সারা দেশে পালিত হচ্ছে ধনতেরাস। এই দিনটির পালন করেন অনেকেই। কিন্তু এ পৌরাণিক ব্যাখ্যা অনেকেরই জানা নেই। এখান থেকে জেনে নিন, সেই কাহিনি। ধনতেরাস নিয়ে নানা কাহিনি রয়েছে। এর মধ্যে তিনি কাহিনি সবচেয়ে বিখ্যাত। রইল সেই তিনটি কাহিনি। ১। পুরাণ মতে, ধনতেরাসের দিন ভগবান ধন্বন্তরী ধরাধামে আসেন। তিনি আয়ুর্বেদ চিকিৎসার দেবতা। তাছাড়া এই একই দিনে কুবেরও পৃথিবীতে আবির্ভূত হন বলেও মনে করা হয়। ধন্বন্তরী দেবতা হাতে কলসি নিয়ে আবির্ভূত হন। আ সেই কলসিতে ধনসম্পদ অর্থ ও বিভিন্ন মূল্যবান রত্ন ভর্তি থাকে। অনেকে অবশ্য বলেন, এই কলসিতে থাকে অমৃত। মূল্যবান ধন সম্পদের বিনিময়ে তা সংগ্রহ করতে হয় ভগবান কুবের এর কাছ থেকে। সেই জন্য এই দিন সোনা রুপো এবং অলংকার ও বাসন কেনার প্রচলন রয়েছে।২। অন্য একটি কাহিনি বলছে, এদিন ঋষি দুর্বাসার অভিশাপে দেবরাজ ইন্দ্র স্বর্গলোকে লক্ষ্মীহীন হয়ে পড়েন। সেই সময় প্রজাপতি ব্রহ্মার কাছে দেবতারা ছুটে যান এর প্রতিকার পেতে। তখন ব্রহ্মা তাঁদের মৈনাক পর্বত নিয়ে সমুদ্র মন্থন করতে উপদেশ দেন। অসুরদের সহায়তাও নিতে উপদেশ দেন। সেই মতো সমুদ্র মন্থন করেন দেবতারা এবং অসুররা। সমুদ্রগর্ভ থেকে মা লক্ষ্মী ধন সম্পদ সহ আবির্ভূত হন। এইভাবেই দেবলোক পুনরায় মা লক্ষ্মীকে লাভ করেন। ঘটনাটি ঘটেছিল কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশী তিথিতে। সেই দিনটি উদযাপন করার জন্য ধরাধামে মা লক্ষ্মীর পূজা করা হয়। সেটিই ধনতেরাস।৩। আরও একটি গল্প প্রচলিত আছে। পুরাকালে হিমা বলে এক রাজা ছিলে। সেই রাজার ছিল এক সুন্দর পুত্র। কিন্তু রাজপুত্রের উপর ছিল অভিশাপ। তাঁর বিয়ের চতুর্থ দিনেই রাজপুত্র মারা যাবেন, এমনই বলা হয়েছিল। এই কথা ভেবে রাজা রাজপুত্রের বিয়ে দিতে ইচ্ছুক ছিলেন না। কিন্তু একবার রাজপুত্রের সঙ্গে এক রাজকন্যার দেখা হয়, এবং তার পরে প্রেম হয়। তাঁরা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এর পর নববধূ জানতে পারেন, তাঁর স্বামীর উপর থাকা অভিশাপের কথা। রাজবধূ বিবাহের চতুর্থ দিনে গণেশের পূজা অর্চনা শুরু করেন এবং পরবর্তী সময়ে মা লক্ষ্মীর পূজা করেন। তখন এই দুই দেবতা তাঁর পুজায় খুশি হয়ে আবির্ভুত হন। রাজবধূ স্বামীর মঙ্গল কামনা করেন এবং তার স্বামীর অকাল মৃত্যু রোধ করতে অনুরোধ করেন। তখন তাঁরা বলেন, তুমি যদি তোমার বুদ্ধির সাহায্যে ভগবান যমকে তোমার গৃহে প্রবেশ করতে না দাও, তাহলেই রাজপুত্রের প্রাণ রক্ষা পাবে এবং তার দীর্ঘায়ু হবে। মা লক্ষ্মী জানিয়ে দেন যম সর্পবেশে আসবেন। তখন রাজবধূ রাজকোষ থেকে সব মূল্যবান অলঙ্কার নিয়ে আসেন এবং তা রাজ প্রাসাদের যে কক্ষে রাজকুমার আছেন, তার চারপাশে ছড়িয়ে দেন। তারপর চারপাশে প্রদীপ জ্বালিয়ে দেন। সর্পবেশী যমরাজ রাজকুমারের খোঁজে রাজপ্রাসাদে আসেন। তখন প্রদীপের আলোয় এবং অলঙ্কারের চমকে এবং উজ্জ্বলতায় তার চোখ ধাঁধিয়ে যায়। ফলে দিকভ্রষ্ট হয়ে সর্পবেশী যমরাজ রাজপ্রাসাদের পথ হারিয়ে ফেলেন এবং সেইভাবে রাতভর রাজপ্রাসাদ খুঁজে পান না,ফলে একপ্রকার ব্যর্থ হয়ে যমলোকে ফিরে যান। আর এই দিনটি ছিল কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশীর দিন। তাই এই দিনটিকে বিশেষ গুরুত্ব সহকারে হিন্দুদের মধ্যে উৎসব আকারে পালন করা হয়। যা বর্তমানে ধনতেরাস নামে পরিচিত।