১৯৭৩ সালে সরকার ওই বৃদ্ধের জমি দখল করে। বেআইনিভাবে জমি দখলের অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি। এরপর সরকারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে তিনি রায়গঞ্জের স্থানীয় দেওয়ানী আদালতে মামলা করেন। সেই মামলায় তিনি জিতে যান।
কলকাতা হাইকোর্ট। ফাইল ছবি
বৃদ্ধের সম্পত্তি হাতিয়ে পার্টি অফিস করতে চাইছেন উপপ্রধান। এমনই অভিযোগ তুলেছিলেন উত্তর দিনাজপুরের ভাতুন গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা মইনল হক চৌধুরী (৭৫)। সেই সংক্রান্ত মামলায় পুলিশকে কড়া নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। কোনওভাবেই যাতে উপপ্রধান বা স্থানীয় পঞ্চায়েত ওই জমি দখল করতে না পারে সে বিষয়ে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন হাইকোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত। এছাড়া, সম্পত্তির উপরেও নজরদারি রাখার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার বয়ান অনুযায়ী, ১৯৭৩ সালে সরকার ওই বৃদ্ধের জমি দখল করে। বেআইনিভাবে জমি দখলের অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি। এরপর সরকারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে তিনি রায়গঞ্জের স্থানীয় দেওয়ানি আদালতে মামলা করেন। মামলাকারীর আইনজীবী ইন্দ্রজিৎ রায় চৌধুরী জানান, সেই মামলায় তিনি জিতে যান। এরপর তিনি মামলার রায়ের প্রতিলিপি নিয়ে বিএলআরও অফিসে যোগাযোগ করেন। সেখানে তিনি রেকর্ড সংশোধনের জন্য আবেদন জানান। কিন্তু, বিএলআরও সেই রায়কে কোনও গুরুত্ব দেননি বলে অভিযোগ। এরপর তিনি বিএলআরও–র সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে ওয়েস্ট বেঙ্গল ল্যান্ড রিফর্মস ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। সেখানেও জিতে যান ওই বৃদ্ধ। পরে সরকার পক্ষ ট্রাইব্যুনালের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। কিন্তু, এ ক্ষেত্রেও সরকার পক্ষ হেরে যায়।
এরপর মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে। রাজ্য সরকার হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিমকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল। সেই সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্ট ওই জায়গার উপর স্থিতাবস্থা জারি করেছিল। কিন্তু, অভিযোগ সেখানে স্থিতাবস্থা থাকা সত্ত্বেও স্থানীয় উপপ্রধান জোর করে জায়গা দখল করে সেখানে পার্টি অফিস স্থাপন করেন। এরপর বৃদ্ধ বারংবার প্রশাসনের দ্বারস্থ হন। কিন্তু কোনও সমাধান না পেয়ে আবার তিনি কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। আইনজীবী ইন্দ্রজিৎ রায় চৌধুরী আদালতকে যুক্তিতে বলেন, তাঁর মক্কেল প্রত্যেকটি কোর্টেই জিতেছেন। তাঁর ছেলে একজন বিএসএফ। তিনি দেশসেবার কাজে নিযুক্ত। তাছাড়া, ওই বৃদ্ধের বয়স এখন ৭৫ বছর। তিনি আর কদিনই বা বাঁচবেন! সেই মানবিকতার দিক আদালতকে বিবেচনা করার অনুরোধ জানান। সমস্ত কিছু খতিয়ে দেখে আদালত পুলিশকে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয়। তাছাড়া বৃদ্ধ ওই সম্পত্তি নিয়ে কোনও অভিযোগ জানলে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নিতে হবে বলেও পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি।