এবার বাংলাদেশে বদলার রাজনীতি করছে মহাম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার। সম্প্রতি এক অধ্যাদেশে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ শব্দটির সংজ্ঞা নতুন করে নির্ধারণ করে বাংলাদেশ সরকার। এই পরিবর্তনের ফলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-সহ মুক্তিযুদ্ধকালীন চার জাতীয় নেতার মুক্তিযোদ্ধার মর্যাদা বাতিল করা হয়েছে, এমন একটি খবর প্রকাশ্যে এসেছিল।আর যা নিয়ে বিতর্ক শুরু হতেই তড়িঘড়ি ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুস।
সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান-সহ জাতীয় নেতাদের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল এবং তাদের পরিচয় ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে নির্ধারণের বিষয়টি সঠিক নয়। সাফাইয়ের সুরে উপদেষ্টা জানান, অধ্যাদেশে মুজিবনগর সরকারকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-সহ মুজিবনগর সরকারের অন্যদের মুক্তিযোদ্ধার মর্যাদা বাতিলের বিষয়ে যা বলা হচ্ছে, তা সঠিক নয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল গঠিত মুজিবনগর সরকারের সদস্যরা ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে বিবেচিত হবেন। অন্যদিকে মুজিবনগর সরকার গঠনে যাঁরা সহযোগিতা করেছেন, তাঁরা হবেন ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’।
আরও পড়ুন-আগাম যুদ্ধের প্রস্তুতি! কাশ্মীর সীমান্তে গ্রামবাসীদের অস্ত্রের প্রশিক্ষণ বিএসএফ-র
এর আগে মঙ্গলবার ‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করা হয়। অধ্যাদেশ অনুযায়ী, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী, এএইচএম কামারুজ্জামান-সহ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী ৪০-র বেশি রাজনীতিবিদের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল করা হয়েছে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়।সংশ্লিষ্ট খসড়ায় বলা হয়, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা কেবল তাঁরাই থাকবেন, যাঁরা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন। রাজনীতিবিদরা সরাসরি যুদ্ধ করেননি, তাই তাঁদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিল করে নতুন পরিচয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে কোনও মর্যাদা কমানো হয়নি, বরং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে আরও সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে।’
এরপরেই বাংলাদেশজুড়ে শুরু হয় বিতর্ক। এই আবহে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রকের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম সংবাদমাধ্যমকে জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-সহ সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, মো. মনসুর আলি ও এএইচএম কামরুজ্জামানের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি থাকবে। তাঁরা ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে বিবেচিত হবেন।তাঁর বক্তব্য, 'মুক্তিযোদ্ধা সংসদ পুনর্গঠন হচ্ছে। যাচাই বাছাইতে যখন যাবো তখন ইনডেমনিটি দেয়ার ইচ্ছে আছে। যারা মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভুক্ত হয়েছেন তারা যেন চলে যান।' উপদেষ্টা আরও বলেন, 'ভুয়ো মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক পরিসংখ্যান না নিয়েই সংবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে। কিন্তু আমরা সে ভাবে যেতে চাই না। আমরা নিয়ম নিষ্ঠ আইন বিধি অনুসারে যাচাই বাছাই করে বলবো। সেভাবেই কার্যপদ্ধতি ঠিক করছি।'
আরও পড়ুন-আগাম যুদ্ধের প্রস্তুতি! কাশ্মীর সীমান্তে গ্রামবাসীদের অস্ত্রের প্রশিক্ষণ বিএসএফ-র
উল্লেখ্য, নতুন বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধা কারা, সেই সংজ্ঞাই বদলে ফেলা হচ্ছে মহাম্মদ ইউনুসের শাসনকালে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার চক্রান্ত চলছে। মুজিব মুছতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি হলের নাম রাখা হয়েছে ফজলুল কাদের চৌধুরীর নামে এক কুখ্যাত গণহত্যাকারী রাজাকারের নামে। ঢাকার রাস্তায় ঘুরতে দেখা যাচ্ছে হিজবুত তাহরিরের জঙ্গিদের। বাংলাদেশে আগ্রাসন দেখাচ্ছে আনসারুল্লা বাংলা টিম।