বাণিজ্যিক খননের উদ্দেশে দেশের ৪১টি কয়নাখনির বরাত দিতে বৃহস্পতিবার নিলামের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এর মধ্যে বেশ কিছু খনি জীববৈচিত্র পূর্ণ ঘন জঙ্গলের মধ্যে থাকায় সরকারি সিদ্ধান্ত ঘিরে উঠল বিতর্কের ঝড়।
এ দিন নিলাম চালু করার আগে মোদী বলেন, কয়লার বাজার এখন মুক্ত। কয়লাখনির নিলাম করোনা করিস্থিতির মাঝে এক অযাচিত অর্থনৈতিক সুযোগ এনে দিয়েছে। কিন্তু তাঁর আশ্বাসবাণীতে আদৌ সন্তুষ্ট নন পরিবেশবিদরা।
কেন্দ্রীয় সরকার প্রকাশিত নিলামে ওঠা ৪১টি খনির মধ্যে বেশ কয়েকটি রয়েছে মধ্য ভারতের ১,৭০,০০০ হেক্টেয়ার জুড়ে থাকা হাসদেও আরন্দ অরণ্যাঞ্চলে, যা জীববৈচিত্র ও পরিবেশের ভারসাম্য রাখার জন্য সুবিদিত। এমএসটিসি ওয়েবসাইটে প্রস্তাবিত খনিগুলির যে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হয়েছে, তাতে দেখা গিয়েছে যে বেশ কিছু খনির বন দফতরের ছাড়পত্র নেই এবং সেগুলির অবস্থান সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভিতরে।

এর মধ্যে ছত্তিশগড়ে ২১ বর্গ কিমি এলাকাজুড়ে থাকা মদনপুর উত্তর খনিটির ১৭ বর্গ কিমি বনাঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। এই অঞ্চল হাসদেও নদীতে মেশা বেশ কিছু উপনদীর উৎসস্থল। ুল্লেখ্য, খনিটি এখনও পর্যন্ত বন ও পরিবেশ মন্ত্রকের ছাড়পত্র পায়নি।
এই অঞ্চলে চিহ্নিত হয়েছে আর একটি কয়লাখনি মোগ্রা ২, যার ২৬.৬৪ বর্গ কিমি এলাকার ৮৫ শতাংশই বনাঞ্চলের মধ্যে পড়ছে। মহানদীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপনদী হাসদেও এই অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে বয়ে গিয়েছে। এ ছাড়া, এমএসটিসি-র দেওয়া তথ্য জানাচ্ছে, মোর্গা দক্ষিণ কয়লাখনির প্রায় সম্পূর্ণ অংশই বনাঞ্চলে অবস্থিত।
একই সমস্যা দেখা গিয়েছে ঝাড়খণ্ড ও মধ্য প্রদেশে চিহ্নিত কয়লাখনিগুলিকে নিয়েও। এর মধ্য মধ্য প্রদেশে চিহ্নিত খনিগুলির প্রতিটি ৮০% বনাঞ্চল জুড়ে রয়েছে এবং এখানেই রয়েছে সিতারেওয়া নদীর গুরুত্বপূর্ণ গতিপথের অধিকাংশ।

গত ১০ জুন প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি মারফৎ ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন খনি নিলাম পদ্ধতি বন্ধ করার আর্জি জানান। তাঁর যুক্তি, বাণিজ্যিক খননের জেরে প্রচুর পরিমাণ বনাঞ্চল ধ্বংস হবে, যা পরিবেশ ও প্রাকৃতিক ভারসাম্যের পক্ষে চূড়ান্ত ক্ষতিকর। এ ছাড়া, জঙ্গল বিনষ্ট হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন অরণ্য আশ্রিত জনজাতি, দাবি সোরেনের। হাসদেও আরন্দ অঞ্চলের ২০টি গ্রামসভার তরফেও প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে খনি প্রকল্প বাতিল করার আবেদন জানানো হয়েছে। কিন্তু তাতে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে কোনও রদবদল হয়নি।
হিন্দুস্তান টাইমস-এর তরফে কেন্দ্রীয় কয়লা মন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে কোনও জবাব মেলেনি।
এই বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চ সংস্থার আইনি গবেষক কাঞ্চি কোহলি বলেন, ‘কেন্দ্রের এই কয়লাখনির নিলাম পঞ্চম তফসিলের অন্তর্ভুক্ত স্পর্শকাতর জীববৈচিত্রপূর্ণ অরণ্যাঞ্চলকে উন্মুক্ত করে দিচ্ছে। নিলামের সিদ্ধান্ত থেকে স্পষ্ট যে সরকার এই সমস্ত অঞ্চল শুধুমাত্র কয়লা উৎপাদন ক্ষেত্র হিসেবেই দেখছে, যেখানে বাণিজ্যিক খননের ফলে মোটা আর্থিক মুনাফা লুটবে বেসরকারি সংস্থা। কোনও নিষেধাজ্ঞা বা মূল্য নির্ধারণ নীতির অনুপস্থিতিতে জনস্বার্থ রক্ষার দায় কাঁধ থেকে ঝেড়ে ফেলছে কেন্দ্র। বালাই নেই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা এবং সংবিধান সুরক্ষিত দেশের বনাঞ্চলের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করারও। তাই কোনও পক্ষের যুক্তির ধার না ধরে একমুখী সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।’