মেলবোর্নে হারের পরে নয়, অস্ট্রেলিয়া সফরের শুরু থেকেই ভারতীয় ড্রেসিংরুমে ‘চিড়’ ধরা পড়েছিল। এমনকী পার্থে যে ঐতিহাসিক জয় ছিনিয়ে এনেছিলেন জসপ্রীত বুমরাহরা, দল হিসেবে একত্রিতভাবে সেটাও উদযাপন করেননি টিম ইন্ডিয়ার খেলোয়াড়রা। একসঙ্গে খেতে চাননি। একসঙ্গে ঘুরতে বের হননি। পরিস্থিতি এমন হয়েছিল যে একজন সাপোর্ট স্টাফ নিজের গ্যাঁটের কড়ি খরচ করে পানীয় কিনে দিতে চাইলেও আগ্রহ দেখাননি খেলোয়াড়রা। বরং ছোট-ছোট দলে বিভক্ত হয়ে ঘুরতে থাকেন তাঁরা। আর ঘরে নিজেকে বন্দী রাখেন ভারতীয় দলের হেড কোচ গৌতম গম্ভীর। সূত্র উদ্ধৃত করে এমনই বিস্ফোরক দাবি করা হল অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম ‘দ্য অস্ট্রেলিয়ান’-র প্রতিবেদনে। বিষয়টি নিয়ে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট বা ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) তরফে অবশ্য আপাতত সরকারিভাবে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।
তবে তাতে বিতর্ক থামছে না। সিডনি টেস্টের প্রথম দিনে ভারতের ব্যাটিং বিপর্যয়কে ছাপিয়ে সেই বিতর্ক নিয়ে বেশি হইচই চলছে। সূত্র উদ্ধৃত করে ওই রিপোর্টে জানানো হয়েছে, পার্থে অস্ট্রেলিয়ার দর্পচূর্ণ করে জয়ের পরেও টিম ইন্ডিয়ার খেলোয়াড়রা একটা দল হিসেবে উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেননি। ওই জয়টা যে দল হিসেবে টিম ইন্ডিয়াকে আরও চাঙ্গা করে দেওয়ার কথা ছিল, সেটা হয়নি বলে ওই রিপোর্টে জানানো হয়েছে।
ছোট-ছোট দলে ভাগ হয়ে গিয়েছিল ভারতীয় দল- রিপোর্ট
সূত্র উদ্ধৃত করে ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ‘একটা ড্রিঙ্কসের জন্য ওরা (ভারতীয় ক্রিকেটাররা) ড্রেসিংরুমে একসঙ্গে সময় কাটায়নি বা একসঙ্গে খাবার খেতে বাইরেও বের হয়নি। বরং ওরা ছোট-ছোট দলে বিভক্ত হয়ে গিয়ে নিজেদের আলাদা-আলাদা দিকে চলে গিয়েছিল। ওরা সবথেকে কাছে এসেছিল, যখন নৈশভোজের জন্য জাপানি রেস্তোরাঁ নোবুতে গিয়েছিল কয়েকজন সহকারী কোচ-সহ সাত থেকে আটজন।’
গম্ভীর পরিবারের সঙ্গে ছিলেন, দাবি রিপোর্টে
আর খেলোয়াড়রা যখন ছোট-ছোট দলে বিভক্ত হয়েছিলেন, তখন হেড কোচ গম্ভীর নিজের ঘরেই ছিলেন বলে সূত্র উদ্ধৃত করে ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘নিজের পরিবারের সঙ্গে চুপচাপ ভারতীয় খাবার খেয়েছিলেন হেড কোচ গৌতম গম্ভীর। রাতের দিকে কয়েকজন তরুণকে হে স্ট্রিটে (পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার পার্থের জায়গা) ঘুরে বেড়াতে দেখা গিয়েছিল।’
সাপোর্ট স্টাফ নিজেই টাকা খরচ করতে চেয়েছিলেন, দাবি রিপোর্টে
ওই রিপোর্টে আরও দাবি করা হয়েছে যে এরকম ঐতিহাসিক জয়ের পরে খেলোয়াড়দের ওরকম মেজাজ দেখে ভারতীয় দলের সাপোর্ট স্টাফদের মধ্যে একজন সিনিয়র সদস্য নিজের ক্রেডিট কার্ডের টাকায় সকলকে পানীয় কিনে দিতে চেয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন যে খেলোয়াড়রা যেন একটা দল হিসেবে ঐতিহাসিক জয়টা উপভোগ করেন। তবে তাতে তিনি সফল হননি। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘উনি (ভারতীয় দলের সিনিয়র সাপোর্ট স্টাফ) পরে আমায় বলেছিলেন যে কোনও খেলোয়াড়ই সেরকম আগ্রহ দেখায়নি। তাদের প্রত্যেকেরই নিজস্ব প্ল্যান ছিল।’
আর সেই যে ‘চিড়’ ধরেছিল, সেটা মেলবোর্ন টেস্টে হারের পরে দুনিয়ার সামনে চলে এসেছে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের তরফে দাবি করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম সেভেন ক্রিকেটে সাংবাদিক ভরত সুন্দরেশন জানিয়েছেন যে ভারতীয় ড্রেসিংরুমে ‘ফাটল’ ধরেছে, সেটা ঠিক বলা যাবে না। তবে 'খণ্ডিত' হয়ে গিয়েছে ভারতীয় ড্রেসিংরুম। যে বিষয়টা মেলবোর্নে হারের পরে সামনে চলে এসেছে বলে দাবি করেছেন তিনি।