লাক্ষাদ্বীপ দ্বীপপুঞ্জের কালপেনি দ্বীপের কাছে ডুবুরিরা এমন কিছু খুঁজে পেয়েছেন যা সবাইকে অবাক করেছে। সমুদ্রের গভীর থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি যুদ্ধজাহাজের ধ্বংসাবশেষ। গবেষকদের ধারণা কামান দিয়ে সজ্জিত এই জাহাজটি সম্ভবত ইউরোপীয় শক্তি যেমন পর্তুগিজ, ডাচ বা ব্রিটিশদের হতে। মনে করা হচ্ছে, জাহাজটি ১৭ বা ১৮ শতকের। মধ্যপ্রাচ্য এবং শ্রীলঙ্কাকে সংযুক্তকারী প্রাচীন সমুদ্র পথের উপর আধিপত্য বিস্তারের যুদ্ধের সময় এটি ডুবে গিয়েছিল বলে মনে করা হচ্ছে। শনিবার সকালে সমুদ্র গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ডুবুরিদের একটি দল এই যুদ্ধজাহাজের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পায়। এনিয়ে ব্যাপক কৌতূহল তৈরি হয়েছে ঐতিহাসিক এবং গবেষকদের মধ্যে।
আরও পড়ুন: থরথর করে কাঁপবে শত্রুরা, ১৫ জানুয়ারি তিন যুদ্ধ জাহাজ নামাবে নেভি
গবেষকদের মতে, এই অঞ্চলে এটিই হল এই ধরনের প্রথম আবিষ্কার। এতে যেভাবে কামান সজ্জিত রয়েছে তাতে সহজেই অনুমান করা যাচ্ছে এটি হল একটি যুদ্ধজাহাজ। জানা যাচ্ছে, এই জাহাজটি সম্ভবত লোহা দিয়ে বা লোহা এবং কাঠের সংমিশ্রণে তৈরি। এই সময় এই ধরনের উপাদান দিয়ে জাহাজ তৈরি করা হতো। সামুদ্রিক অনুসন্ধানকারী দলে থাকা মেরিন লাইফ গবেষক সত্যজিৎ মানে বলেন, ‘যখন আমরা কালপেনির পশ্চিম দিকে ধ্বংসাবশেষ দেখতে পেয়েছিলাম, তখন আমরা জানতাম না যে এটি একটি যুদ্ধজাহাজ। যখন আমরা একটি কামান এবং একটি নোঙ্গর খুঁজে পাই, তখন আমরা বুঝতে পেরেছিলাম যে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধান হতে পারে।
স্থানীয় ডাইভিং গ্রুপ ব্র্যান্ডিভসের ডুবুরিদের দলটির নেতৃত্ব দেন সত্যজিৎ মানে। তার দলে ছিলেন নাসরুল্লাহ ও সাজুদিন। তিনি বলেন, স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। তিনি জানান, জাহাজের আরও ধ্বংসাবশেষ আরব সাগরের গভীরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে পারে বলে মনে হচ্ছে। জাহাজের আকার, কামান এবং ধাতু বিচার করলে, এটি ইউরোপীয় যুদ্ধজাহাজ হতে পারে বলে তিনি জানিয়েছেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের একজন বিজ্ঞানী এবং ডুবুরি সংস্থার পরামর্শদাতা ইদ্রিস বাবু জানান, যে এই অঞ্চলে এর আগে এমন জাহাজের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা হয়নি। জাহাজটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৫০ থেকে ৬০ মিটার পর্যন্ত হতে পারে।
সত্যজিৎ মানে জানান, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭ বা ১৮ শতকে এই পথে লোহার জাহাজ ব্যবহার শুরু করে। এটি সম্পর্কে আরও জানতে জলের নিচে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা প্রয়োজন। ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের এই এলাকাটিকে সংরক্ষণ করতে হবে। তিনি আরও জানান, ব্রিটিশরা লোহার জাহাজ ব্যবহার করলে, পর্তুগিজরা লোহা ও কাঠের তৈরি জাহাজ ব্যবহার করত সেই সময়। জাহাজের ধ্বংসাবশেষে প্রবাল এবং মরিচা ভর্তি থাকার কারণে জাহাজটি সম্পূর্ণ লোহার তৈরি নাকি কাঠের উপাদান ছিল তা নির্ধারণ করা এখনও পুরোপুরি সম্ভব হয়নি। জাহাজে যেভাবে প্রবাল জমা হয়েছে তা থেকে বোঝা যায় যে এটি কয়েক শতাব্দী ধরে সমুদ্রে ডুবে আছে।