আসি যাই, মাইনে পাই।
সরকারি চাকরির বিষয়ে আপনারও কি ধারণা এমন? তাহলে সেই ভুল ধারণাকে বিদায় জানান। সরকারি কর্মীদেরও কাজের দায়িত্ব রয়েছে। আর সেই কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হলে তাঁদেরও চাকরি যায়। অসাধু সরকারি কর্মীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য এই নীতি। হজম হচ্ছে না?
ভারতীয় রেলের একটি সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান দেখলেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে। গত ১৬ মাসে মোট ১৩৯ জন আধিকারিককে অবসর নিতে বাধ্য করেছে রেল। ৩৮ জনকে চাকরি থেকেই বরখাস্ত করা হয়েছে। অর্থাত্, প্রতি ৩ দিনে একজন করে রেলকর্মী চাকরি হারিয়েছেন বা অবসর নিতে বাধ্য হয়েছেন। আরও পড়ুন: WB Govt Jobs: পশ্চিমবঙ্গ সরকারের গ্রুপ 'ডি' পদে নিয়োগ, মাসিক ২৪,০০০ টাকা বেতন
এই বিষয়ে এক রেল আধিকারিক জানান, রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব এই বিষয়ে খুব কড়া। 'ভাল কাজ কর, নয় তো বিদায় নাও,' নীতিতে চলেন তিনি। গত ২০২১ সালের জুলাই থেকে এইভাবেই অযোগ্য, দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মীদের বাদ দিয়েছে রেল।
বেশিদিন পিছিয়ে যাওয়ার দরকার নেই। চলতি সপ্তাহেই, বুধবার ২ জন উচ্চপদস্থ রেল আধিকারিকের চাকরি গিয়েছে। তাঁদের মধ্যে একজন হায়দরাবাদে। ৫ লক্ষ টাকার ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে। হাতেনাতে পাকড়াও করে CBI। অন্যদিকে অপরজন রাঁচির। তাঁর বিরুদ্ধেও ৩ লক্ষ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ।
তবে শুধু অসাধু কর্মীরাই নন, কম পারফর্ম করা কাউকেও রাখা হচ্ছে না। প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে অনেক পুরনো রেলকর্মীই খাপ খাইয়ে উঠতে পারেননি। তাছাড়া অনেকেই সিগন্যালিং, ইলেকট্রিকাল, মেকানিকাল, ট্রাফিক ইত্যাদি ক্ষেত্রে দক্ষতা যাচাইয়ে পাশ করতে পারেননি। তাঁদের পত্রপাঠ চিঠি ধরানো হয়েছে।
একইভাবে মেডিকেল এবং সিভিল সার্ভিসের সঙ্গে যুক্ত আধিকারিক-কর্মীদেরও লাল সিগনাল দেখিয়েছে রেল।
VRS হলে কর্মীরা যত বছর চাকরি বাকি ছিল, তত বছরের প্রতি ২ মাসের বেতন পাবেন। মানে, কোনও ব্যক্তির চাকরির ১০ বছর বাকি থাকলে, তিনি মোট ২০ মাসের বেতন হাতে পাবেন। কিন্তু কাউকে বাধ্যতামূলক অকাল অবসরে পাঠানো হলে, সেই সুবিধা দেওয়া হয় না। ফলে দু'টি বিষয় এক নয়।
সিসিএস(পেনশন) বিধি, ১৯৭২ অনুযায়ী একজন সরকারি কর্মীকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়ার ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হাতে রয়েছে। বিশেষ ক্ষেত্রে আবশ্যিক মনে হলে এটি করা যেতে পারে।
রেল চাকরির বিধির ৫৬(জে) প্রয়োগ করার মাধ্যমে ন্যূনতম ৩ মাসের নোটিশ দিয়ে বা ৩ মাসের বেতন দিয়ে কর্মীকে অকাল অবসর দেওয়া বা বরখাস্ত করা যায়।
শুধু রেলই নয়। কেন্দ্রীয় সরকারি বিভিন্ন দফতরেই কর্মীদের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি ও দুর্নীতিমুক্ত করার বিষয়ে জোর দিচ্ছে। তাই এখন 'আসি যাই, মাইনে পাই' নীতিতে চললে চাকরি খোয়াতে হতে পারে সরকারি কর্মীদেরও। ২০২১ সালে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই আধিকারিকদের বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন। তাঁর সাফ কথা, 'কাজ না করতে হলে ভিআরএস নিয়ে বাড়িতে বসে থাকুন।'
আরও পড়ুন: কত টাকা বেতন পেলে নিউ ইয়র্কে গিয়ে পোষাবে? হিসাব দেখলে অবাক হবেন!