সবকিছু পরিকল্পনা অনুসারে এগোলে, চলতি বছরের (২০২৫) শেষের দিকেই অনুষ্ঠিত হবে বিহার বিধানসভার নির্বাচন। এবার সেই নির্বাচনকেই সামনে রেখে আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা শুরু দিল শাসক জোট এনডিএ। সূত্রের খবর, এর আগে যে যে আসনে জোটের কোনও দল পরপর দু'বার পরাজিত হয়েছে, সেগুলি নিজেদের মধ্যে অদল-বদল করে নেওয়া হবে। এমন পরিস্থিতিতে অনেক আসনেই দেখা যেতে পারে নতুন সমীকরণ!
বিহারের এনডিএ শিবিরে রয়েছে বিজেপি, মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের জনতা দল ইউনাইটেড (জেডিইউ), কেন্দ্রীয় মন্ত্রী চিরাগ পাসওয়ানের এলজেপি (রাম বিলাস), প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জিতন রাম মাঝির হিন্দুস্তান আওয়াম মোর্চা (এইচএএম) এবং রাজ্যসভার সাংসদ উপেন্দ্র কুশওয়াহার রাষ্ট্রীয় লোক মোর্চা (আরএলএম)।
দুই এনডিএ নেতা এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, এবার প্রার্থীদের জেতার সম্ভাবনার ভিত্তিতে আসন বণ্টন করা হবে। প্রার্থী বাছাইয়ের আগে ঠিক করা হবে কোন দল কোন আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। এই ব্যাপারে সব পক্ষের পরামর্শ নেওয়া হবে। কিছু আসন অদলবদল করারও সম্ভাবনা রয়েছে।
বিজেপির এক শীর্ষ নেতার কথায়, 'গত বিধানসভা ভোটের তুলনায় এবার কীভাবে আসনসংখ্যা আরও বাড়ানো যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। শরিকদের মধ্যে আসন অদলবদলের বিকল্পগুলিও বিবেচনা করা হবে - যাতে পুরো জোটের স্ট্রাইক রেট ও আসনসংখ্যা বাড়তে পারে।'
উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনও আসন হয়তো একটা সময় লাগাতাক বিজেপির অধীনে থাকত, কিন্তু গত দু'টি নির্বাচনে সেখানে তাদের পরাজিত হতে হয়েছে, তাহলে ওই আসনটি অন্য কোনও শরিকদলকে দেওয়া যেতে পারে - যাদের সেখানে জয়ের সম্ভাবনা বেশি।
তিনি আরও বলেন, এবার আসন ভাগাভাগির ক্ষেত্রে জয়ের সম্ভাবনা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হবে। অর্থাৎ, কোনও আসন তখনই কোনও দলকে দেওয়া হবে, যখন সেখানে তার প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা অন্যান্য শরিকদলের তুলনায় বেশি হবে।
জেডিইউ-এর এক শীর্ষ নেতার কথায়, জোট বেঁধে লড়াইয়ের এই সিদ্ধান্ত সব দলের শক্তি ঐক্যবদ্ধ করবে। তিনি বলেন, 'এবারের নির্বাচনে প্রথমবার সব জেলায় পৌঁছেছে এনডিএ। গত নির্বাচনে (যখন এলজেপি জেডিইউ-এর বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছিল) একটি সমস্যা হয়েছিল। যার ফলে আমরা অনেক আসন হারিয়েছিলাম। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। জোটের সব শীর্ষ নেতাদের মধ্যে যেমন পারস্পরিক সমন্বয় রয়েছে, তেমনি তৃণমূলস্তর থেকে শুরু করে প্রতিটি পর্যায়েই শরিকদলগুলির কর্মী ও নেতারা ধাপে ধাপে রাস্তা তৈরি করছেন।
আসন সমঝোতার ফর্মুলা নিয়ে জেডিইউ নেতা বলেন, ২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচন এবং ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলই ইঙ্গিত দিচ্ছে, কোন দল কতগুলি আসন দাবি করতে পারে। প্রতিটি দলের নিজস্ব শক্তিশালী এলাকা থাকলেও স্বাভাবিকভাবেই তারা আরও বেশি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চায়। তাই আসন বণ্টনের সময় দলের শক্তির পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বিধানসভা কেন্দ্রে সম্ভাব্য প্রার্থীদের জেতার সম্ভাবনার মতো বিষয়গুলি বিবেচনা করা হবে।
তিনি আরও জানান, আসন ভাগাভাগির সময় জাতিগত সমীকরণও খতিয়ে দেখা হবে। প্রার্থী বাছাই এমনভাবে করা হবে, যাতে কোনও আসনেই জাতিগত সমীকরণ বিঘ্নিত না হয়। ২০২০ সালের নির্বাচনের ধাঁচে জেডিইউ এবং বিজেপির মতো বড় দলগুলি আরও বেশি আসন পাবে। অন্য শরিকদের এর চেয়ে কম আসন দেওয়া হবে।
তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, একটি আসন অন্য শরিকদলের হাতে হস্তান্তর হলেও জাতিগত সমীকরণ বজায় রাখার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা হবে। বিপুল ভোট জোগাড় করতে সক্ষম নন, এমন প্রার্থীকে আসন দিয়ে জাতিগত সমীকরণ বিঘ্নিত করা যাবে না।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের বিহার বিধানসভা নির্বাচনে এনডিএ ২৪৩টি আসনের মধ্যে ১২৫টি আসন জিতেছিল। জেডিইউ ১১৫টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৪৩টি আসনে জিতেছিল। বিজেপি ১১০টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল এবং ৭১ টি আসনে জিতেছিল। সেই সময় মুকেশ সাহনির বিকাশশীল ইনসান পার্টি (ভিআইপি) এনডিএ-তে ছিল। তারা ১১টি আসনের মধ্যে চারটিতে জিতেছিল। চিরাগ পাসওয়ানের এলজেপি (রামবিলাস) তখন এনডিএ-তে ছিল না। তারা ১৩৭টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেও মাত্র একটি আসনে জিতেছিল।