অনাথ আশ্রমেই এসে পড়েছিলেন মার্টেনস। বাবা মায়ের কোল থেকে হারিয়ে গিয়েছিলেন মাত্র তিন বছর বয়সে। বয়স তাঁর তখন মাত্র ৪, শিশুটির দিকে চোখ পড়েছিল এক ডাচ দম্পতি। আদর করে বাড়ি নিয়ে এসেছিলেন একরত্তি মার্টেনসকে। তিনি এখন একজন পিএইচডি স্নাতক। একটু বড় হওয়ার পরই খুঁজতে শুরু করেছিলেন আপনজনদের। কেটে গিয়েছিল ১২ বছর। অবশেষে তাঁর দীর্ঘ অনুসন্ধানের সফল হয়েছে। নিজের জন্মদাতা পিতামাতাকে খুঁজে পেয়েছেন মার্টেনস। এই চিনা ব্যক্তির জার্নি, নেটিজেনদের মনকে স্পর্শ করেছে।
কাহিনি নয়, যেন সিনেমা
১৯৯৪ সাল নাগাদ, তিন বছর বয়সে, পূর্ব চিনের জিয়াংসু প্রদেশে বাবা-মায়ের বাড়ি থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম সিচুয়ান প্রদেশে মায়ের বাড়ি বেড়াতে যাওয়ার সময় হারিয়ে গিয়েছিলেন গৌমিং মার্টেনস। স্থানীয় ব্যক্তিরা তাঁকে অনাথ আশ্রমে দিয়ে এসেছিলেন। এরপর ১৯৯৬ সালে, এম ডাচ দম্পতি জোজেফ এবং মারিয়া মার্টেনস দত্তক নিয়েছিলেন ছেলেটিকে। অনাথ আশ্রমের দেওয়া নাম অনুসারেই ডাচ দম্পতি তাঁর নাম রেখেছিলেন গৌমিং। এরপর, ২০০৭ সালে গৌমিং নিজের পরিবারকে খোঁজার জন্য বেরিয়ে পড়েছিলেন। জন্মদাতা বাবা মাকে খোঁজার জন্য, তাঁর এই জার্নিতে সঙ্গ দিয়েছিলেন, দত্তক বাবা মা।
ততদিনে উঠে গিয়েছিল অনাথ আশ্রম। তবুও হাল ছাড়েননি মার্টেনস। অনুসন্ধান চালিয়ে গিয়েছিলেন। এরই মাঝে, নিজের পড়াশোনা শেষ করেছিলেন, ম্যান্ডারিন শিখতে পাঁচ বছর কাটিয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় পড়াকালীন চিনে কিছু কাজও করেছিলেন। এরপর ২০১২ সালে, তিনি নিজেকে বাওবিহুইজিয়া (বেবি কাম হোম) এর সঙ্গে কাজ শুরু করেছিলেন। এটি একটি স্বেচ্ছাসেবক অপারেশন, যা ব্যক্তিদের হারানো পরিবারকে খুঁজে পেতে সহায়তা করত। মার্টেনসও স্বেচ্ছাসেবকদের সাহায্যে তাঁর জন্মদাতা পিতামাতার খোঁজ করছিলেন৷ গত বছর, তিনি অবশেষে সুসংবাদ পেয়েছিলেন। মিঃ মার্টেনসের ডিএনএ তাঁর জন্মদাতা মা ওয়েন জুরং এর সঙ্গে মিলে গিয়েছিল। দারুণ বিষয় হল, মার্টেনস-এর মতন তাঁর জন্মদাতা বাবা-মা কখনওই গাও ইয়াং নামের শিশুটির খোঁজ বন্ধ করেননি। ওয়েন ছেলেকে হারিয়ে মানসিক ব্যাধিতে ভুগছিলেন। কিন্তু এত বছর পর ছেলেকে পেয়ে তিনি এখন সুস্থ। জানা গিয়েছে, মার্টেনস-র ডাকনাম ইয়াংইয়াং। দুর্ভাগ্যের বিষয় হল, মিঃ মার্টেনসের দত্তক মা তাঁদের কাছে সুসংবাদ পৌঁছানোর কিছুক্ষণ আগেই মারা গিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: (Breast cancer: ক্রমশ বেড়ে চলেছে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি, কীভাবে সচেতন থাকবেন আপনি)
উল্লেখ্য, মিস্টার মার্টেনস নেদারল্যান্ডসের লিডেন ইউনিভার্সিটি থেকে ডিগ্রি এবং কানাডার ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটি থেকে ভাষাবিজ্ঞানে পিএইচডি করেছেন। তিনি এখন কানাডায় এআই স্পিচ রিকগনিশন বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করছেন।
গল্পের আসল ট্রাজেডি মার্টেনস-র হারিয়ে যাওয়া থেকে শুরু হয়েছিল
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট জানিয়েছে যে মিস্টার মার্টেনসের জন্মদাতা তাঁর স্ত্রী ওয়েনকে একটি রেলস্টেশন থেকে হারিয়ে ফেলেছিলেন। তখন বাবার কোলে ছিলেন ছোট্ট ছেলেটি। এরপর বাবা মাকে খুঁজতে গিয়ে এক দল গুন্ডার কবলে পড়েছিলেন। তখনই হারিয়ে গিয়েছিলেন গাও ইয়াং ওরফে মার্টেনস। মিডিয়া আউটলেট জানিয়েছে যে গাও সিনিয়র সিচুয়ান থেকে জিয়াংসু প্রদেশে ১,৭০০ কিলোমিটার দূরে হেঁটে গিয়ে ছেলেকে খুঁজেছিলেন মরিয়া হয়ে, খুঁজে পাননি। শেষ জীবনটা খাবারের জন্য ভিক্ষা করেছিলেন তিনি। এরপর ২০০৯ সালে মারা গিয়েছিলেন।