সৃজনী। নামটাই যথেষ্ট। কলকাতার কৃতী সন্তান। আইএসসিতে একেবারে নজরকাড়া রেজাল্ট করেছেন তিনি। ১৭ বছর বয়স।ফিউচার ফাউন্ডেশন স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। তবে কেবলমাত্র পড়াশোনায় এগিয়ে থেকেই নয়, মনের উদারতাতেও এগিয়ে গেলেন তিনি। সকলকে ছাপিয়ে। নতুন আলোর সন্ধান দিলেন তিনি।
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুসারে জানা গিয়েছে, দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার আগে তিনি একটা আবেদন করেছিলেন যে যাতে বোর্ড পরীক্ষায় তিনি কেবলমাত্র তাঁর নামটাই ব্যবহার করতে পারেন। তাঁকে যেন পদবি ব্যবহার করতে না হয়। এনিয়ে বিশেষ অনুমতি চেয়েছিলেন তিনি। এদিকে স্কুলের প্রিন্সিপাল জানিয়ে দিয়েছিলেন, যদি আইন অনুমতি দেয় আমাদের কোনও আপত্তি নেই। এটা বাধ্য়তামূলকও নয়। আমি বিশ্বাস করি সকলেই যেন সকলেই যেন আত্মমর্যাদার সঙ্গে তাদের জীবন যাপন করতে পারেন। যদি পরিবারের ইচ্ছে থাকে তবে আমাদের কোনও আপত্তি নেই।
সৃজনী টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে জানিয়েছেন, আমি যে কোনও ধরনের অসাম্যের বিরোধী। সেটা সামাজিক, অর্থনৈতিক বা ধর্মীয় যা খুশি হতে পারে।
আমি এমন একটা সমাজের স্বপ্ন দেখি যেখানে অভয়ার মতো ঘটনা হবে না।কোনও ধর্মযুদ্ধ হবে না…
এদিকে গত ১৪ অগস্ট ২০২৪ সালে রাত দখলের অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন সৃজনী ও তার পরিবার।
আসলে মায়ের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পান সৃজনী। গোপা মুখোপাধ্য়ায়, তিনি গুরুদাস কলেজের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর। তার বাবা দেবাশিস গোস্বামী আইএসআইয়ের অঙ্কবিদ। তিনি ২০১২ সালে শান্তি স্বরূপ ভাটনগর পুরস্কার পেয়েছিলেন। গোপা বলেন, আমি বিয়ের পরে পদবি বদল করিনি। সন্তানদের ক্ষেত্রে আমাদের দুজনের সারনেম ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। আমার স্বামী ও আমি পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে। জাতিগত আধিপত্যেরও বিরুদ্ধে, অসাম্যের বিরুদ্ধে। আমি চাই আমাদের সন্তানরা এই জাতপাত, ধর্মের উপরে উঠে মুক্তমনে থাকুক।
মা জানিয়েছেন, আগে তো তারা মানুষ। আমি খুব খুশি যে তারা আমাদের সিদ্ধান্তকে মান্যতা দিয়েছে। তিনি জানিয়েছেন যখন আমরা বার্থ সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করেছিলাম তখন আমরা কোনও পদবি ব্যবহার করিনি। তবে এনিয়ে কোনও বড় প্রশ্নের মুখোমুখি কোনওদিন হইনি। তাছাড়া সারনেমটাতো বাধ্যতামূলক নয়। এমনকী পাসপোর্টেও নয়। কিন্তু আসলে এটা একটা মানসিকতা। আমরা পদবি ব্যবহার করি। কিন্তু ধর্ম হিসাবে আমরা মানবিকতা উল্লেখ করি।
বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস তাঁদের বাড়িতে গিয়েছিলেন। সৃজনীর এই মনোভাবে অত্যন্ত খুশি তিনি।