ঘোর সংকটে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন। অফিস অফ প্রফিট ইস্যুতে তাঁকে বিধানসভা থেকে বহিষ্কার করার সুপারিশ দিল ভারতের নির্বাচন কমিশন। ইতিমধ্যেই সেই সুপারিশ পাঠানো হয়েছে রাজ্যের রাজ্যপালের কাছে। এবার রাজ্যপাল কী করেন, তার ওপরই পরের ঘটনাক্রম নির্ভর করবে বলে একজন বরিষ্ঠ আধিকারিক জানিয়েছেন। এখনও মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে নির্বাচন কমিশন বা রাজ্যপালের তরফে কোনও বার্তা আসেনি বলে সোরেন ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে নিজের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলির অপব্যবহার করছে বিজেপি বলে অভিযোগ করেছেন হেমন্ত সোরেন। ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপাল বিরোধী বিজেপির কাছ থেকে প্রাপ্ত একটি অভিযোগের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশনের মতামত চেয়েছিলেন। বিজেপির অভিযোগ ছিল যে সোরেনের নামে স্টোনচিপসের খনি আছে, যেটা থেকে তিন অর্থলাভ করছেন। সাংবিধানিক পদে আসীন থেকে এরকম কোনও ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থাকা যায় না বলেই বিজেপির অভিযোগ ছিল। প্রসঙ্গত, খনন অর্থাৎ মাইনিং মন্ত্রকও বর্তমানে মুখ্যমন্ত্রীর হাতে। রাজ্যপাল রমেশ বাইস, যিনি সোমবার থেকে ব্যক্তিগত সফরে জাতীয় রাজধানীতে রয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাঁচিতে ফিরে আসবেন। শেষপর্যন্ত নির্বাচন কমিশন কী করে ও রাজ্যপাল সেই ভিত্তিতে কী সিদ্ধান্ত নেন, সেদিকে সবার নজর, কারণ রাজ্য রাজনীতিতে নাটকীয় পটপরিবর্তনের সম্ভাবনা আদৌ উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ইতিমধ্যেই কংগ্রেস সহ অনেক দলের আশংকা যে ঝাড়খণ্ডেও ক্ষমতা দখল করতে চায় বিজেপি। গতিপ্রকৃতি অনুযায়ী সব রাজনৈতিক দলই নিশ্চিত ভাবে তাদের ঘুঁটি সাজাবে। কীভাবে নির্বাচন কমিশনের বন্ধ খামে থাকা রিপোর্ট লিক হয়ে গেল সেই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হেমন্ত সোরেন। তাঁর অভিযোগ যে এক বিজেপি সাংসদ ও তাঁর কিছু পছন্দের সাংবাদিকরা মিলে এই রিপোর্টটি লিখেছে বলে মনে হচ্ছে। সোরেনের দাবি যে বিজেপি সমস্ত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ও সরকারি সংস্থাগুলিকে নিজেদের প্রধান কার্যালয় থেকে চালাচ্ছে। এরকম ভারতীয় গণতন্ত্রে আগে দেখা যায়নি ও অত্যন্ত লজ্জার একটি বিষয় বলে তিনি মনে করেন। প্রসঙ্গত, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সভাপতিত্বে বেঞ্চের বিশদ শুনানির পরে ইসিআই সুপারিশ দিচ্ছে, যেখানে বিজেপি এবং সোরেনের আইনজীবী তাদের পক্ষ পেশ করেছিলেন।এই বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাস বিষয়টি প্রথম তুলে ধরেন। দাস এবং বর্তমানে বিজেপির বিধানসভার দলনেতা বাবুলাল মারান্ডির নেতৃত্বে একটি বিজেপি প্রতিনিধিদলও রাজ্যপালের সাথে দেখা করেছিল, এই দাবি নিয়ে যে জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ধারা 9A এর অধীনে সোরেনকে অপসারন করা হওয়া উচিত। রাজ্যপাল অভিযোগটি ইসিআই-এর কাছে পাঠিয়েছিলেন যারা প্রথমে মুখ্য সচিবকে একটি নোটিশ জারি করেছিল, যাতে সোরেনকে খনির ইজারা দেওয়ার বিষয়ে সমস্ত নথি চেয়েছিল।নথিগুলি খতিয়ে দেখার পর নির্বাচন কমিশন মে মাসে সোরেনকে শুনানির জন্য ডাকে। শেষপর্যন্ত এই বিষয়টি আদালতে গড়াবে, এখন কার্যত সেটি নিশ্চিত বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। তবে সোরেন নিজের গদি বাঁচাতে পারেন কিনা, সেটাই দেখার।