Indian Railway Break Journey: একটি টিকিটের পয়সায় দুটো ট্রেনে সংরক্ষণ পাবেন। ভারতীয় রেলের এই সুবিধাকে বলে ‘ব্রেক জার্নি’ নিয়ম। কোথাও ঘুরতে যাওয়ার পথে অন্য কোথাও ১-২ দিন থাকতে হলে (কাজ বা ঘোরার জন্য) ‘ব্রেক জার্নি’ নিয়ম মেনে নিশ্চিন্তে টিকিট কাটতে পারেন।
‘ব্রেক জার্নি’র টিকিট কাটলে কী কী সুবিধা
১. ধরা যাক, আপনি হাওড়া থেকে বেঙ্গালুরু যাবেন। এবার হয়তো কোনও কাজে বা শুধু ঘোরার জন্য বিজয়ওয়াড়া স্টেশনে নামবেন। এক্ষেত্রে অনেকে সাধারণত হাওড়া থেকে বিজয়ওয়াড়ার টিকিট কাটেন। তার পর বিজয়ওয়াড়া থেকে বেঙ্গালুরু। এতে বেশি টাকা লাগে। হাওড়া থেকে বিজয়ওয়াড়া সরাসরি টিকিট কেটে নিন। আপনার বেশ কিছু টাকা বেচে যাবে ট্রেন ভাড়া ও জিএসটি বাবদ।
২. যারা কাজের সূত্রে নিয়মিত ট্রেনে যাতায়াত করেন, তাদের জন্য মস্ত সুবিধা এই ব্রেক জার্নি। কোথাও ১-২ দিনের কাজ থাকলে সেটা মিটিয়ে আরামে অন্য ট্রেন ধরে গন্তব্যে যেতে পারবেন।
৩. কোথাও ১-২ দিনের জন্য বন্ধু বা পরিচিতের বাড়ি থাকতে চাইলেও এই নিয়মে টিকিট কাটতে পারবেন। ১-২ দিনের বেশি কোথাও ঘোরার না থাকলেও এভাবে ঘুরে আসল জায়গায় পৌঁছে যেতে পারেন এই টিকিটে।
‘ব্রেক জার্নি’র টিকিট কীভাবে কাটবেন

১. ব্রেক জার্নির টিকিট অনলাইনে কাটা যায় না। এর জন্য আপনাকে স্টেশনে গিয়ে টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট কাটতে হবে।
২. টিকিটের জন্য ফর্ম নিয়ে প্রথম অংশ অর্থাৎ ‘Onward/Return Journey Details’-এর আগে পর্যন্ত অংশ পূরণ করতে হবে আপনার যাত্রা শুরুর স্টেশন থেকে ব্রেক জার্নির স্টেশনের নাম দিয়ে। ধরুন, হাওড়া থেকে বেঙ্গালুরু যাবেন, ব্রেক নেবেন বিজয়ওয়াড়াতে। তাহলে লিখতে হবে হাওড়া থেকে বিজয়ওয়াড়া। তার পর আপনার নাম, ট্রেনের নাম, নম্বর, আর যারা যাচ্ছেন, তাদের তথ্য দিয়ে ওই অংশের অন্য খোপগুলো ফর্ম ভরে ফেলুন।

৩. এবার ব্রেক জার্নির স্টেশন থেকে গন্তব্যে যেতে অর্থাৎ বিজয়ওয়াড়া থেকে বেঙ্গালুরু যাওয়ার জন্য ‘Onward/Return Journey Details’-এর অংশ পূরণ করুন।
৪. এক্ষেত্রে একই ট্রেন বা অন্য ট্রেন বেছে নিতে পারেন। তবে ট্রেনের ক্লাস আগের ট্রেনের সঙ্গে মিলতে হবে। অর্থাৎ আগেরটা স্লিপার হলে এটাও স্লিপার হতে হবে। আগেরটা থার্ড এসি হলে এটাও থার্ড এসি।
আরও পড়ুন - GK Story: বন্দে ভারত নয়, রাজধানীও নয়, সবচেয়ে বেশি দূরত্ব ননস্টপ ছোটে এই এক্সপ্রেস!
৫. যেদিন বিজয়ওয়াড়া নামবেন, সেই দিনের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে একটি তারিখ আপনাকে এই অংশে দিতে হবে। কারণ ব্রেক জার্নির স্টেশনে আপনি ৪৮ ঘণ্টার বেশি থাকতে পারবেন না।
৬. এই অংশে বাকি তথ্য অর্থাৎ নাম, ফোন নম্বর দিয়ে ফর্ম সই করে দিলেই পেয়ে যাবেন ব্রেক জার্নির টিকিট।
‘ব্রেক জার্নি’র টিকিট কাটার শর্ত
১. শুরুর স্টেশন থেকে গন্তব্য স্টেশনের মাঝে যেখানে ব্রেক নেবেন, সেখানে ৪৮ ঘণ্টার বেশি থাকতে পারবেন না। থাকলে ব্রেক জার্নির টিকিট অবৈধ হয়ে যাবে।
২. ব্রেক জার্নিতে প্রথম ট্রেন থেকে নামার পরেই আপনাকে যেতে হবে টিকিট কালেক্টর বা স্টেশন মাস্টারের কাছে। তিনি আপনার প্রথম টিকিটে কখন নেমেছেন সেই সময়টা লিখে দেবেন। সেই সময় থেকে শুরু হবে ৪৮ ঘণ্টা সময়ের কাউন্টডাউন। এই পদ্ধতির নাম এনডর্সমেন্ট। টিকিট এনডর্স না করালে আপনার ব্রেক জার্নি কিন্তু বৈধ হবে না।
৩. ব্রেক জার্নিতে দুটো রিজার্ভেশন বা সংরক্ষণ হয়, ফলে একটা সংরক্ষণের স্টেশনে পৌঁছানোর আগে চাইলেই মাঝের কোনও স্টেশনে নামতে পারবেন না।
৪. ব্রেক ৫০০ কিলোমিটারের আগে নেওয়া যাবে না। অর্থাৎ ধরুন হাওড়া থেকে ভুবনেশ্বর কমবেশি ৪৫০ কিমি, তাই ভুবনেশ্বরে জার্নি ব্রেক করা যাবে না। ৫০০ কিলোমিটার পথ পেরনোর পর যে স্টেশন পড়ছে, সেই স্টেশনে ব্রেক করতে হবে। সেই হিসেবে হাওড়া-বেঙ্গালুরু দুরন্ত এক্সপ্রেসে বিজয়ানগরম বা বিজয়ওয়াড়াতে জার্নি ব্রেক করতে পারবেন। আবার ধরা যাক, আপনি হাওড়া মুম্বই দুরন্ত এক্সপ্রেসে রায়পুর (৮২৭ কিমি) পর্যন্ত যাবেন। এক্ষেত্রে আপনি বিলাসপুরে (৭১৭ কিমি) ব্রেক করতে পারবেন জার্নি।
৫. শুরু আর গন্তব্যের স্টেশনের মধ্যে দূরত্ব ১০০০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে একবার ব্রেক জার্নি করতে পারবেন। ১০০০ কিলোমিটারের বেশি হলে ২ বার ব্রেক জার্নি করতে পারবেন।
যেমন হাওড়া-বেঙ্গালুুরু দুরন্ত এক্সপ্রেসে বেঙ্গালুরুর দূরত্ব প্রায় ১৬০০ কিলোমিটার। এখানে আপনি ৫০০ কিলোমিটারের পর ২ বার ব্রেক জার্নি নিতে পারবেন। তার বেশি নয়।
৬. রাজধানী, বন্দে ভারত, শতাব্দী, জনশতাব্দী ইত্যাদি ট্রেনে ব্রেক জার্নি করা যাবে না।
৭. আপনাকে দুটো টিকিট দেওয়া হবে ব্রেক জার্নি করলে। প্রথম টিকিট অর্থাৎ জার্নি ব্রেকের আগের টিকিট ২ দিন বাদে পরবর্তী ট্রেনে ওঠার সময়েও লাগবে। ফলে কোনও টিকিট ফেলা যাবে না।
তথ্যসূত্র -