করোনার নয়া দুটি স্ট্রেন ছড়াচ্ছে সারা দেশে। আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে। এই অবস্থায় সুস্থ থাকতে হলে কী করণীয়? আট থেকে আশি সব বয়সের মানুষদের এখন কী কী সতর্কতা নিতে হবে? হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার সঙ্গে এই বিষয়ে বিস্তারিত কথা বললেন চার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
কারা ঝুঁকিতে?
পালমোনোলজিস্ট (ফুসফুসরোগ বিশেষজ্ঞ) চিকিৎসক রাজা ধর (হেড, পালমোনোলজি, সিএমআরআই হাসপাতাল) জানালেন, ‘কিছু রাজ্যে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা সামান্য বৃদ্ধি পেলেও এখন আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। বেশিরভাগ সংক্রমণ মাইল্ড বা হালকা প্রকৃতির। এর লক্ষণগুলি সাধারণ সর্দি লাগার মতো। তবে, মনে রাখতে হবে যারা বয়স্ক ও যাদের ডায়াবিটিস, হৃদরোগ, ফুসফুস বা কিডনি রোগ আছে, তাদের ঝুঁকি বেশি।
আরও পড়ুন - হাল ছেড়ে দেন ডাক্তার! গান গেয়ে সেবা করে স্ত্রীর ব্রেন টিউমার সারালেন স্বামী
কী কী সতর্কতা?
প্রাথমিকভাবে কিছু সতর্কতা মেনে চলার পরামর্শ দিলেন চিকিৎসক। জানালেন, ‘ভিড়ের মধ্যে মাস্ক পরা, হাত সাবান দিয়ে ধোয়া এবং সর্দির মতো লক্ষণ থাকলে অন্যদের বেশি কাছে না যাওয়ার মতো সতর্কতাগুলি অবলম্বন করতে হবে।’
বয়স্ক ব্যক্তিরা কতটা ঝুঁকিতে?
ইন্টারনাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দীপঙ্কর সরকার (ইন্টারনাল মেডিসিন অ্যান্ড ক্রিটিকাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ, মণিপাল হাসপাতাল, সল্টলেক) বললেন, ‘যেকোনও সংক্রমণেই ইমিউনোকম্প্রোমাইজড ব্যক্তিরা বেশি বিপদে থাকেন। ইমিউনোকম্প্রোমাইজড অর্থাৎ যাদের বয়স বেশি, সুগার, প্রেশার, হার্টের সমস্যা, কিডনির সমস্যা ইত্যাদি রয়েছে। এটা কোভিড বলে নয়, যেকোনও ভাইরাসের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কোমরবিডিটি বা এই রোগগুলি থাকে বলেই ঝুঁকিটা বাড়ে। কোভিড, ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো ভাইরাসগুলি প্রতি বছরই নিজের রূপ পাল্টায়। বর্তমানে সেটাই হচ্ছে। রূপ পাল্টায় বলে ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা প্রতি বছর নতুন করে তৈরি করা হয়। ফলে সুরক্ষিত থাকতে হলে প্রাথমিক সতর্কতাগুলি মেনে চলতে হবে। আরেকটি কথা অবশ্যই মনে রাখা দরকার। যে ভাইরাস বেশি সংক্রমণ ঘটায়, তার মারণক্ষমতা কম। ফলে সংক্রমণ বেশি হলে রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার হার বেশি হবে।’
আরও পড়ুন - চুপিচুপি বিয়ে সারলেন, স্ত্রীর পরিচয় কেন গোপন রাখলেন খান স্যর? এ এস খান আদতে কে?
গর্ভবতী মহিলাদের নিরাপদ থাকার উপায়?
স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সুজাতা দত্ত (প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ, ফোর্টিস হাসপাতাল, আনন্দপুর) জানাচ্ছেন, ‘গর্ভবতী মহিলারা সংক্রামিত হলে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করতে হতে পারে। পাশাপাশি তাদের অক্সিজেন থেরাপি এবং ওষুধের প্রয়োজন হতে পারে। নিরাপদ থাকার উপায় হল এখন নিয়ম করে মাস্ক পরা, হাত স্যানিটাইজ করা, শরীরের তাপমাত্রা এবং অক্সিজেনের মাত্রা পর্যবেক্ষণ করা। এছাড়াও নিয়মিত জল খেয়ে শরীর হাইড্রেটেড রাখতে হবে। যদি কোনও লক্ষণ দেখা দেয় আর তা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে, তাহলে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
গর্ভাবস্থায় কোনও জটিলতা থাকলে
গর্ভাবস্থায় অনেকেরই ডায়াবিটিস বা ব্লাড প্রেশার থাকে। তাদের ঝুঁকি কি বেশি? চিকিৎসকের কথায়, ‘বেশিরভাগ সুস্থ গর্ভবতী মহিলাদের গুরুতর সমস্যা না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে বেশি ওজন বা ডায়াবিটিসের মতো সমস্যা থাকলে, ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। কোভিড-১৯ গর্ভপাত বা অন্যান্য জন্মগত ত্রুটির ঝুঁকি বাড়ায় না। তবে মা গুরুতর অসুস্থ হলে শিশুর শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি ২ শতাংশ বেড়ে যায়। বিশেষ করে তৃতীয় ট্রাইমেস্টারে।’
শিশুদের সুরক্ষিত রাখবেন কীভাবে?
চিকিৎসক রুচি গোলাশ (শিশু বিশেষজ্ঞ, সিএমআরআই হাসপাতাল) বললেন, ‘শিশুদের জ্বর, ক্লান্তি, হালকা শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি হচ্ছে কি না সেদিকে খেয়াল রাখুন। এই ঘটনাগুলি ততটা গুরুতর নয়। হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয় না। তবুও সতর্কতা থাকা উচিত। গরমকালে শিশুরা স্কুল উন্মুক্ত স্থানে বেশি সময় থাকে। তাই এই সময় বেশি যত্ন দরকার। হালকা সংক্রমণ বা মাইল্ড ইনফেকশন হলেও ভাইরাস ছড়াতে পারে। তাই হাত ধুয়ে খাবার খাওয়া, ভিড়ে গেলে মাস্ক পরার মতো অভ্যাসগুলি ফিরিয়ে আনুুন। পাশাপাশি সোশাল ডিসট্যান্সিং মেনে চলার অভ্যাস করানো ভালো।