আজ থেকে কিছু বছর আগেও ঝুলন যাত্রা নিয়ে একটা আলাদাই আকর্ষণ কাজ করতে ছোটদের মধ্যে। ঝুলন যাত্রার প্রায় সপ্তাহ দুয়েক আগে থেকেই ছোট ছোট মাটির পুতুল কিনে তা দিয়ে ঝুলন সাজাতো শিশুরা। কিন্তু এখন সবকিছুই যেন মেকি। সেই মাঠ ঘাট বা খোলা আকাশ কিছুই এখন নেই। নেই ঝুলন যাত্রার সেই উদ্দীপনা।
তবে মোবাইল এবং পড়াশোনার চাপ থেকে ছোটদের খানিকটা স্বস্তি দেওয়ার জন্য এক অভিনব পদক্ষেপ নিল শ্রীরামপুরের স্যাফকন ইন্ডিয়া এবং টেম্পেল টাচ নামে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। নতুন প্রজন্মের কাছে ঝুলন উৎসবকে তুলে ধরার জন্য প্রতি বছর এই পদক্ষেপ নেন তাঁরা। শ্রীরামপুর যাত্রা চরকি গেটের কাছে প্রায় এক কাঠা জমির ওপর মাটির পুতুলে সেজে ওঠে অভিনব এক ঝুলন।
(আরও পড়ুন: ১৪ লক্ষ মেয়েকে স্কুলে যেতে দেয়নি তালিবান, ৮০ শতাংশ মেয়ে শিক্ষা থেকে দূরে)
প্রতিবছরের মত এই বছরও স্বাধীনতা দিবসের দিন রক্তদান শিবির কর্মসূচির মাধ্যমে সূচনা হয় ঝুলন যাত্রার। সূচনা করেন সৌরভ সরকার এবং শিখা সরকার। তারপর থেকেই সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হয় এই ঝুলন যাত্রার দরজা। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকলেই ভিড় করছেন ঝুলন দেখার জন্য।
এই বিষয়ে উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, এবারের ঝুলনে রাক্ষস বধ হলেও কৃষ্ণের কালীয় দমন থেকে শুরু করে ছোট ছোট মাটির পুতুল সবই দেখতে পাবেন আপনি। অশুভ শক্তি বিনাশ এবং শুভ শক্তির উত্থান তুলে ধরা হয় আলো এবং শব্দের কারসাজিতে। দেখতে পাবেন শ্রীকৃষ্ণের নৌকা বিলাস। প্রায় পাঁচ দিনব্যাপী এই ঝুলন যাত্রা শেষ হবে যাত্রাপালার মাধ্যমে।
এই প্রসঙ্গে বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ‘শ্রাবণ ভাদ্র মাসে শিবের উপাসনা ছাড়া সেইরকম বড় কোনও ধর্মীয় উৎসব থাকে না। তাই স্বাভাবিকভাবেই শ্রীরামপুরের যাত্রার এই ঝুলন উৎসব একটি বড় উৎসবের রূপ নেয়। শ্রীরামপুর তো বটেই, আশেপাশের বহু মানুষ ভিড় জমান এই ঝুলন দেখার জন্য।’
(আরও পড়ুন: চুপি চুপি এসে বিরাট ক্ষতি করে ব্রেন স্ট্রোক, আগেভাগে প্রতিকার ও লক্ষণ জানা জরুরি)
ঝুলন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে এক প্রবীণ স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন ঝুলন উৎসব নিয়ে কত আগ্রহ ছিল আমাদের মধ্যে। গঙ্গার মাটি, থান ইট, পুরনো কাপড় দিয়ে তৈরি করা হত পাহাড়। তারপর দেওয়াল থেকে শ্যাওলা তুলে পাহাড়ে বসানো হতো পুতুল। এই সমস্ত ব্যাপার এখনকার শিশুরা ভাবতেই পারে না।’
ঝুলন উৎসব প্রসঙ্গে উদ্যোক্তা সৌরভ সরকার বলেন,' মোবাইল আর অনলাইন গেমের আসক্তি থেকে শিশুদের কিছুটা বের করে আনার জন্যই এই উদ্যোগ আমাদের। এখন পড়াশোনার চাপে শিশুরা আনন্দ করতেই ভুলে গেছে। ছোটবেলার সেই আনন্দকে শিশুদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যই এই ঝুলন যাত্রার আয়োজন করি আমরা।'