
Betvisa
6.88% Weekly Cashback on 2025 IPL Sports
বিয়ে থেকে শুরু করে সন্তান আসার খবর কিংবা বিচ্ছেদের খবর সবই তারকারা সোশ্যাল মিডিয়ায় অনুরাগীদের সঙ্গে ভাগ করে নেন। কখনও কখনও তো আবার তাঁরা বলার আগেই চর্চা, জল্পনা শুরু হয়ে যায়। আর সবের মাঝে যে কোনও এক পক্ষকে বেছে নিয়ে আরেক পক্ষকে রীতিমত আক্রমণ শানানো হয়। করা হয় চটুল, নোংরা মন্তব্য। চাহাল ধনশ্রী থেকে অনুপম রায়, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, পিয়া চক্রবর্তী, কাঞ্চন মল্লিক সহ ভুরি ভুরি উদাহরণ দেওয়া যাবে এই ক্ষেত্রে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে সমাজের উপর, এমনকি সেলেবদের উপরই বা কী প্রভাব পড়ছে? কী জানালেন দুই বিশিষ্ট ব্যক্তি?
আরও পড়ুন: গরমের ছুটিতে কামব্যাক করছেন শতাব্দী! অতিপ্রাকৃত গল্পে জুটি বাঁধছেন কার সঙ্গে?
আরও পড়ুন: গন্ধ শুঁকে চালকুমড়ো-লাউ চেনার চেষ্টা! দিদি নম্বর ওয়ানে স্বৈরীতির কাণ্ডে হতভম্ব রচনা, বললেন...
বিচ্ছেদ একটি অত্যন্ত ব্যক্তিগত বিষয়, এই বিষয় নিয়ে এত চর্চা বা সোশ্যাল মিডিয়ার ভাষায় এত ‘খাপপঞ্চায়েত’ কেন বসে নেটপাড়ায়? মনঃসমাজকর্মী মোহিত রণদীপ হিন্দুস্তান টাইমসকে জানিয়েছেন, 'মানুষের কথা বলতে গেলে তো একটা বিষয় লাগে। আর বিষয় নিয়ে ভাবতে গেলে নানা রকমের সচেতনতা লাগে। সচেতন বিষয় নিয়ে কথা বললে তাতে যে রস সবাই পাবেন সেটার তুলনায় যখন কোনও কেচ্ছা কাহিনি নিয়ে আলোচনা হয় তখন সেই রস তৃপ্তির বিষয় হয়ে ওঠে। এটা একটা দিক। আরেকটি দিক হল, আমরা সবই জানতে পারছি সংবাদমাধ্যমের থেকে। তারকাদের জীবন সবসময়ই আতস কাচের নিচে থাকে। যা ছোটখাটো ঘটছে সেটাকে আরও বড় করে দেখানোর একটা প্রবণতা আছে সংবাদমাধ্যমের, এবং তারকারাও হয়তো সেটা চান। তাঁরা খবরে থাকতে চান। আর তৃতীয়ত হল তিলকে তাল করা তো আমাদের সামাজিক ঐতিহ্য।'
তিনি এদিন আরও জানান, 'এবার ধরুন পক্ষ নেওয়ার বিষয়টা। মানুষ তো তার জীবনে বিভিন্ন অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যায়। এখন কার সঙ্গে কী সম্পর্ক তাঁর রয়েছে, বা তাঁর নিজের জীবনের সঙ্গে কীভাবে মিলিয়ে তিনি দেখছেন বিষয়টাকে এই সমস্ত বিষয়ের উপর নির্ভর করে যে তিনি কোন পক্ষ নেবেন। আদৌ পক্ষ নেওয়ায় দরকার আছে কিনা সেই বোধ আমাদের অনেক সময় কাজ করে না।' অন্যদিকে সাইকোলজিক্যাল কাউন্সিলর পূর্বাশা মুখোপাধ্যায়ের কথায়, 'তারকাদের জীবন তো আতস কাচের তলায় থাকে। সেলেব মানেই অনেকেই ভাবেন তাঁদের জীবন নিয়ে যা খুশি বলে দেওয়া যায় সহজেই। আমি কারও পক্ষ নিতেই পারি যে অমুক ব্যক্তি একজন তারকা, আমি তাঁর ফ্যান। কিন্তু তাঁর কিসের ফ্যান? তাঁর অভিনয়, গান, ইত্যাদির ফ্যান। এটা সেই মানুষটার একটা দিক। তাঁর একটা সত্ত্বা। শিল্পী সত্তাকে প্রশংসা করছি। কিন্তু তিনি তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে কেমন সেটা তো তাঁর অভিনেতা সত্ত্বা বা গায়ক সত্ত্বা বা শিল্পী সত্ত্বাকে দেখে তো ব্যাখ্যা করা যাবে না। সে ব্যক্তি জীবনে কেমন সেটা তাঁর কাছে মানুষ দেখতে পারবে, আবার নাও দেখতে পারে। কিন্তু আমরা প্রশ্ন একটাই, এই যে পুলিশিগিরি, বা অজান্তে একটা দাড়িপাল্লা নিয়ে যে যাচাই করতে থাকি সেই দায়িত্ব আমাদের কে দেয়? নিজেরাই তো কোথাও একটা সেটা নিয়েছি।'
পূর্বাশা এদিন আরও বলেন, 'অনেক সময় তারকারাও তাঁদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে অনেক কিছু লিখে ফেলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। তারকা মানেই তাঁদের জীবনে কষ্ট হয় না, ভাঙনের ব্যথায় কিছু হয় না এমনটা নয়। তাঁদের জীবনকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা হতে পারে, জীবন যাপন আলাদা হতে পারে। কিন্তু মনে রাখতে হবে তাঁরা সবার আগে মানুষ। যে যাই কাজ করুক, যে ভাষায় কথা বলুক আমাদের সবার একটা জিনিস কমন। আমাদের অনুভূতিগুলো এক। তাঁদের যখন বিচ্ছেদ হয় তাঁদেরও কষ্ট, যন্ত্রণা হয়। দর্শক বা শ্রোতা হিসেবে বা একজন নেটিজেন হিসেবে আমাদের সত্যিই যদি এসব বিষয়কে যাচাই করতে হয় তাহলে নিরপেক্ষ ভাবে সবরকম দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে যেন যাচাই করা হয়। গঠনমূলক আলোচনা করা হয়। কারও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আগ্রহ থাকতেই পারে, এটা মানুষের মনের একটা দিক। কিন্তু এই কটাক্ষ, নেতিবাচক মন্তব্য সেটা কতটা প্রভাব ফেলছে ভাবা উচিত।'
পূর্বাশার সঙ্গে এক্ষেত্রে প্রায় একমত পোষণ করেন মোহিত রণদীপ। একই সঙ্গে তিনি গোটা বিষয়টাকে আরও ব্যাখ্যা করে বলেন, 'একটা ঘরে চার দেওয়ালের মধ্যে যা ঘটে এখন সেটা সোশ্যাল মিডিয়ায় চলে আসছে। ঘর আর বাইরের যে সীমারেখা, কোথায় থামতে হবে সেটা আমরা বুঝছি না। যে কথা খুব নিকট কাউকেই কেবল বলা যায়, সেটা আমরা খুব অবলীলায় সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখে দিচ্ছি। এটা ঠিক যে মানুষের ফিলিংস, কথা সেগুলোকে সঠিকভাবে এক্সপ্রেস করার জায়গা কমছে। ব্যক্তি মানুষের কাছে বলবে সেই জায়গা, সম্পর্কটাই তো তেমন করে থাকছে না। তার ফলে সোশ্যাল মিডিয়াই একমাত্র রাস্তা হয়ে দাঁড়াচ্ছে যেখানে বলে সে তৃপ্তি পাচ্ছে। কী বলছে, সেটার ফল, পরিণাম কী হবে, তার উপর দায়িত্ববোধ কতটা থাকছে, আমার কথা কার উপর কতটা প্রভাব ফেলবে এসব নিয়ে তো মানুষ ভাবে না। সেই বোধটাই তো কাজ করে না। আমরা এক অদ্ভুত সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, পারিবারিক বোধ, নাগরিক শিক্ষার মাধ্যমে আমরা যা যা রপ্ত করেছিলাম একটা সময় সেগুলো কোথাও যেন ভুলতে বসেছি।'
কিন্তু এটা থেকে কীভাবে বেরোনো যেতে পারে? বা কমানো যেতে পারে? কেনই বা চর্চা হচ্ছে এমন বিষয় নিয়ে? মোহিত রণদীপ জানান, 'এই পারিবারিক কেচ্ছা, বা তারকাদের জীবনের যে কেচ্ছাগুলোকে গুরুত্ব দিচ্ছি সেগুলো কি আদৌ আলোচ্য বিষয় হতে পারে বা খবরের পাতাতেও কি জায়গা পেতে পারে? আসার কথা কি? কোনও শিল্পীর, সিনেমা আর্টিস্টের কাজ নিয়ে ততটা আলোচনা হচ্ছে না যতটা তাঁর ব্যক্তি জীবন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এটা আমাদের সংবাদমাধ্যমের সমস্যা। তারা সবসময় বুঝছে না যে কাকে গুরুত্ব দেব, কতটা গুরুত্ব দেব। কাজের জায়গাগুলো গুরুত্ব হারাচ্ছে। আসলে হয়তো কাজের মানের জায়গাটাও বোধহয় ক্রমশ কমছে, সেই জন্যই হয়তো কাজ নিয়ে কথা বলার সুযোগ কমে যাচ্ছে। সেটাও হতে পারে। তার ফলে কেচ্ছা কাহিনি খবর হয়ে উঠছে। আর কেচ্ছা কাহিনি পড়ার অভ্যাস একটা অংশের মানুষের বরাবর আছে। এখন সমস্যা হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায় সেটা নিয়ে তাঁরা নিজেদের মতামত ব্যক্ত করছেন। সেটা তাঁদের নিজেদের ভাবনা চিন্তার সীমাবদ্ধতা থেকেই হচ্ছে।' পূর্বাশা এই বিষয়ে জানিয়েছেন, 'বিচ্ছেদ বিষয়টা ভীষণ কষ্টকর। যে শ্রোতা , দর্শক, নেটিজেনরা সেলেবদের নিয়ে এত কাটাছেঁড়া করেন তাঁরা তো বাইরের জায়গা থেকে দেখে বলছেন। খানিকটা আভাস পাওয়া যায় হয়তো যে এই মানুষটার সঙ্গে এই মানুষটার একটা সম্পর্ক ছিল, তাঁদের দুজনের সমীকরণের কিছু ছবি হয়তো দেখতে পাই সোশ্যাল মিডিয়ায়। কিন্তু এই যে মানুষ বিচার করছে, সেটার দায়িত্ব তো অজান্তেই বহুদিন ধরে তাঁরা নিয়ে নিয়েছেন। এখন সোশ্যাল মিডিয়া আছে তাই এত কিছু। আগে বা এখনও পাড়ার অনেকে আছেন যাঁরা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেন না কিন্তু আলোচনা করেন। পাড়ার কোনও ছেলে-মেয়ে সম্পর্কে থাকলে, তাঁদের বিচ্ছেদ হলে চর্চা তো চলেই। এবার কে কাকে সমর্থন করবেন সেটা তো সেই ব্যক্তির উপর নির্ভর করে। কিন্তু এই অপছন্দের মাপকাঠি কে ঠিক করে দিয়েছে, বা জাজ করার জায়গা যে আমি সারাক্ষণ দাড়িপাল্লায় মাপছি যে এই মানুষটা খারাপ, এই মানুষটার চরিত্র এই রকম, এটা কিসের ভিত্তিতে?'
আরও পড়ুন: কুণালকে 'রক্ষাকবচ', প্যারোডি বিতর্কে গ্রেফতার না করার নির্দেশ সহ আর কী বলল বম্বে হাইকোর্ট?
এই ভিস্কাস সার্কেল থেকে বেরোনোর পথ হিসেবে পূর্বাশা বলেছেন, 'আমার মনে হয় আমরা যদি আমাদের দেখার পরিধি একটু বড় করি, নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে পারি ভালো হয়। আমার কাউকে অভিনেতা, গায়ক, ইত্যাদি হিসেবে ভালো লাগতেই পারে কিন্তু সেটার জন্য তাঁর পার্টনারকে এমন সময় দুষিয়ে যাব, খারাপ মন্তব্য করে যাব? এবং পার্টনার হিসেবে সেই তারকার সঙ্গী অযোগ্য আমি কী করে জানছি? আবার অনেক সময় উল্টোটাও ঘটেছে, এমন অনেক অভিনেতা আছেন যাঁরা অভিনেতা হিসেবে দারুণ গুণী কিন্তু একাধিক সম্পর্কে জড়িয়েছেন বলে, এক্সপ্লোর করেছেন বলে তাঁকে কটাক্ষ করা হয়েছে। মানুষের মনের এটা একটা দিক যে তাঁরা ঠিক করে নিয়েছেন যে এভাবে বিচার করব, মাপব, ইত্যাদি। নিরপেক্ষ দৃষ্টি রাখাটা জরুরি। আমরা যাঁরই পক্ষ নিই না কেন সেটা ভালো লাগা থেকে নিই। তাঁদের জীবন সম্পর্কে কিন্তু বিস্তারিত ভাবে জানি না। ব্যক্তি জীবনে সেই মানুষটা আলাদা হতেই পারে। সাধারণ হতে পারে, বদমেজাজি হতে পারে, বা অন্য কিছু। এমনকি তারকাদের সঙ্গীদের জীবনের বিষয়েও কিন্তু তেমন ভাবে আমরা কিছু জানি না। ফলে নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে পারি না। কিন্তু সেটা জরুরি। কৌতূহল এবং অনুসন্ধিৎসু হওয়ার মধ্যে পার্থক্য আছে। বুঝতে হবে কতটা অন্যের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ভাবব। আমি কাউকে নিয়ে যদি সোশ্যাল মিডিয়ায় কুৎসা ছড়াই তাতে আমার কি কোনও আত্মতুষ্টি হচ্ছে, সেটাও ভাবতে হবে। বুঝতে হবে আমি যতটা জানি সেটা আংশিক সত্যি নাকি একমাত্র সত্যি।'
6.88% Weekly Cashback on 2025 IPL Sports