সংশোধিত ওয়াকফ আইনের বিরোধিতায় মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন এলাকায় শুরু হওয়া প্রতিবাদ কীভাবে বদলে গেল ভয়াবহ হিংসায়? এমনটা যে ঘটতে পারে, কেন তা আগে থেকে আঁচ করা গেল না? তাহলে কি রাজ্য পুলিশ প্রশাসনের অধীনস্ত গোয়েন্দা বিভাগের বিরুদ্ধে যে ব্য়র্থতার অভিযোগ উঠছে, সেটাই ঠিক? এমনটাই নাকি মনে করছেন এই ঘটনার তদন্তের জন্য গঠিত রাজ্য পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)-এর সদস্যের একাংশ! সিট-এর প্রথম বৈঠকে তা নিয়ে আলোচনাও হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে।
আনন্দবাজার ডট কম অনুসারে, এই বিষয়ে প্রকাশ্যে কেউ মুখ না খুললেও বা আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও পর্যন্ত কিছু না জানানো হলেও সিট-এর প্রথম বৈঠকে নাকি 'গোয়েন্দা ব্যর্থতা'র বিষয়টি আলোচনায় উঠে এসেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গতকাল (বুধবার - ১৬ এপ্রিল, ২০২৫) রাতে মুর্শিদাবাদের অন্যতম উপদ্রুত এলাকা সামশেরগঞ্জের স্থানীয় থানায় (সামশেরগঞ্জ থানা) সিট-এর প্রথম বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে ২০ সদস্যবিশিষ্ট সিট-এর ন'জন প্রতিনিধি যোগদান করেন। যাঁদের মধ্যে এই বিশেষ তদন্তকারী দলের প্রধান তথা রাজ্য পুলিশের এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকারও ছিলেন। বৈঠক শুরু হয় রাত ৮টা নাগাদ। শেষ হতে হতে প্রায় সাড়ে ১০টা বেজে যায়।
সম্প্রতি মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ, সুতি, জঙ্গিপুর, ধুলিয়ানে ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদের নামে যে হিংসা ছড়িয়ে পড়েছিল, তার তদন্তের জন্য ২০ সদস্যের সিট- এ সুপ্রতিম ছাড়াও রয়েছেন - জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার সুপার আনন্দ রায়, সংশ্লিষ্ট তিন থানা (সুতি, সামশেরগঞ্জ ও ফরাক্কা)-এর তিন ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক বা ওসি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ডেপুটি সুপার এবং সিআই পদমর্যাদার কয়েকজন আধিকারিক।
সূত্রের দাবি, মুর্শিদাবাদের এই সাম্প্রতিক হিংসায় যে 'গোয়েন্দা ব্যর্থতা' ছিল, বৈঠকে উপস্থিত কয়েকজন অফিসার নাকি তেমনই অভিমত প্রকাশ করেছেন। এক্ষেত্রে মূলত দু'টি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। প্রথমত - গোটা ঘটনার গুরুত্ব আগের থেকে অনুমান করতে না পারা এবং দ্বিতীয়ত - হিংসা দ্রুত ছড়িয়ে পড়লেও প্রাথমিকভাবে তা আটকাতে না পারা। এমনকী, এই গোটা ঘটনার নেপথ্যে 'পূর্ব পরিকল্পনা'ও থাকতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে বুধবার রাতের বৈঠকে।
আর এখানেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে যে - যদি চক্রান্ত কোনও হয়েই থাকে, তাহলে সেটা করল কে বা কারা? সেই ষড়যন্ত্রীদের চিহ্নিত করে পাকড়াও করার বিষয়ে হিংসার ঘটনায় ধৃত নাবালকরা চাবিকাঠি হয়ে উঠতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে। এই বালক বা কিশোরদের জেরা করে মূলচক্রীদের নাগাল পেতে চাইছে রাজ্য পুলিশের সিট।
দাবি করা হচ্ছে, গোয়েন্দা বিভাগের অভিজ্ঞ আধিকারিকরা এই বালক ও কিশোরদের জেরা করবেন। যার প্রধান লক্ষ্য হবে, হিংসার নেপথ্য কারিগরদের (যদি কেউ থেকে থাকে) চিহ্নিত করা এবং গোটা চক্রান্ত (যদি হয়ে থাকে) ফাঁস করা।
এদিকে, মুর্শিদাবাদের হিংসায় ইতিমধ্যেই কলকাতা হাইকোর্টে এনআইএ তদন্তের দাবিতে একাধিক মামলা রুজু হয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটে দ্রুত নিজেদের তদন্তের জাল গোটাতে মরিয়া রাজ্য পুলিশের সিট।