আজ, সোমবার চিকিৎসকদের সম্মেলনে এসে কল্পতরু হয়ে উঠলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একদিকে যেমন সর্বস্তরের চিকিৎসকদের বেতন অনেকটা বাড়িয়ে দিলেন তেমনই নিজের মনে যে রাগ পুষে রাখেননি সেটাও জানিয়ে দিয়ে গেলেন। আর তার জেরেই করতালিতে ফেটে পড়ল গোটা ধনধান্য স্টেডিয়াম ফেটে পড়ল। চিকিৎসকদের মধ্যেও যেটুকু উষ্মা ছিল সেটাও কেটে গেল। সুতরাং দিনের শেষে বলাই যায়, তিনি এলেন, দেখলেন এবং জয় করলেন। এখানেই থেমে থাকেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চিকিৎসকদের খেলাধূলা থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমকেও কাজ করার প্রক্রিয়া বাতলে দিলেন। এখানেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করিয়ে দিলেন, চিকিৎসার আর এক অর্থ সেবা।
সম্প্রতি মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্যালাইন কাণ্ড ঘটেছিল। যার জেরে একজন বধূ মারা যান। বাকিদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ায় গ্রিন করিডর করে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে আসা হযেছিল। আর এই ঘটনার জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছিল কয়েকজন চিকিৎসককে। আজ সেই সাসপেনশন তুলে নেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। আজ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘চিকিৎসা ব্যবস্থায় যা কিছু সমস্যা যা কিছু অপপ্রচার, তা রুখতে ডাক্তারদেরই এক হতে হবে। রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠতে হবে। আর আপনাদের রং একটাই, মানবতার এবং সেবার। রাজনীতির কোনও রং দেখার দরকার নেই আপনাদের।
বামফ্রন্ট সরকারের জমানার স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নিয়ে সমালোচনা শোনা যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠে। তাঁর বক্তব্য, ‘একটাই কারণে নিজের কাছে স্বাস্থ্য বিভাগ রাখি। কারণ এক্ষেত্রে উন্নয়ন রাজ্যের একজন মন্ত্রীর পক্ষে সম্ভব নয়। এটা বিস্তীর্ণ এলাকা। বামফ্রন্ট চিকিৎসা ব্যবস্থাকে অবহেলা করত। তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর সরকারি হাসপাতালের বিল্ডিং তৈরি, নিয়মিত তাতে রং করা, বিনামূল্যে জটিল রোগের চিকিৎসা–সহ একাধিক সুবিধা সরকারি হাসপাতালে পান সাধারণ মানুষ। আপনারা ছিলেন বলেই আজ এত ভাল সব কিছু হয়েছে। আমি আগে যেতাম পিজি, শম্ভুনাথ, মেডিক্যাল কলেজ সরকারি হাসপাতালে। সব জায়গায় ছোট ছোট গেট ছিল। কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে বেরোনোর উপায় নেই। আমরা গেটগুলি আগে বড় করি, হাসপাতাল রং করি, নাইট শেল্টারের ব্যবস্থা করি। আগে দেখতে ভাল হওয়া দরকার, তার পরে গুণ বিচার করা হবে।’
আরও পড়ুন: ‘জুনিয়র চিকিৎসকদের সাসপেনশন প্রত্যাহার করলাম’, সম্মেলনে দরাজ মেজাজ মমতার
আজ সোশ্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করিয়ে দেন, ‘বামফ্রন্ট আমলে চিকিৎসার অবহেলা হতো। একজন রাজ্যমন্ত্রীকে দিয়ে চালানো হতো স্বাস্থ্য দফতর। তাই টিমটিম করে চলত সব কিছু। আমি এই কারণে নিজের কাছে রেখেছিলাম স্বাস্থ্য দফতর। কারণ আমার মনে হয়েছিল, এই দফতরের কাজ একজন রাজ্যমন্ত্রীর পক্ষে করা সম্ভব নয়। কারণ এই বিষয়টা সামগ্রিকভাবে দেখতে হয়। হাজারটা ভাল কাজ করুন সেটা সোশ্যাল মিডিয়ায় আসবে না। কিন্তু কিছু ঘটনা নিয়ে এমন প্রচার করা হয় যেন, স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কেউ কাজ করছে না। এটা ঠিক নয়।’
চিকিৎসা পরিষেবার উন্নতির ক্ষেত্রে ডাক্তারদের এগিয়ে আসার বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘চিকিৎসকদের কোনও রাজনৈতিক রং নেই। তাঁদের একটাই রং, মানবতা। আপনারা ছিলেন বলে বিনামূল্যে রোগ নির্ণয় করা থেকে শুরু করে জনকল্যাণমুখী একাধিক পদক্ষেপ করতে পেরেছে সরকার। আজকাল ফেক ওষুধও বেরিয়ে গিয়েছে। মানুষের লোভ এত বেড়ে গিয়েছে। একটা ভাল কাজকে খারাপ করে দিতে এক সেকেন্ড লাগে। সেদিকে খেয়াল রাখবেন।’