মহারাষ্ট্র সরকারের এক চুক্তিভিত্তিক কর্মী। মাসিক বেতন মাত্র ১৩,০০০ টাকা। অথচ, সেই ব্যক্তিই কিনা তাঁর প্রেমিকাকে উপহার দেন আস্ত একটি বিএমডাব্লিউ গাড়ি এবং একটি বিলাসবহুল ফোর বিএইচকে ফ্ল্যাট! এখানেই শেষ নয়। সূত্রের দাবি, তিনি সম্প্রতি যে চশমাটি পরতে শুরু করেছিলেন, তার মধ্য়ে ছিল হীরের কারুকাজ!
আর এসব দেখেই চোখ কপালে ওঠে সরকারি দফতরের ওই চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীর আশপাশে থাকা মানুষজনের। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হতেই সামনে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা যায়, এলাহী জীবনযাপনের অর্থ সোজা পথে অর্জন করেননি ওই ব্যক্তি। সেই টাকা এসেছে সরকারি কার্যালয়ে চুরি করে! যার অঙ্ক ২১ কোটিরও বেশি!
নিউজ এইটিন-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, এই ঘটনার আসল কীর্তিমান হলেন - হর্ষ কুমার ক্ষীরসাগর নামে এক ব্যক্তি। তিনি তাঁর কয়েকজন শাগরেদের সাহায্যে সরকারি কার্যালয় থেকে এই বিপুল পরিমাণ টাকা চুরি করেন। যার মোট অঙ্ক - ২১ কোটি ৫৯ লক্ষ ৩৮ হাজার।
পুলিশের তদন্তে সামনে এসেছে, প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ চুরি করেছেন ওই ব্যক্তি। ছত্রপতি সম্ভাজিনগরের স্পোর্টস কমপ্লেক্স বিষয়ক প্রশাসনিক বিভাগ থেকে এই টাকা চুরি করা হয়েছে। এবং তা করা হয়েছে ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিংয়ের মাধ্যমে।
কিন্তু, এই বিপুল পরিমাণ টাকা হাতে পেতেই মাথা ঘুরে যায় হর্ষের এক শাগরেদের। অভিযোগ, তিনি ওই চুরির টাকা দিয়েই একটি বিএমডাব্লিউ গাড়ি এবং একটি বিএমডাব্লিউ বাইক কেনেন! পাশাপাশি, বিমানবন্দরের কাছেই এক ফোর বিএইচকে ফ্ল্যাটও কেনেন ওই যুবক। সূত্রের দাবি, এই গাড়ি ও ফ্ল্যাট তিনি বান্ধবীকে উপহার দেওয়ার জন্য কিনেছিলেন।
এখানেই শেষ নয়। এরপর ওই ব্যক্তি শহরের একটি নামজাদা গয়নার দোকানের যান। এবং সেখান থেকে হীরে বসানো একটি চশমা তৈরি করান! যা দেখে আশপাশের সকলেরই চোখ কপালে উঠে যায়।
তদন্তে আরও জানা গিয়েছে, এই চুরিতে আরও এক ব্যক্তি জড়িত রয়েছেন। যাঁর স্ত্রীও সরকারি দফতরে চুক্তিভিত্তিক কর্মী। সম্প্রতি সেই ব্যক্তিও একটি এসইউভি কেনেন। যার দাম ৩৫ লক্ষ টাকা। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, ওই এসইউভি চড়েই নাকি চম্পট দিয়েছে এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত হর্ষ কুমার ক্ষীরসাগর।
জানা গিয়েছে, এই চুরি করার জন্য স্পোর্টস কমপ্লেক্সের নামেই ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কে একটি অ্য়াকাউন্ট খুলেছিলেন হর্ষ। যাতে টাকা সেই অ্য়াকাউন্টে ট্রান্সফার করার সময় প্রথমেই কারও সন্দেহ না হয়।
কিন্তু, এভাবে টাকা ট্রান্সফার করার জন্য ডেপুটি স্পোর্টস ডিরেক্টরের স্বাক্ষর জরুরি। যদিও সূত্রের দাবি, এক্ষেত্রে সেই সংক্রান্ত সমস্ত জাল করেছিলেন হর্ষ এবং তাঁর আরও দুই সঙ্গী যশোদা শেট্টি এবং তাঁর স্বামী বিকে জীবন। ব্যাঙ্কে সেই জাল নথিই জমা দিয়েছিলেন তাঁরা।
বলা হচ্ছে, এই জাল নথির সাহায্যেই সংশ্লিষ্ট অ্য়াকাউন্টের সঙ্গে ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিং পরিষেবা যুক্ত করা হয়। আর তারপরই শুরু হয় টাকা চুরি। সেই ঘটনার প্রায় ছ'মাস পর এই চুরি ধরে ফেলেন সংশ্লিষ্ট ডেপুটি ডিরেক্টর। তবে, এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত পুলিশের তরফে কোনও বিবৃতি সামনে আসেনি।