আদালতের নির্দেশকেও থোড়াই কেয়ার? আর, সেটা করতে গিয়েই কলকাতা হাইকোর্টে চরম ভর্ৎসনা শুনতে হল পুলিশকে। ঘটনার রেশ ধরে রাজ্য সরকারকেও তুলোধনা করতে ছাড়লেন না বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। মাননীয় বিচারপতি কার্যত রাজ্যের পুলিশ প্রশাসন ও সরকারকে মনে করিয়ে দিলেন, গণতন্ত্রে মহামান্য আদালতের ক্ষমতা ঠিক কতটা!
ঘটনার সূত্রপাত রানিগঞ্জের একটি ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে দায়ের করা একটি 'লোন রিকভারি' সংক্রান্ত মামলা নিয়ে। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, কোনও এক ব্যক্তি আর্থ মুভার (জেসিবি) কিনবেন বলে ওই ব্যাঙ্কের কাছ থেকে মোটা টাকা ঋণ নেন। কিন্তু, সেই ঋণ আর শোধ করেননি তিনি। এরপর ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ তাঁর সেই আর্থ মুভারটি বাজেয়াপ্ত করতে গিয়ে দেখে, তা নাকি কোনও দিন কেনাই হয়নি।
এই অবস্থায় আদালতের দ্বারস্থ হয় ওই ব্যাঙ্ক। ২০২৩ সালে কলকাতা হাইকোর্ট এই মামলার প্রেক্ষিতে রানিগঞ্জ থানার পুলিশকে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেয়। কিন্তু, পুলিশ সেই নির্দেশ মানেনি বলে অভিযোগ। অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা দূরে থাক, তাঁর বিরুদ্ধে ন্যূনতম কোনও ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ ব্যাঙ্কের।
আদালতের নির্দেশ এভাবে অগ্রাহ্য করায় প্রকাশ্য এজলাসেই ক্ষোভ উগড়ে দেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। তিনি পুলিশ ও রাজ্য প্রশাসনের উদ্দেশে বলেন, 'ভুলে যাচ্ছেন এটা হাইকোর্টের অর্ডার। এবার সেন্ট্রাল এজেন্সিকে দায়িত্ব দেব।' এমনকী, তদন্তকারী আধিকারিককে রীতিমতো কড়া ভাষায় সতর্ক করেন বিচারপতি।
শুক্রবার এই মামলার শুনানি চলাকালীন বিচারপতি ঘোষ জানান, ২০২৩ সালে একটি নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। যে নির্দেশ আজ পর্যন্ত পালন করা হয়নি! পুলিশ যদি এই মামলায় পদক্ষেপ করতে অক্ষম হয়, তাহলে প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় বাহিনী নামিয়ে আদালত তার নির্দেশ পালন করাবে বলে জানান বিচারপতি ঘোষ।
একইসঙ্গে, আদালত বেশ কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর চায় পুলিশের কাছে। বিচারপতি জানতে চান - ওই জেসিবি কোথায়? কেন অভিযুক্তকে পাওয়া যাচ্ছে না? কে সেই প্রভাবশালী? কত বড় শক্তিমান তিনি?
বিচারপতি ঘোষ আরও বলেন, 'রাজ্য যদি মনে করে হাইকোর্টের নির্দেশ মানবে না, তাহলে কোর্ট জানে কী করে নির্দেশ পালন করাতে হয়! হয় ডিভিশন বেঞ্চে গিয়ে এই অর্ডার খারিজ করান, আর না হলে নির্দেশ কার্যকর করুন। আপনারা যদি কোর্টের অর্ডার না মানেন, তাহলে কোর্ট আপনাদের সমস্যা দেখবে না।'
এই মামলায় আগামী ১০ মার্চ পর্যন্ত সময় দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। তার মধ্যেই পুলিশকে আদালতের নির্দেশ মতো পদক্ষেপ করতে হবে, অন্যথায় তদন্তভার কোনও কেন্দ্রীয় সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার এবং আধাসেনা নামিয়ে আইনি পদক্ষেপ করানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ।