আদতে বাংলাদেশের নাগরিক। কিন্তু, গত ৩৪ বছর ধরে তাঁর বাস ভারতের বাণিজ্যনগরী - মুম্বই। এমনকী, ক'দিন আগে যে মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনের পালা সাঙ্গ হল, সেই প্রক্রিয়ায় ভোটও দিয়েছেন তিনি! তথ্য বলছে, ভারত-ভূমে এটাই তার প্রথম মতদান নয়!
সেই তাঁকেই এবার গ্রেফতার করল মুম্বই পুলিশের কফ প্যারেড থানার অ্য়ান্টি-টেরোরিজম সেল (এটিসি)!
এখনও পর্যন্ত যতটুকু জানা গিয়েছে, তা হল - ধৃত ব্যক্তি আদতে বাংলাদেশের চট্টগ্রামের বাসিন্দা। তাঁর নাম - মোহিন হায়াত বাদশা শেখ ওরফে মহি উদ্দিন। পুলিশের দাবি, মাত্র ১৭ বছর বয়সে ভারতে অনুপ্রবেশ করেছিলেন মোহিন। বর্তমানে তাঁর বয়স - ৫১ বছর।
তবে, আইনত ভারতের নাগরিক না হলেও মোহিনের কাছে 'ভারতীয়' হওয়ার সমস্ত প্রমাণই মজুত রয়েছে। তাঁর কাছে ভারতের আধার কার্ড, প্যান কার্ড রয়েছে। বহুবার তিনি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াত করেছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নাগপাড়া এটিসি-র তরফ থেকে কফ প্য়ারেড এটিসি-র কাছে মোহিনের সম্পর্কে গোপন তথ্য এসেছিল। তার ভিত্তিতেই তাঁকে পাকড়াও করা হয়।
পুলিশের আধিকারিকরা বলছেন, 'মোহিন বেআইনিভাবে ভারতে ঢুকেছিলেন। তাঁর কাছে ভারতের ঘোরার মতো উপযুক্ত নথিও ছিল না।'
পুলিশ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, আধার ও প্যান ছাড়াও মোহিনের কাছে ভোটার কার্ড এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স রয়েছে। পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, 'ওই বাংলাদেশি ব্যক্তি লোকসভা ও বিধানসভার নির্বাচনে ভোট পর্যন্ত দিয়েছেন!'
ভারতীয় বিভিন্ন নথি ছাড়াও মোহিনের কাছে বাংলাদেশি পরিচয়পত্রও রয়েছে। তাঁর কাছে একটি বাংলাদেশি আইডি কার্ড এবং বার্থ সার্টিফিকেট আছে। তবে, মোহিনের কোনও ভারতীয় পাসপোর্ট নেই।
পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে, ১৯৯০ সালে ভারতে ঢুকেছিলেন মোহিন। তখন থেকেই তিনি মুম্বরা, কুরলা, গোবান্দি এবং পারেল এলাকায় বাচ্চাদের উর্দু এবং কোরান পড়িয়ে চলেছেন তিনি।
কফ প্যারেড এলাকার আম্বেদকর নগরে মোহিনের একটি ঝুপড়ি ঘর রয়েছে। আগে হোটেল সুপ্রিমে সাফাই কর্মীর কাজ করতেন তিনি। সেখানেও হোটেল চত্বরের মধ্যে বাচ্চাদের পড়াতেন।
পুলিশের কাছে জেরায় মোহিন স্বীকার করেছেন, বাংলাদেশে তাঁর পরিবার রয়েছে। তিনি তাঁদের এক বন্ধুর মাধ্যমে টাকা পাঠান। সেই বন্ধুকে ভারতীয় মুদ্রায় অর্থ পাঠান মোহিন। আর, তাঁর সেই বন্ধু, সেই অর্থ বাংলাদেশি টাকায় বিনিময় করে তাঁর পরিবারের সদস্যদের পাঠিয়ে দেন।
শেষবার ২০২১ সালে বাংলাদেশে গিয়েছিলেন মোহিন। তিনি বিমানে কলকাতা পর্যন্ত যান। তারপর সেখান থেকে দালালদের টাকা দিয়ে গোপনে সীমান্ত পেরিয়ে চট্টগ্রাম পৌঁছে যান। এত দিন এভাবেই চলছিল। কিন্তু, এবার মোহিনকে পাকড়াও করেছে মুম্বই পুলিশ। আদালত তাঁকে আগামী ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে।