একটানা বৃষ্টি, বন্যা, ভূমিধসে বিপর্যস্ত মেঘালয়ের গারো পাহাড়ি অঞ্চল। সেখানকার পরিস্থিতি ক্রমশ আরও খারাপ হচ্ছে। রবিবার আরও পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। ফলে, সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ১৫।
শেষ যে পাঁচজনের মৃত্যুর তথ্য হাতে এসেছে, সেই তালিকায় রয়েছেন, এক বাবা ও তাঁর ছেলে, এক মা ও তাঁর মেয়ে এবং আরও অন্য এক ব্যক্তি - যিনি উপড়ে যাওয়া গাছের নীচে চাপা পড়ে মারা যান।
উল্লেখ্য, মুষলধারে লাগাতার বৃষ্টি, ক্রমশ খারাপ হওয়া বন্যা পরিস্থিতি এবং তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলা ভূমিধস, এর জেরেই গারো পাহাড়ি অঞ্চল বর্তমানে কার্যত 'মৃত্যু উপত্যকা'য় পরিণত হয়েছে।
উপরোক্ত যে পাঁচজনের মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে প্রথম ঘটনাটি ঘটে গত শুক্রবার বিকেলে। ডিমাপাড়া এলাকায় জলে ডুবে যাওয়া একটি রাস্তা গাড়িতে করে পেরোনোর সময়েই জমা জলের তোড়ে গাড়ি-সহ ভেসে যান এক ব্যক্তি ও তাঁর নাবালক ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাণ হারানো ওই হতভাগ্য পিতার নাম বিজয় এস সাংমা। ৪৪ বছরের বিজয় একটি স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। ওই একই ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে তাঁর ১৩ বছরের ছেলে উইয়ান চিগাডো আর মারাকের। স্কুল থেকে নিজেদের গাড়িতে বাড়ি ফেরার পথে এই ভয়াবহ ঘটনার শিকার হন বিজয়রা।
এরপর শনিবার দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িটি উদ্ধার করেন রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যরা। কিন্তু, বাবা-ছেলের দেহ উদ্ধার হয় রবিবার, ডালু এলাকার অন্তর্গত সোনাংরে নামক গ্রামের নিকটবর্তী একটি নিচু এলাকা থেকে। উল্লেখ্য, বিজয়রা আদতে তুরা অঞ্চলের রংখন সংগিতাল এলাকার বাসিন্দা ছিলেন।
অন্যদিকে, শনিবার রাতে প্রবল বৃষ্টির পর পূর্ব গারো পাহাড় এলাকায় ভূমিধসে প্রাণ যায় এক মা ও তাঁর মেয়ের। প্রয়াত আমেরিন কে মারাক এবং তাঁর মেয়ে মানাসে কে মারাক গংডপ গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। তাঁরা তাঁদের বাড়িতেই নিজেদের ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন।
সেই সময়েই পিছনের পাহাড়ের একাংশ থেকে প্রচুর পরিমাণে মাটি তাঁদের বাড়ির উপর ধসে পড়ে। রবিবার সকালে সেই ধ্বংসস্তূপ সরান প্রতিবেশীরা। ধ্বংসস্তূপের নীচ থেকেই তাঁরাই উদ্ধার করেন মা ও মেয়ের নিথর দেহ।
শনিবার গভীর রাতে আরও একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে পূর্ব গারো পাহাড়ের সোংসাক সংরক্ষিত বনভূমি এলাকায়। নিজের গাড়ি চালিয়ে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন থেনসেং আর মারাক নামে এক ব্যক্তি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন দুই আত্মীয়া।
সেই সময় বিরাট আকারের একটি বৃক্ষ শিকড় সমেত উপড়ে যায় এবং থেনসেংয়ের গাড়ির উপর হুড়মুড়িয়ে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। গাড়িতে সওয়ার অন্য দুই মহিলাও গুরুতর জখম হন। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে, দক্ষিণ গারো পাহাড়ে যে উদ্ধার কাজ ও তল্লাশি অভিযান চলছে, তার ফলে তিনটি দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। রাজ্য়ের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কমিশনার ও সচিব সঞ্জয় গোয়েল জানিয়েছেন, প্রশাসন সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সমস্ত দফতর ও বিভাগের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে।