এক সময় যাঁরা জলদাপাড়ায় ঘুরতে গিয়েছেন, তাঁদের অনেকের কাছেই পছন্দের থাকার জায়গা ছিল হলং নদীর ধারে দাঁড়িয়ে থাকা কাঠের বনবাংলো। ১৯৬৭ সালে নির্মিত ওই বাংলো শুধুমাত্র একটি থাকার জায়গা নয়, বরং প্রকৃতির কোলে নিঃশব্দে কাটানো মুহূর্তগুলোর এক অন্যতম ঠিকানা হয়ে উঠেছিল বহু পর্যটকের কাছে। তবে গত বছর আচমকা আগুনে সব শেষ। এক মুহূর্তে ভস্ম হয়ে যায় বাংলোটি। তারপর থেকেই দাবি উঠছিল, ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে হবে। পুরনো কাঠের সেই সৌন্দর্য আবার ফিরে আসুক, সেটাই চাইছেন পর্যটক থেকে ব্যবসায়ী সকলে। অবশেষে সেই পথেই এগোল কাজ। পূর্ত দফতর তৈরি করেছে নতুন নকশা ও পরিকল্পনার বিস্তারিত রিপোর্ট। সেই ডিপিআর ইতিমধ্যেই পাঠানো হয়েছে বন দফতরের হাতে।
আরও পড়ুন: পুড়ে ছাই হয়ে গেল জলদাপাড়ার হলং বনবাংলো, বিধ্বংসী আগুনে সব শেষ
সূত্রের খবর, কাঠের গড়ন বজায় রেখেই তৈরি হবে নতুন বাংলো। তবে এইবার কাঠ আর টিনের সঙ্গে ব্যবহার করা হবে ইট ও কংক্রিট, যাতে কাঠামো আরও মজবুত হয়।তবে একটা বিষয় এখনও ধোঁয়াশায় নতুন বাংলোতেও কি আগের মতো ৮টি ঘরই থাকবে, না কি বাড়ানো হবে সংখ্যা? এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি এখনও। প্রশ্ন উঠেছে আরেকটি জায়গায়ও। সংরক্ষিত বনাঞ্চলের কোর এলাকায় নতুন কোনও বাণিজ্যিক নির্মাণ তৈরি আইনত নিষিদ্ধ। তাহলে কীভাবে গড়ে উঠবে এই নতুন বাংলো? উত্তর মিলেছে বন বিভাগের তরফে। উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল ভাস্কর জেভির কথায়, এই বাংলো কখনওই রাজ্যের রাজস্বে যুক্ত কোনও বাণিজ্যিক প্রকল্প ছিল না। এখানে পর্যটকদের থাকার যে আয় হতো, তা পুরোপুরি খরচ হত বনরক্ষা ও সংরক্ষণে। সেকারণেই এখানে আইনি বাধা নেই।
এই সিদ্ধান্তে স্বস্তি ফিরে পেয়েছেন পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত মানুষজনও। পর্যটন সংস্থাগুলির বক্তব্য, বাংলোটা পুরনো আমেজে ফিরে আসুক সেটাই তাঁরা চান। অযথা ঘরের সংখ্যা বাড়িয়ে লোক বাড়ালে প্রকৃতির ক্ষতি হবে, সেটা চান না তাঁরা। কাঠের গন্ধ, নীরবতা এসবই হল হলংয়ের পরিচয়। এই সবের মধ্যেই আরেকটি পরিবেশবান্ধব সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য বন বিভাগ ।কার্শিয়াংয়ের ডাউহিল এলাকায় এবার থেকে পুরোপুরি নিষিদ্ধ হচ্ছে প্লাস্টিক। অঞ্চলটিকে ঘোষণা করা হয়েছে নো প্লাস্টিক জোন। সবমিলিয়ে, প্রাকৃতিক পরিবেশ ও ঐতিহ্যকে পাশে রেখে আবার প্রাণ পেতে চলেছে জলদাপাড়ার গর্ব হলং বনবাংলো।