Share 
মায়ানমারে ভয়াবহ ভূমিকম্প। নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আন্তর্জাতিক উদ্ধারকারী দল এলাকায় গিয়েছে। উপচে পড়ছে হাসপাতাল। দুর্গতদের উদ্ধার করতে হিমসিম খাচ্ছে উদ্ধারকারী টিম।
মায়ানমারে এক শতাব্দীর মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পটি শুক্রবার আঘাত হানে, যাতে প্রায় ১ হাজার ৭০০ মানুষ নিহত হয়েছেন, ৩ হাজার ৪০০ জন আহত হয়েছেন এবং ৩০০ জনেরও বেশি নিখোঁজ হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির সামরিক সরকার। ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভিসের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, প্রাণহানি ১০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে, অর্থনৈতিক ক্ষতি দেশটির বার্ষিক উৎপাদনকে ছাড়িয়ে যেতে পারে।
২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়া মায়ানমারের এই বিপর্যয় মায়ানমারের অস্থিরতাকে আরও গভীর করেছে।
সেতু, মহাসড়ক, বিমানবন্দর ও রেলপথসহ গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এদিকে, চলতি সংঘাত অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে, ৩৫ লাখেরও বেশি মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে এবং স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে দুর্বল করেছে।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের (ইউসিএল) ইমেরিটাস অধ্যাপক বিল ম্যাকগুইয়ার ফ্রান্স২৪কে বলেন, সাম্প্রতিক ভূমিকম্পটি সম্ভবত গত ৭৫ বছরের মধ্যে মায়ানমারের মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানা সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প।
ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভিস (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, ২০২৫ সালের ২৮ মার্চ মান্দালয়ের কাছে আঘাত হানা ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পটি ভারত ও ইউরেশিয়া প্লেটের সীমানা বরাবর 'স্ট্রাইক-স্লিপ ফল্টিং'-এর কারণে হয়েছিল।
ফোকাল মেকানিজম বিশ্লেষণ ইঙ্গিত দেয় যে ফাটলটি উত্তর-স্ট্রাইকিং, ডান-পার্শ্বীয় চ্যুতি বা পশ্চিম-স্ট্রাইকিং, বাম-পার্শ্বীয় চ্যুতিতে ঘটেছিল। সসীম ফল্ট মডেলটি পূর্ববর্তীটিকে সমর্থন করে, ডান-পার্শ্বীয় সাগাইং ফল্টের সাথে সারিবদ্ধ হয়, যা ভারতীয় এবং সুন্দা প্লেটের মধ্যে সীমানা চিহ্নিত করে।
মানচিত্রে পিনপয়েন্ট অবস্থানের বিপরীতে, এই মাত্রার ভূমিকম্পগুলি একটি বিস্তৃত ফল্ট এলাকার উপর পিছলে যাওয়ার সাথে জড়িত। ফাটল অঞ্চলটি দৈর্ঘ্যে প্রায় ২০০ কিলোমিটার এবং প্রস্থে ২০ কিলোমিটার ।
ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের (আইসিএল) টেকটোনিক্স বিশেষজ্ঞ রেবেকা বেলও ভূমিকম্পটিকে ফল্ট বরাবর স্ট্রাইক-স্লিপ ইভেন্ট হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। এই চ্যুতি, যেখানে ভারতীয় এবং সুন্দা প্লেটগুলি মিলিত হয়, ক্যালিফোর্নিয়ার সান অ্যান্ড্রিয়াস ফল্টের স্কেল এবং চলাচলের অনুরূপ।
বেল উল্লেখ করেছেন যে সাগাইং ফল্ট একটি সরলরেখায় ১,২০০ কিলোমিটার (৭৪৫ মাইল) প্রসারিত, যা ভূমিকম্পকে বিশাল অঞ্চল জুড়ে ফাটল ধরতে দেয়। ফাটল এলাকা যত বড় হবে, ভূমিকম্প তত শক্তিশালী হবে।
এই ধরণের ভূমিকম্পগুলি অত্যন্ত ধ্বংসাত্মক হতে থাকে, কারণ ফাটলটি অগভীর গভীরতায় ঘটে, যার অর্থ ভূপৃষ্ঠে পৌঁছানোর আগে ভূমিকম্পের শক্তি ন্যূনতম বিলীন হয়ে যায়, যার ফলে তীব্র ভূমি কম্পন হয়।
এই অঞ্চলে বেশ কয়েকটি বড় স্ট্রাইক-স্লিপ ভূমিকম্প হয়েছে, ১৯০০ সাল থেকে এই ঘটনার ২৫০ কিলোমিটারের মধ্যে ৭ বা তার বেশি মাত্রার কমপক্ষে ছয়টি ভূমিকম্প হয়েছে। সবচেয়ে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পটি ছিল ১৯৯০ সালে ৭.০ মাত্রার ভূমিকম্প, যার ফলে ৩২টি ভবন ধসে পড়েছিল। ১৯১২ সালে এই অবস্থানের দক্ষিণে ৭.৯ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে, ১৯৮৮ সালে ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্পের ফলে কয়েক ডজন লোক মারা যায়।
ব্রিটিশ জিওলজিক্যাল সার্ভের অনারারি রিসার্চ ফেলো রজার মুসন এই উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে বলেছেন যে ভূমিকম্পের অগভীর গভীরতা ১০ কিলোমিটার (৬.২ মাইল) ধ্বংসকে আরও তীব্র করেছে। ভূপৃষ্ঠে পৌঁছানোর আগে সামান্য শক্তি হারিয়ে যাওয়ায়, ভবনগুলি কম্পনের পুরো শক্তি বহন করেছিল।
মুসন আরও জোর দিয়েছিলেন যে কেবল উপকেন্দ্রের দিকে মনোনিবেশ করা বিভ্রান্তিকর, কারণ ভূমিকম্পের তরঙ্গগুলি একক বিন্দুর পরিবর্তে চ্যুতির পুরো দৈর্ঘ্য থেকে প্রসারিত হয়। মুসন ব্যাখ্যা করেছেন যে এই অনুমানগুলি অতীতের ভূমিকম্পের তথ্য, মায়ানমারের ভৌগলিক বৈশিষ্ট্য এবং ভূমিকম্পের ঘটনাগুলির জন্য প্রস্তুতির উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।
6,000.000+downloads/Free/Bengali/Version2.3.4
6.88% Weekly Cashback on 2025 IPL Sports
