লোকসভায় নয়া আয়কর বিল পেশ করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। যে বিল সংসদের সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোরও প্রস্তাব দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে লোকসভায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী সওয়াল করেন, পরবর্তী অধিবেশনের প্রথম দিনে যেন সেই কমিটি রিপোর্ট জমা দেয়। আর তারইমধ্যে লোকসভা থেকে ওয়াক-আউট করেন বিরোধীরা। সংসদের বাইরে তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ সৌগত রায় বলেছেন, ‘নয়া আয়কর বিল আনতেই আমরা বিরোধিতা করেছিলাম। কারণ তাতে কোনও সুযোগ-সুবিধা নেই। আগের থেকেও এই বিলটা বেশি জটিল।’
নয়া আয়কর বিল অনেক সহজ, দাবি সরকারের
কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্য নয়া আয়কর বিলকে ‘সহজ’ হিসেবেই দাবি করেছে। বিশেষজ্ঞদেরও একাংশের মতে, এখন যে আয়কর আইন আছে, তাতে যে সব ভাষা আছে, তার থেকে অনেক সহজ-সরল ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে নয়া আয়কর বিলে। আর সেই নয়া আয়কর বিলের মূল বিষয়গুলি কী কী? তা দেখে নিন।
‘অ্যাসেসমেন্ট ইয়ার’ উঠে যাচ্ছে, আসছে ‘ট্যাক্স ইয়ার’
১) নয়া আয়কর বিলে ভাষা সহজ করা হয়েছে। 'অ্যাসেসমেন্ট ইয়ার', 'প্রিভিয়াস ইয়ার'-র মতো টেকনিকাল শব্দের পরিবর্তে সহজ ‘ট্যাক্স ইয়ার’ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিনিয়োগ ও কর বিশেষজ্ঞ বলবন্ত জৈনের মতে, এখন যে আয়কর আইন আছে, তার থেকে নয়া আয়কর বিলে সহজ ভাষা প্রয়োগ করা হয়েছে। ফলে করদাতাদের সুবিধা আছে। এখন যে ভাষা প্রয়োগ করা হয়েছে, তা বুঝতে কখনও কখনও অসুবিধা হয়। আর বিভিন্নরকম ব্যাখ্যা করা যায়।
২) ১৯৬১ সালের আয়কর আইনে ২৯৮টি ধারা, ৫২টি অধ্যায় এবং ১৪টি তফসিল আছে। পৃষ্ঠার সংখ্যা হল ১,৬৪৭। সেখানে নয়া আয়কর বিলে ৫৩৬টি ধারা, ২৩টি অধ্যায় এবং ১৬টি তফসিল থাকলেও মাত্র ৬২২টি পৃষ্ঠা আছে। জৈনের মতে, নয়া আয়কর বিলে ধারার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় মনে হচ্ছে যে জটিল বিষয়কে ছোট-ছোট ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। আর অধ্যায়ের সংখ্যা কমে যাওয়ায় অনুমান করা হচ্ছে যে অনাবশ্যক বিষয়গুলিকে ছেঁটে দিয়েছে কেন্দ্র।
৩) ২০২৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে নয়া আয়কর আইন কার্যকর হওয়ার কথা আছে। যেদিন বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে, সেদিন থেকে প্রস্তাবিত আইনের নিয়ম কার্যকর হয়ে যাবে।
৪) নয়া আয়কর বিলের ৬৭ ধারা থেকে ৯১ ধারায় ডিজিটাল সম্পত্তির জন্য স্পষ্ট নিয়ম আছে। আর তার ফলে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ক্রিপ্টোকারেন্সির মতো ডিজিটাল সম্পত্তি নির্দিষ্ট কর কাঠামোর আওতায় থাকবে।
আয়কর রিটার্নের সময়সীমা বৃদ্ধির প্রস্তাব
৫) আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা দু'বছর থেকে বাড়িয়ে চার বছর করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে নয়া আয়কর বিলে। আর তার ফলে আয়কর রিটার্নে কোনও ভুল হলে তা সংশোধনের জন্য করদাতারা আরও বেশি সময় পাবেন। সরকারের মতে, সেই পরিবর্তনের ফলে আয়করের বিধান আরও সহজ হবে।
৬) এখন যে আয়কর আইন আছে, তার ১১ ধারা থেকে ১৩ ধারার আওতায় কয়েকটি ডোনেশন বা দাতব্য কাজের ক্ষেত্রে আয়কর ছাড় পাওয়া যায়। নয়া আয়কর বিলের ৩৩২ ধারা থেকে ৩৫৫ ধারা পর্যন্ত আরও বিস্তারিতভাবে পুরোটা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। করযোগ্য আয়, কোন কোন ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আছে, সেটা বিস্তারিতভাবে জানানো হয়েছে নয়া আয়কর বিলে।