আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে পাকিস্তানের কাজটা ক্রমশ কঠিন হচ্ছে। নিরাপত্তার কারণে ভারত যে পাকিস্তানে যাবে না, তা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর পাকিস্তানে নিরাপত্তা নিয়ে কী ঝুঁকি আছে, তা সম্ভবত বিশ্বের প্রত্যেকেই জানেন। সেই পরিস্থিতিতে নিজেদের মুখ বাঁচাতে পাকিস্তানের প্রাক্তন ক্রিকেটার বসিত আলি এমন কথা বললেন যে ভারতীয় নেটিজেনরা চটে গিয়েছেন। একেবারে প্রমাণ-সহ হাতেনাতে বসিতের মিথ্যাচার ধরে ফেলেছেন তাঁরা। বসিত দাবি করেন, ২০১৬ সালের মহিলা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময় পাকিস্তান দল যখন ভারতে এসেছিল, তখন নাকি ভয়াবহ পরিস্থিতি ছিল। তাঁরা যেখানে থাকতেন, সেখানে রাতভর গুলি চলত। এতটাই বিরূপ পরিস্থিতি ছিল যে তাঁরা যেখানে থাকতেন, সেখান থেকে বাইরে বেরোতে পারতেন না। ঘরে বসেই লুডো এবং ক্যারম খেলতে হত। আর সেই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে পাকিস্তান মহিলা দলের দিল্লি ভ্রমণের ছবি পোস্ট করে বসিতের মিথ্যাচার ফাঁস করে দেন নেটিজেনরা। যে ছবির কোনওটায় দেখা গিয়েছে যে পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা ফুচকা খাচ্ছেন। কোনও ছবিতে আবার দেখা গিয়েছে যে দিল্লির কোনও ঐতিহাসিক স্থানের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন। আর সেইসঙ্গে তাঁরা প্রশ্ন করেছেন, এভাবেই লুডো খেলত পাকিস্তান দল?
আরও পড়ুন: ICC চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে পাকিস্তান যাবে না ভারত! PCBর পাল্টা চালে চাপে BCCI-ও?
সেইসবের উত্তর অবশ্য বসিত দেননি। যিনি আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম সামা টিভিতে আলোচনার মধ্যেই বলেন, '(ভারতে) মহিলাদের বিশ্বকাপ হয়েছিল। আর আমি গিয়েছিলাম। ও আমি মহিলা দলের সঙ্গে ভারতে গিয়েছিলাম। ওখানে আমাদের সঙ্গে যা হয়েছিল, সেটার বিষয়ে আমি আজ বলেই দিই। আমরা বাসে লুকিয়ে-লুকিয়ে গিয়েছিলাম। দিল্লি বিমানবন্দরে আমাদের ছ'ঘণ্টা আটকে রাখা হয়েছিল। সেখান থেকে রাতে আমাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তিনটি বাস ছিল। কোন বাসে আমাদের মেয়েরা বসে আছে, সেটা কেউ জানতেন না।'
আরও পড়ুন: Zim vs Pak- শেষ T20তে চমক! পাকিস্তানকে ২ উইকেটে হারিয়ে দিল জিম্বাবোয়ে! সিরিজ ২-১ জয় পাকিস্তানের…
তিনি বলেন, ‘আমরা কোনও হোটেলে ছিলাম না। স্টেডিয়ামের বাইরে যেমন অ্যাকাডেমি হয়, সেরকম ছিল। সেখানে রুম এমন ছিল যে আমরা পৌঁছানোর পরে আলমারি লাগানো হচ্ছিল। আলমারিও ছিল না। সকালের যখন খাবার খাচ্ছিলাম, তখন আমাদের বলা হয়েছিল যে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের তরফে যেন কোনও নালিশ না করা হয়। আমরা যে কীভাবে ছিলাম, সেটা আমরাই জানি।’
'খাবার দেখে পালিয়ে গিয়েছিল ICC-র CEO'
সেখানেই থামেননি বসিত। ওই সংবাদমাধ্যমে তিনি দাবি করেন, 'একদিন ডেভ রিচার্ডসন (তৎকালীন বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থা আইসিসির সিইও) চলে এসেছিল। ও আমাদের সঙ্গে ছিল। সন্ধ্যায় আমাদের সঙ্গে দৌড়েছিল। কারণ আমার সঙ্গে খেলেছিল। যখন সকালে ও খাবার দেখে, তখন উঠে পালিয়ে গিয়েছিল। ও বলছিল যে আপনারা এখানে কীভাবে থাকছেন? আমি বলেছিলাম যে বিসিসিআইকে (ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড) বলুন, যারা আমাদের এখানে রেখেছে।
রাতে গুলির শব্দ শোনা যেত, দাবি বসিতের
তিনি আরও বলেন, ‘রাতে গুলি চলার আওয়াজ আসত। এত নিরাপত্তা ছিল অ্যাকাডেমিতে, তারপরও রাতে গুলি চালানোর আওয়াজ আসত। আর সকালে আমাদের মেয়েরা ভয় পেত। (বলত যে) স্যার, রাতভর গুলির আওয়াজ শুনেছেন? (তো আমি বলতাম যে) আমি তো রাতভর জেগে ছিলাম।’ তিনি দাবি করেন, পাকিস্তান টিমকে লুডো আর ক্যারম খেলতে হত। কারণ নিরাপত্তার কারণে বাইরে বেরোতে পারতেন না তাঁরা।
আরও পড়ুন: উত্তরপ্রদেশ থেকে এসেছি, পরিবারের অধিকাংশ এখনও ওখানেই-হঠাৎ ইন্ডিয়া কানেকশন নিয়ে মুখর পাক প্রাক্তনী
এতদিন অভিযোগ করেননি কেন? সদুত্তর নেই বসিতের কাছে
কিন্তু সেইসব বিষয়ে এতদিন অভিযোগ করেননি কেন? সেটার কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি বসিত। ওই সংবাদমাধ্যমের সঞ্চালকই তাঁকে সেই প্রশ্নটা করেন। গোল-গোল করে ঘুরিয়ে উত্তর দেন। আর সেই উত্তর শুনে নেটিজেনরা বলতে শুরু করেন, কয়েক বছর পরে নিশ্চয়ই ২০২৩ সালের পুরুষ বিশ্বকাপের সফর নিয়ে এরকম কিছু বানিয়ে-বানিয়ে বলবেন। অথচ হায়দরাবাদ হোক বা কলকাতা- পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা দারুণ অভ্যর্থনা পেয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন নেটিজেনরা।
ওটা বিয়েবাড়ির বাজি শব্দ হবে, হাসল নেটপাড়া
সেইসঙ্গে গুলি চলার যে অভিযোগ তোলেন বসিত, সেটাকে অবাস্তব বলে উড়িয়ে দিয়েছে নেটপাড়া। এক নেটিজেন বলেন, ‘হেরো লোকটা মিথ্যে কথা বলছেন। ভারতে কোথায় গুলির আওয়াজ শুনতে পারেন? সম্ভবত আতসবাজির শব্দ ছিল। পাকিস্তানের মতো তো ভারতে সহজে বন্দুক রাখা যায় না।’ অপর এক নেটিজেন বলেন, ‘২০১৬ সালের মহিলা বিশ্বকাপ হয়েছিল মার্চ নাগাদ। যা ভারতে বিয়ের মরশুম। ফলে ওটা গুলির আওয়াজ নয়। ওটা বাজির শব্দ হবে। এই লোকটাকে কেউ বোঝান।’