একসপ্তাহ ধরে নাগাড়ে পাহাড়ে বৃষ্টি হওয়ায় কার্শিয়াংয়ে ভয়াবহ ভূমিধস দেখা দিয়েছে। এই বছরের প্রথম ভূমিধস কার্শিয়াং থেকে ৩ কিলোমিটার নীচে গিদ্দা পাহাড়ে হয়েছে। আর তার জেরে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছে চারটি বাড়ি। বিপজ্জনক অবস্থা হয়েছে রাস্তা থেকে শুরু করে বাড়িঘরের। তার উপর ভেসে গিয়েছে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। তবে পাহাড়ে সময়ের আগেই বর্ষার আগমন ঘটেছে। তাই প্রস্তুতি শুরু করেছে প্রশাসনও। এই বর্ষায় উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে সেচ দফতরকে বাড়তি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উত্তরবঙ্গের চার জেলা জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার এবং দার্জিলিংয়ের শিলিগুড়ি মহকুমার জন্য ১২টি ক্যুইক রেসপন্স টিম গড়েছে সেচ দফতর।
এদিকে পাহাড়ে অতি বৃষ্টি এবং ভূমিধসের জেরে তৈরি রাস্তা অধিকাংশ বিপর্যস্ত। তাই যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে। ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের এই অংশ দিয়ে মূলত গয়াবাড়ি, তিনধারিয়ার পড়ুয়ারা কার্শিয়াংয়ে তাদের স্কুলে যাতায়াত করে থাকে। আর ভূমিধসের জেরে এখন সেখানে বন্ধ যান চলাচল। গত ১০ দিন ধরে এই বৃষ্টি চলছে পাহাড়ে। বর্ষায় নদী ভাঙন ঠেকাতে এবং বাঁধগুলির উপর নজরদারি চালাতে টিম গড়া হয়েছে। আর নদী ভাঙন কিংবা বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু করতে প্রয়োজনীয় সামগ্রী ইতিমধ্যেই মজুত করে ফেলা হয়েছে। সিকিম অথবা ভুটান পাহাড়ে বেশি বৃষ্টি হলে উত্তরবঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়।
আরও পড়ুন: রাত পোহালেই নয়াদিল্লিতে সাংসদদের হাজির থাকার নির্দেশ, কী নিয়ে জরুরি বৈঠক?
অন্যদিকে গত ২৪ ঘণ্টা ধরে নাগাড়ে বৃষ্টি হচ্ছে দার্জিলিং এবং কার্শিয়াংয়ে। আর তাতেই ভূমিধসের আশঙ্কায় ভুগছেন উত্তরবঙ্গের মানুষজন। রবিবার সন্ধ্যায় গিদ্দা পাহাড়ে ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে বলে খবর। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, দক্ষিণ সিকিমে গাংলা গ্রামের কাছে রাংপো নদীর জলে ইয়াংগাং থেকে রাভাংলা পর্যন্ত রাস্তা ভেসে গিয়েছে। তবে এখনও কোনও প্রাণহানির খবর মেলেনি। এই পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন প্রসাশনিক অফিসাররা। রাস্তা পরিষ্কার করার কাজ শুরু করেছে কার্শিয়াং পুলিশ। সিকিমে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ঠিকঠাক জানা গেলেও ভুটান পাহাড়ে বৃষ্টির পরিমাণ জানা বেশ কঠিন। তাই ভুটানের নদীগুলি থেকে কতটা পরিমাণ জল ডুয়ার্সে নেমে আসবে সেটা ঠিকঠাক জানা অসম্ভব।
এছাড়া জলঢাকা, তোর্সা ও সঙ্কোশ নদী ফুলতে শুরু করেছে। সেটা কোথায় গিয়ে থামবে তা কেউ বলতে পারছেন না। কারণ জলস্ফিতি বাড়লে তা বানভাসী পরিস্থিতি তৈরি করবে। জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। তার সঙ্গে রয়েছে হরপা বানের আশঙ্কা। সেসব হলে তো আর কথাই নেই। ভেসে যাবে উত্তরবঙ্গ। তাই প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ডুয়ার্সে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৬০টি রেইনগেজ বসানো হয়েছে। পাহাড়ে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়তে থাকায় আতঙ্কের মেঘ দেখা দিয়েছে পাহাড়বাসীর মনে।