অবশেষে ২২ দিন পর কেরলের তিরুবনন্তপুরম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরল আটকে পড়া ব্রিটিশ রয়্যাল নেভির একটি এফ-৩৫বি লাইটনিং টু যুদ্ধবিমান।গত ১৪ জুন থেকে তিরুঅনন্তপুরম বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে ছিল এই যুদ্ধবিমানটি। মার্কিন লকহিড মার্টিন নির্মিত এই পঞ্চম প্রজন্মের স্টেলথ ফাইটারটির দাম ১১০ মিলিয়ন ডলার, ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৯২০ কোটি টাকারও বেশি।
জানা গেছে, তিন সপ্তাহ ধরে কেরলে আটকে থাকা ব্রিটেনের এফ-৩৫বি যুদ্ধবিমানকে পরীক্ষা করার জন্য রবিবার ব্রিটিশ রয়্যাল এয়ার ফোর্সের এ৪০০এম এয়ারবাসে ২৪ সদস্যের একটি দল তিরুঅনন্তপুরমে পৌঁছেছে। এই দলে ব্রিটিশ রয়্যাল এয়ার ফোর্সের ১৪ জন কারিগরি বিশেষজ্ঞ এবং ১০ জন ক্রু সদস্য রয়েছেন। ব্রিটিশ দলটি আটকে পড়া যুদ্ধবিমানকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে এবং সেটি ভারতেই মেরামত করা হবে নাকি ব্রিটেনে ফেরত পাঠাতে হবে, তা খতিয়ে দেখবে।অন্যদিকে একটি ভিডিতে দেখা গেছে, আটকে পড়া যুদ্ধবিমানটিকে তার নির্ধারিত জায়গা থেকে হ্যাঙ্গারের দিকে নিয়ে যেতে দেখা গিয়েছে।এর আগে বিমানটি বিমানবন্দরের চার নম্বরে বেস রাখা ছিল।
ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা বলছেন, যুদ্ধবিমানটি মেরামত হোক কিংবা ফিরিয়ে নেওয়া হোক-সবক্ষেত্রে দেশের নিরাপত্তার স্বার্থেই সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।ব্রিটিশ হাই কমিশনের একজন মুখপাত্র ভারতে ইঞ্জিনিয়ারিং দলের আসার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, জরুরি অবতরণ করা ব্রিটেনের এফ-৩৫বি বিমানটি মেরামতের জন্য ইঞ্জিনিয়ারিং দল তিরুবনন্তপুরম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মোতায়েন করা হয়েছে।' এফ-৩৫বি হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল যুদ্ধবিমানগুলির মধ্যে একটি। এর উন্নয়নেও খরচ হয়েছে বিপুল অর্থ। এই মডেলের একটি যুদ্ধবিমান প্রথম ২০১৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা থেকে সি-১৭ বিমানে করে ইউটাহতে নিয়ে যাওয়া হয়। সে সময়ও দেড় লাখ ডলার ব্যয়ে দীর্ঘ চার বছর ধরে পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি চলেছিল।এই ধরনের গোপন প্রযুক্তি যাতে কোন ভাবেই ফাঁস না হয়, সে জন্য প্রতিটি স্ক্রু পর্যন্ত নির্দিষ্ট নিরাপত্তা কোডে তালিকাভুক্ত করা হয়। অপসারণ, পরিবহন এবং নজরদারির প্রতিটি ধাপই নথিভুক্ত করা হচ্ছে, যাতে কোন ধরনের সামরিক গোপনীয়তা ঝুঁকিতে না পড়ে।
ঘটনার সূত্রপাত
ব্রিটিশ নৌবাহিনীর বিমানবাহী রণতরী এইচএমএস প্রিন্স অফ ওয়েলস থেকে ওড়া এই এফ-৩৫বি যুদ্ধবিমানটি ভারত মহাসাগরে যৌথ মহড়ায় অংশ নিচ্ছিল। বিমানটি কেরল উপকূল থেকে আনুমানিক ১০০ নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থানরত ক্যারিয়ার থেকে রওনা দিয়েছিল। রাডার ডেটা ও বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, বিমানটি স্কোয়াক ৭৭০০ জরুরি সংকেত পাঠায়, যার অর্থ হল গুরুতর বিপদ। এরপরই তড়িঘড়ি তিরুঅনন্তপুরমে জরুরি অবতরণে অনুমতি দেওয়া হয়।প্রথমে জানা গিয়েছিল, জ্বালানি কমে যাওয়ায় জরুরি অবতরণ হয়েছে। পরে অবশ্য ব্রিটিশ প্রযুক্তিবিদরা জানান, বিমানের হাইড্রলিক সিস্টেমে ত্রুটি ধরা পড়েছে, যার জেরে তা আর টেক-অফ করতে পারছে না।
ভারতীয় বায়ুসেনা জরুরি অবতরণের পর পরিকাঠামোগত সবরকম সহায়তা করে, এমনকি বিমানে জ্বালানি ভরাও হয়।ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষও ভারতকে ধন্যবাদ জানিয়েছিল। কিন্তু ব্রিটিশ রক্ষণাবেক্ষণ দল সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। যুদ্ধবিমানটি লকহিড মার্টিন নির্মিত এবং এটি সংক্ষিপ্ত রানওয়ে থেকে উড়তে ও উল্লম্বভাবে অবতরণ করতে পারে, যাকে স্টোভল প্রযুক্তি বলে। এর স্টেলথ ক্ষমতা রয়েছে, অর্থাৎ রাডারে ধরা পড়ে না সহজে। এই বিমান ন্যাটো-ভুক্ত অনেক দেশ, যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ইতালি ও নেদারল্যান্ডস ব্যবহার করে।