রাত দুটো বাজে। তবুও অন্ধকার ঘরে জ্বলে রয়েছে একটি ছোট্ট চৌখুপী আলো। মোবাইল। আর তাঁর চকচকে দুটো চোখ। শৈশব থেকে বার্ধক্য সবটাই এখন আটকা পড়েছে ওই চৌকো স্ক্রিনের ভিতর। যার জেরে সারাদিনের কাজের তো ক্ষতি ছাড়াও ক্ষতি হচ্ছে রাতের ঘুমের।
শিশুদের ঘুম কেড়ে নিচ্ছে যে
২০২৩ সালে ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব কনটেম্পোরারি পেডিয়াট্রিকসের একটি গবেষণা জানাচ্ছে, ৩৪ শতাংশ শিশু দিনে ৯ ঘণ্টার কম ঘুমোয়। অন্য দিকে ৭৬ শতাংশ শিশু রীতিমতো ঘুমের সমস্যায় ভোগে। কেন এত কম ঘুম বা ঘুমের সমস্যা? সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ৬৫.৯ শতাংশ শিশু রাত আটটার পর থেকে ফোনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এছাড়াও ৬২.২ শতাংশ শিশু রোজ ২ ঘণ্টার বেশি ফোন ঘাঁটাঘাঁটি করে। সমীক্ষা বলছে, ঘুম না হওয়ার বা কম হওয়ার বড় কারণ এই ডিজিটাল স্ক্রিনে বুঁদ হয়ে থাকা।
আরও পড়ুন - Cabbage Benefits: গ্যাসের জন্য এড়িয়ে চলেন? বাঁধাকপির গুণ কিন্তু এই বড় রোগকে কাছে ঘেঁষতে দেয় না
কমছে মেলাটোনিন উৎপাদন
সম্প্রতি ভারতের সাই ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের একটি সমীক্ষাও বলছে একই কথা। ওই স্কুলের পড়ুয়াদের উপর সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গিয়েছে, অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীই স্লিপ ডিপ্রাইভেশন বা ঘুমের অভাবে ভুগছে। আর এর নেপথ্যে একটি বড় কারণ ডিজিটাল স্ক্রিন। চিকিৎসক তন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় (ডিরেক্টর, মেডিকা ইনস্টিটিউট অফ ক্রিটিক্যাল অ্যান্ড ইন্টারনাল মেডিসিন, মেডিকা সুপারস্পেশালিটি হাসপাতাল, মণিপাল হাসপাতাল - এর একটি ইউনিট) জানাচ্ছেন, ‘অধিকাংশ শিশুদেরই রাত এগারোটা বেজে যায় ঘুমোতে ঘুমোতে। এর বড় কারণ ডিজিটাল স্ক্রিনের ব্লু লাইট। এই লাইট আমাদের ব্রেনের প্রভাব ফেলে। মেলাটোনিন উৎপাদন কমিয়ে দেয়। যা ঘুম আনতে ও ঘুমিয়ে থাকতে সাহায্য করে। এ্য উৎপাদন কমে যায় বলে শরীর ঘুমের নানা সমস্যা হয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়।’
আরও পড়ুন - Cancer In Children: সন্তানের মামুলি জ্বরও হতে পারে ক্যানসারের লক্ষণ, নজর রাখুন এসব উপসর্গের দিকেও
কী বলছেন মনোবিদ?
অন্যদিকে মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের মনোবিদ সোহিনী সাহার কথায়, ‘আজকের কিশোর-কিশোরীরা একটি ডিজিটাল জগতে বড় হচ্ছে। ফলে অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম তাদের শরীর ও মনে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। এই বয়সে শারীরিক, মানসিক এবং আবেগজনিত অনেক পরিবর্তন ঘটে, যার ফলে তারা সহজেই ঘুমের সমস্যায় ভোগে। অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম ওজন বেড়ে যাওয়া, আচরণগত সমস্যা, পড়াশোনায় খারাপ রেজাল্ট ও ঘুমের সমস্যা তৈরি করে। এর ফলে স্মৃতিশক্তি, মনোযোগক্ষমতা এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণও কঠিন হয়ে পড়ে।’