বিভিন্ন অসুখে রোগীদের ডাবের জল খেতে বলা হয়। এ ছাড়া এই পানীয় যে ভীষণ অনার্জি বাড়ায় তা বোধহয় কারও কাছেই অজানা নয়। ডাবের জলে থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান স্বাস্থ্য ভালো রাখতে অত্যন্ত সাহায্য করে। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে আলসারেটিভ কোলাইটিসে ডাবের জল নিয়মিত পান করলে রোগীরা অনেক উপকার পায়।
আলসারেটিভ কোলাইটিস, একটি পেটের রোগ, যা সারা জীবন রোগীদের কাছে কষ্টকর। তবে এইমসে পরিচালিত একটি ক্লিনিকাল পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে ডাবের জল এর চিকিৎসায় সহায়ক। ওষুধের পাশাপাশি রোগীকে প্রতিদিন ডাবের জল দিলে তা স্বস্তি দিতে পারে। এইমসের এই গবেষণা সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ইউএস জার্নাল অফ ক্লিনিক্যাল গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি অ্যান্ড হেপাটোলজিতে।
আমেরিকার ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল জার্নালও এই গবেষণাকে গুরুত্ব দিয়েছে। এইমস ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর) এর সহযোগিতায় আলসারেটিভ কোলাইটিসের মাঝারি থেকে গুরুতর এবং হালকা লক্ষণযুক্ত রোগীদের মধ্যে এটি পরীক্ষা করার জন্য সহযোগিতা করেছে। ১২১ জন রোগীকে দুই শ্রেণিতে ভাগ করে এই ট্রায়াল করা হয়।
যার মধ্যে ৫৪ শতাংশ পুরুষ ও ৪৬ শতাংশ নারী রোগী অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। রোগীদের গড় বয়স ছিল ৩৭ বছর। তিনি দুই থেকে সাড়ে সাত বছর ধরে আলসারেটিভ কোলাইটিসের সাথে লড়াই করছিলেন।
এইমসের গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর বিনীত আহুজা জানিয়েছেন, এই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে অর্ধেক রোগীকে আট সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ৪০০ মিলিলিটার ডাবের জল দেওয়া হয়। দ্বিতীয় ক্যাটাগরির রোগীদের ওষুধের সঙ্গে বোতলজাত ফ্লেভারের পানি দেওয়া হয়। ট্রায়ালে ডাবের পানি ব্যবহারে ৫৭ দশমিক ১ শতাংশ রোগীর চিকিৎসায় ভালো সাড়া পাওয়া গেছে, দ্বিতীয় শ্রেণির মাত্র ২৮ দশমিক ৩ শতাংশ রোগীর চিকিৎসায় ভালো ফল পাওয়া গিয়েছে।
আরও পড়ুন: ঘরোয়া উপায়ে কমান ফ্যাটি লিভার! এই নিয়মেই আজন্ম সুস্থ থাকবে শরীর
ডাবের জল ব্যবহারে ৫৩ দশমিক ১ শতাংশ রোগীর রোগ কমে গিয়েছে এবং তারা স্বস্তি পেয়েছেন। দ্বিতীয় ক্যাটাগরির মাত্র ২৮ দশমিক ৩ শতাংশ রোগী এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। পরীক্ষায় আরও দেখা গেছে, ডাবের পানি ব্যবহারের ফলে রোগীদের শরীরে অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমও (অন্ত্রে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া) পরিবর্তিত হয়। ওষুধের সঙ্গে ডাবের জল ব্যবহার আলসারেটিভ কোলাইটিসের চিকিৎসায় উপকারী।
আলসারেটিভ কোলাইটিস রোগে অন্ত্র ফুলে যায় এবং আলসারের মতো ক্ষত তৈরি হয়। এ কারণে রোগীদের পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া ও রক্তক্ষরণের সমস্যা হয়। এ ছাড়া জ্বর হয় এবং শরীরের ওজন কমতে শুরু করে। ড. বিনীত আহুজা জানান, এটি একটি আজীবন রোগ। চিকিৎসার জন্য রোগীকে ইমিউনিটি কন্ট্রোলের ওষুধও দিতে হয়। ডাবের পানিতে রয়েছে পটাশিয়াম। পটাসিয়ামে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এসব চিন্তা করেই পরীক্ষা করা হয় এবং ফলাফল পাওয়া যায় উৎসাহব্যঞ্জক। ভবিষ্যতে এটি চিকিত্সা হিসাবে ব্যবহার করার জন্য আরও গবেষণা করা দরকার।