায়, সেটাই করা হয়েছিল, এটাই ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে আমরা যে দর্শকদের পেয়েছিলাম, তারা খুবই সহযোগিতাপূর্ণ ছিল এবং আমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছিল।’
আরও পড়ুন … তাঁর নিজের সিদ্ধান্ত, না কি BCCI-এর চাপ? রোহিতের টেস্ট অবসর নিয়ে নতুন বিতর্ক! নেপথ্যে ক্লার্কের সাক্ষাৎকার
কীভাবে ১০ মিনিটে মাঠ খালি করা হয়?
এরপর তিনি জানান, কীভাবে মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে আইপিএল অপারেশন টিম ও স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয়ে ম্যাচ স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অরুণ ধমাল বলেন, ‘প্রথম স্ট্র্যাটেজিক টাইমআউটের সময় আমাকে ব্ল্যাকআউট প্রোটোকলের বিষয়ে অবহিত করা হয়। তখন সময় খুব কম ছিল, তাই আমি দ্রুত দিল্লি ও পঞ্জাব ফ্র্যাঞ্চাইজির শীর্ষ কর্মকর্তাদের জানাই যে কিছুক্ষণের মধ্যে আলো নিভে যাবে এবং আমরা কীভাবে পরিস্থিতি সামলাতে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘আমি তাদের বলি যেন নিশ্চিত করে যে খেলোয়াড়রা যেন আতঙ্কিত বা ঘাবড়ে না যায়। আমার দায়িত্ব ছিল মাঠে থাকা স্টাফ এবং অন্যান্য কর্মরত ব্যক্তিদের নিরাপদে বের করে আনা। স্টেডিয়ামের বাইরে থেকে ব্যারিকেড সরিয়ে ফেলা হয় যাতে মানুষ দ্রুত বেরিয়ে যেতে পারে – স্থানীয় পুলিশের এই ব্যবস্থায় আতঙ্ক ছড়ায়নি।’
আরও পড়ুন … ভিডিয়ো: সাকারিয়ার সঙ্গে হাত মেলাতেই ভুলে গিয়েছিলেন ধোনি! কী করলেন তারপর?
কীভাবে ক্রিকেটাররা ধর্মশালা ছেড়ে দিল্লি পৌঁছালেন?
অরুণ ধুমাল জানান, পঞ্জাব ও দিল্লির দুই দলই এখন নিরাপদে দিল্লি পৌঁছে গেছে, যদিও সেই যাত্রা অনেক সময়সাপেক্ষ ছিল, যেখানে হোশিয়ারপুর ও জলন্ধর হয়ে যেতে হয়েছে। ধর্মশালা থেকে হোশিয়ারপুর পর্যন্ত হিমাচল প্রদেশ পুলিশের প্রহরায় দলগুলো পৌঁছায়, এরপর পঞ্জাব পুলিশ তাঁদের জলন্ধর রেলস্টেশন পর্যন্ত পৌঁছে দেয়, যেখান থেকে তাঁরা ট্রেনে দিল্লি রওনা দেন। তিনি বলেন, ‘"হ্যাঁ, এখানে অনেক লজিস্টিকাল সমস্যা ছিল। শুধু খেলোয়াড় নয়, একটি ম্যাচ নির্বিঘ্নে পরিচালনার সঙ্গে অনেক মানুষের জড়িত থাকা থাকে। তাই আমাদের যাত্রার ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয়েছে, যাতে ধর্মশালা থেকে দিল্লি পর্যন্ত সবকিছু সুরক্ষিতভাবে হয়।’
IPL 2025-এর ভবিষ্যত কোন পথে?
আইপিএলের বাকি ১৬টি ম্যাচ সেপ্টেম্বর মাসে এশিয়া কাপ বাতিল করে আয়োজিত হতে পারে কিনা – এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ধুমাল বলেন, এখনই এ ধরনের বিকল্প ভাবার সময় নয়। তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে, দেশের অন্যান্য নাগরিকদের মতো আমরাও আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর পাশে আছি। টুর্নামেন্টের ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত সঠিক সময়ে নেওয়া হবে।’