পুলিশের এনকাউন্টারে মৃত্যু হল হায়দরাবাদে পশুচিকিৎসককে গণধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় চার অভিযুক্তদের। পুলিশের দাবি, ঘটনার পুনর্নির্মাণ করতে অভিযুক্তদের ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে পুলিশের অস্ত্র কে়ড়ে পালানোর চেষ্টা করে তারা। পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। আত্মরক্ষায় পালটা গুলি চালায় পুলিশ। তাতেই মৃত্যু হয় চারজনের।
সাইবারাবাদ পুলিশ কমিশনারেটের এক অফিসার জানান, ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ শাদনগরে চাতানপল্লিতে বেঙ্গালুরু-হায়দরাবাদ জাতীয় সড়কের একটি ব্রিজের তলায় ঘটনাটি ঘটে। গত ২৭ নভেম্বর রাতে ওই তরুণীকে ধর্ষণ করেছিল অভিযুক্তরা ও পরদিন সকালে নিগৃহীতার পোড়া দেহ উদ্ধার হয়েছিল।
পরে সাংবাদিক বৈঠকে সাইবারাবাদের পুলিশ কমিশনার ভি সি সজ্জনার জানান, অভিযুক্ত মহম্মদ আরিফ, নবীন, শিবা ও চেন্নাকেশাভুলুকে আসেন ১০ জন পুলিশকর্মী। পুলিশ কমিশনার বলেন, "তদন্তের জন্য অভিযুক্তদের ঘটনাস্থলে নিয়ে এসেছিল পুলিশ। সেই সময় লাঠি দিয়ে পুলিশের উপর হামলা চালায় তারা। আমাদের থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়। পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালাতে থাকে। পুলিশ তাদের আত্মসমর্পণ করতে বলে। কিন্তু, তারা গুলি চালিয়ে যেতে থাকে। পালটা আমি গুলি চালালে তারা নিহত হয়। আহত হয়েছেন দুই পুলিশকর্মীও। তাঁদের স্থানীয় হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।" দুটি অস্ত্রও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে জানান কমিশনার।ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয়েছে ওই তরুণীর মোবাইল। কমিশনার বলেন,আমাদের সন্দেহ, অভিযুক্তরা কর্নাটকেও বিভিন্ন ঘটনায় জড়িত ছিল। তদন্ত চলছে।
গত ২৮ নভেম্বর শামশাবাদের আউটার রিং রোডের আন্ডারপাসের ওই তরুণীর দগ্ধ দেহ উদ্ধার করা গিয়েছিল। তদন্তে জানা যায়,আগের রাতে শামশাবাদ টোল প্লাজার কাছে ওই তরুণীকে ধর্ষণ করে খুন করে ওই চার অভিযুক্ত। পরে ওই ব্রিজের কাছে তাঁর দেহে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ঘটনার ৩৬ ঘণ্টা পর চারজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এই নৃশংস ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই দেশ জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাতে থাকেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছিল জনরোষ। এরইমধ্যে আজ সকালে পুলিশের এনকাউন্টারে মৃত্যু হয় চার অভিযুক্তদের। ঘটনাস্থানে পৌঁছান পুলিশের সিনিয়র অফিসাররা। ঘিরে রাখা হয় এলাকাটি।
এনকাউন্টারের জন্য বিভিন্ন মহল থেকে প্রশংসিত হয় পুলিশযে পুলিশ দিনকয়েক আগেই সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল, তারাই আজ বীরের সম্মান পায়। তারপর পুলিশ ও সরকারকে কৃতজ্ঞতা জানান ওই তরুণীর বাবা। তিনি বলেন, "মেয়ের মৃত্যুর পর ১০ দিন কেটে গেছে। (এনকাউন্টারের জন্য) আমি পুলিশ এবং সরকারকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমার মেয়ের আত্মা নিশ্চয়ই এখন শান্তিতে আছে।"
যেখানে এনকাউন্টার করা হয়েছে সেখানে জড়ো হন স্থানীয়রা। ডিসিপি জিন্দাবাদ স্লোগান দিতে থাকেন তাঁরা। এমনকী পুলিশের উপর গোলাপের পাপড়ি বর্ষণ করা হয়। ওই তরুণীর প্রতিবেশীরা পুলিশকে মিষ্টিমুখ করিয়ে দেন। পুলিশকর্মীদের হাতে মহিলারা রাখি বেঁধে দেন। রীতিমতো কাঁধে তুলে পুলিশকে নিয়ে আনন্দে মাতেন স্থানীয়রা।
যদিও এনকাউন্টার নিয়ে পুলিশের় বিরুদ্ধে সরব হয়েছে একটি মহল। তাদের বক্তব্য, পুলিশ তো অভিযুক্তদের পায়ে গুলি করতে পারত। আইনেই তো বলা হয়েছে, তাদের কাজ তদন্ত করার, বিচারের দায়িত্ব আদালতের। ইতিমধ্যে একটি বিশেষ দল গঠন করে তদন্তের জন্য পাঠিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। তাদের দ্রুত রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদিও সাইবারাবাদের পুলিশ কমিশনারের দাবি, "আমি শুধু বলতে পারি, আইন নিজের দায়িত্ব পালন করেছে।"