একটা সময় ছিল যখন গ্রামের দিকে কম বেশি অনেক বাড়িতেই গবাদি পশু থাকত। কিন্তু, এখন গ্রামের দিকে সেই ছবি আর দেখা যায় না। যারফলে রাজ্যে গবাদি পশুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়েছে।এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে প্রাণী সুমারি রিপোর্টে। বাংলা জুড়ে চলা প্রাণী সুমারির প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৯ সালের তুলনায় বর্তমানে রাজ্যে গবাদি পশুর সংখ্যা ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কমে গিয়েছে। সব মিলিয়ে গোটা রাজ্যে গবাদি পশু কমেছে প্রায় ৪০ লক্ষ, যা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের আধিকারিকদের।
আরও পড়ুন: বিএসএফের গুলিতে জখম বাংলাদেশি পাচারকারী, প্রতিবাদ জানাল বিজিবি
গোটা রাজ্যে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে গরু, ভেড়া, ছাগল, শুয়োর, হাস, মুরগির গণনা করেন দফতরের আধিকারিকরা। রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, গোটা রাজ্যে পোল্ট্রির সংখ্যা তাৎপর্যপূর্ণভাবে বেড়েছে। কারণ চাহিদা বাড়ছে। তবে গোখাদ্যের পরিমাণ কমে যাওয়ায় গবাদি পশুর সংখ্যা কমে গিয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে রাজ্যজুড়ে ২১ তম প্রাণী সুমারি চলেছিল। তাতেই এই উদ্বেগজনক তথ্য সামনে এসেছে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, গতবারের তুলনায় সবচেয়ে বেশি গবাদি পশু কমেছে পূর্ব মেদিনীপুরে। এই জেলায় প্রায় ৪ লক্ষের অধিক গবাদি পশু কমেছে। এছাড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ও পূর্ব বর্ধমান জেলায় সাড়ে ৩ লক্ষ, উত্তর দিনাজপুর জেলায় ৩ লক্ষের অধিক গবাদি পশু কমেছে, হুগলি জেলায় ২ লক্ষ ৮০ হাজারের বেশি, কোচবিহারে ২ লক্ষ ৫০ হাজার, আলিপুর দোয়ার জেলায় ২ লক্ষ, বীরভূম জেলায় ১ লক্ষ ৪০ হাজার এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় ১ লক্ষের বেশি গবাদি পশু কমেছে।
এই সংখ্যা কমার কারণ হিসেবে প্রাণীবিদদের বক্তব্য, মানুষ গবাদি পশুর চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তার অন্যতম কারণ হল অত্যাধিক খরচ। বর্তমানে রাজ্যজুড়ে সবুজ ঘাস কমেছে। যার ফলে গরুর সহজাত খাবার মিলছে না। এর জন্য গরুর খাবার আলাদাভাবে কিনতে হচ্ছে। তাছাড়া, বর্তমানে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ধান ঝাড়ার ফলে বিপুল পরিমাণ খড় মাঠেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গবাদি পশুর খাবার সেরকমভাবে মিলছে না। ফলে চাষিরা টাকা দিয়ে গরুর খাবার কিনতে সমস্যায় পড়ছেন। আর তাছাড়া বর্তমানে নবীন প্রজন্মের মধ্যে এ নিয়ে উদাসীনতা দেখা দিচ্ছে। ফলে গবাদি পশু লালনপালন থেকে সরে আসছেন অনেকেই। এইসবের কারণে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে গবাদি পশু।
প্রাণীসম্পদ বিকাশ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৯ সালের প্রাণী সুমারি রিপোর্ট অনুযায়ী, নদিয়া জেলায় গবাদি পশুর সংখ্যা ছিল ৮লক্ষ ৯ হাজার ১৩৩ টি, ছাগল ছিল ৯ লক্ষের বেশি। নদিয়া জেলায় অক্টোবর মাস থেকে সুমারি শুরু হয়েছিল। তাতে অংশ নিয়েছিলেন ৩৯২ জন গণনাকারী। এ বিষয়ের নদিয়া জেলার ডিস্ট্রিক্ট নোডাল অফিসার দেবাশিস জানা বলেন, প্রাণী সুমারি করার সময় দেখা গিয়েছে, গবাদি পশুর সংখ্যা নিম্নমুখী। তবে সেই জায়গায় পোল্ট্রি মুরগি ও ছাগলের সংখ্যা বেড়েছে। কারণ চাহিদা বেড়েছে।