২০২১ সালের একটি ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হলেন এক শিক্ষক দম্পতি। প্রাক্তন সাংসদ অপরূপা পোদ্দার শ্রীরামপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ওই শিক্ষক দম্পতি নাসিম আখতার ও তাঁর স্ত্রী আনাসরি খাতুনের বিরুদ্ধে। তাঁদের বিরুদ্ধে, জাতপাত তুলে গালিগালাজের অভিযোগ দায়ের করেছিলেন তফশিলি জাতিভুক্ত প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ। সেই মামলাতেই আদালত দোষীসাব্যস্ত করেছে শিক্ষক দম্পতিকে।
আরও পড়ুন: এবার দিলীপ ঘোষকেই ‘ঘরে ঢুকে মুখ ফাটিয়ে’ দেওয়ার হুমকি অপরূপার!
দীর্ঘদিন মামলা চলার পর চুঁচুড়ার বিশেষ আদালত সেই ঘটনায় রায় দেয়। ঘটনাটি ২০২১ সালের ৬ সেপ্টেম্বরের। সেদিন তৎকালীন সাংসদ অপরূপা পোদ্দার শ্রীরামপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। তিনি জানান, তাঁর কাছে খবর ছিল নাসিম আখতার ও আনসারি খাতুনের বাড়িতে অনৈতিক কাজকর্ম অর্থাৎ সেক্স র্যাকেট চলছিল। সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তিনি তাঁর স্বামী সাকির আলিকে সঙ্গে নিয়ে অভিযুক্তদের বাড়িতে যান।
অভিযোগ, সেখানে পৌঁছানোর পর তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন শিক্ষক দম্পতি। প্রাক্তন সাংসদ জানান, তাঁর জাত নিয়ে কুরুচিকর ভাষায় গালিগালাজ করা হয়েছিল। এমনকি, তাঁর শ্লীলতাহানির চেষ্টাও করা হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। এরপরই তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
এই মামলার শুনানি চলে চুঁচুড়া আদালতের জেলা দায়রা বিচারক সঞ্জয় কুমার শর্মার কোর্টে। বিচারক দু’টি ধারায় ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪ (শ্লীলতাহানির চেষ্টা) ও ৫০৬ (হুমকি) ধারায় অভিযুক্তদের বেকসুর খালাস দেন। তবে, অন্য একটি বিশেষ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে তাঁদের। ওই ধারায় সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের সাজা হতে পারে বলে জানা গিয়েছে। আদালত থেকে বেরিয়ে শিক্ষক দম্পতি জানান, তাঁদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে এই মামলা করা হয়েছে। নাসিম আখতার দাবি করেন, তৎকালীন সাংসদের স্বামী সাকির আলি তাঁদের থেকে টাকা নিয়েছিলেন। সেই টাকা তাঁরা ফেরত চেয়েছিলেন। এমনকী মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও অভিযোগ জানিয়েছিলেন। এরপরই তাঁদের ফাঁসাতে এই মামলা করা হয় বলে দাবি দম্পতির। তাঁরা জানিয়েছেন, এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবেন।
অভিযুক্তদের আইনজীবী জানান, ঘটনার দিন অভিযুক্তরা শ্রীরামপুর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন। আদালতে তাঁরা প্রমাণ দিয়েছেন। তাছাড়াও, বাড়িতে কোনও বেআইনি কাজ চলছিল না। এমনকী সেক্স র্যাকেটের অভিযোগ আদালত খারিজ করে দিয়েছে। কিন্তু বিচারকের রায়ে তাঁরা হতাশ। এই রায় প্রত্যাশিত ছিল না বলেই তাঁরা জানান।
এই মামলায় সরকারি পক্ষের আইনজীবী জানান, অপরূপা পোদ্দার তফশিলি জাতিভুক্ত একজন মহিলা। অভিযুক্তদের বাড়িতে বেআইনি কাজকর্মের খবর পেয়ে তিনি সেখানে যান। কিন্তু সেখানে গিয়ে জাত নিয়ে অপমানজনক ভাষায় গালিগালাজ শুনতে হয় তাঁকে। তদন্তে সেই অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। মামলায় আমরা মোট ৯ জনকে সাক্ষী হিসেবে পেশ করা হয়। সমস্ত তথ্য ও সাক্ষ্যের ভিত্তিতে আদালত দম্পতিকে দোষী মান্য করেছে।