জিংগল বেল (Jingle Bells) একটি অত্যন্ত পরিচিত ক্রিসমাস গান, এখন ক্রিসমাসের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। এর আনন্দদায়ক সুর এবং উৎসবমুখর লিরিক্স স্লেই রাইডের মাধ্যমে বরফ ঢাকা প্রাকৃতিক দৃশ্য, ঝলমলে আলো এবং ছুটির আনন্দের ছবি মনের মধ্যে আনে। যদিও এটি আজ ক্রিসমাসের একটি ক্লাসিক গান হিসেবে বিবেচিত, এর উৎস ইতিহাস অত্যন্ত চমকপ্রদ এবং আকর্ষণীয়।
Jingle Bells-এর উৎস
Jingle Bells গানের রচনা করেন জেমস লর্ড পিয়ারপন্ট, ১৮৫৭ সালে, যা আজকের দিনে ক্রিসমাসের সাথে যুক্ত হলেও প্রথমে এটি ক্রিসমাস গান ছিল না। পিয়ারপন্ট, একজন আমেরিকান সংগীতজ্ঞ এবং অর্গানিস্ট, প্রথম গানটির শিরোনাম রাখেন One Horse Open Sleigh। এটি প্রথম পরিবেশিত হয় সাভান্না, জর্জিয়ায়, যেখানে পিয়ারপন্ট তখন বসবাস করছিলেন। গানটি আসলে ক্রিসমাসের জন্য নয়, বরং শীতকালীন ক্রীড়া—বিশেষত স্লেই রেসিং-এর উদযাপন হিসেবে রচিত হয়েছিল। স্লেই গাড়ির ঘণ্টা বাজানোর শব্দটি বোঝাতে গানটির মধ্যে জিংগল" শব্দটির ব্যবহার করা হয়েছিল।
(আরও পড়ুন: বছরের শেষ উৎসব, প্রিয়জনকে পাঠান বড়দিনের শুভেচ্ছা বার্তা)
এটা লক্ষ্যণীয় যে, গানটি মূলত ক্রিসমাসের জন্য নয়, বরং থ্যাংকসগিভিং-এর জন্য লেখা হয়েছিল, কারণ এটি সেই সময়ে একটি উৎসবমূলক অনুষ্ঠান হিসেবে পরিবেশিত হয়েছিল। তবে সময়ের সঙ্গে, মানুষ এটি ক্রিসমাসের সাথে সম্পর্কিত করতে শুরু করে, বিশেষত গানের আনন্দমুখর সুর এবং বরফে ঢাকা দৃশ্যের সঙ্গে এর সাদৃশ্যের কারণে।
Jingle Bells এর বিবর্তন
যদিও Jingle Bells প্রথমদিকে ক্রিসমাসের সাথে সম্পর্কিত ছিল না, তবে এটি সময়ের সঙ্গে ক্রিসমাসের গান হিসেবে জনপ্রিয় হতে থাকে। এর লিরিক্স, যা একটি আনন্দদায়ক স্লেই রাইড বর্ণনা করে, পুরোপুরি ছুটির সময়ের মেজাজের সাথে মিলে যায়। গানের আনন্দদায়ক সুর, আকর্ষণীয় মেলোডি এবং ঘণ্টার শব্দ সবকিছু মিলিয়ে এটি ক্রিসমাসের সময় উদযাপনের জন্য উপযুক্ত হয়ে ওঠে।
গানটি ১৯শ শতকের শেষের দিকে জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং ২০শ শতকের শুরুতে এটি একটি ক্রিসমাস গানের ধাঁচে পরিণত হয়। আজ, এটি ক্রিসমাসের ছুটির মরসুমের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে।
লিরিক্স এবং সঙ্গীত রচনা
Jingle Bells-এর লিরিক্স সহজ এবং গাওয়ার জন্য সঙ্গতিপূর্ণ, যা এই গানের ব্যাপক জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ। গানটি একটি আনন্দদায়ক স্লেই রাইডের বর্ণনা দেয়, যেখানে ঘণ্টার আওয়াজ আনন্দের সঙ্গে মিশে যায়। কোরাসটি বিশেষভাবে আইকনিক, যেখানে Jingle all the way! লাইনটি গানের আনন্দময় মেজাজের প্রতিফলন ঘটায়।
সঙ্গীতের দিক থেকে, Jingle Bells একটি প্রাণবন্ত ৪/৪ টাইম সিগনেচারে সেট করা, যা গানের মধ্যে গতির অনুভূতি সৃষ্টি করে এবং উত্সাহের ভাবনাকে আরও জোরালো করে তোলে। গানটি সাধারণত মেজর কিতে বাজানো হয়, যা এর আনন্দদায়ক প্রকৃতিকে আরও বৃদ্ধি করে। সঙ্গীতে ঘণ্টার ব্যবহার উৎসবমুখর অনুভূতি যোগ করে, যা ক্রিসমাসের সাথে এর সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করে।
বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা এবং কভার
বছরের পর বছর, Jingle Bells অসংখ্য শিল্পী দ্বারা বিভিন্ন শৈলীতে পরিবেশিত হয়েছে, যা ঐতিহ্যবাহী সংস্করণ থেকে জ্যাজ, পপ এবং এমনকি রক সংস্করণ পর্যন্ত বিস্তৃত। বিং ক্রসবি, ফ্রাঙ্ক সিনাত্রা, এবং দ্য বিটলস-এর মতো কয়েকজন উল্লেখযোগ্য শিল্পী এই গানে নিজেদের সংস্করণ প্রদান করেছেন। প্রতিটি সংস্করণ গানটির মৌলিক আকর্ষণ ধরে রেখে একটি অনন্য ব্যাখ্যা প্রদান করে।
(আরও পড়ুন: মাত্র ৩০ মিনিটেই তৈরি হবে ডিম ছাড়া কেক, সম্পূর্ণ সহজ পদ্ধতি জেনে নিন)
Jingle Bells অনেক ক্রিসমাস চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশন বিশেষ অনুষ্ঠানে স্থান পেয়েছে, যা এটিকে ছুটির মরসুমের একটি ক্লাসিক হিসাবে আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিভিন্ন শৈলীতে এবং বিভিন্ন পরিবেশে এর বহুমুখিতা নিশ্চিত করেছে যে গানটি বিশ্বব্যাপী শ্রোতাদের মাঝে প্রিয় হয়ে আছে।
Jingle Bells সম্পর্কে মজাদার কিছু তথ্য
১. প্রথম মহাকাশ সঙ্গীত: Jingle Bells মহাকাশে প্রচারিত প্রথম গান ছিল। ১৯৬৫ সালে, মহাকাশচারী টম স্টাফোর্ড এবং ওয়ালি শিররা একটি মহাকাশ মিশনের সময় গানটি বাজান, যা এটিকে মহাকাশে শোনা প্রথম গান হিসেবে পরিণত করে।
২. শুধু ক্রিসমাস নয়: যদিও Jingle Bells সাধারণত ক্রিসমাসের সাথে সম্পর্কিত, এটি মূলত একটি শীতকালীন গান ছিল এবং সময়ের সাথে ক্রিসমাসের সাথে যুক্ত হয়ে ওঠে।
৩. জনপ্রিয় ড্যাশিং থ্রু দ্য স্নো: বিখ্যাত লাইন Oh, what fun it is to ride in a one-horse open sleigh! ১৯ শতকে স্লেই রেসিং-এর জনপ্রিয় শীতকালীন শখ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিল।
৪. ক্রিসমাস বনাম শীতকালীন গান: Jingle Bells এতটা ক্রিসমাসের সাথে সম্পর্কিত হয়ে উঠেছে যে অনেকেই ভুলক্রমে এটিকে একটি ক্রিসমাস ক্যারল মনে করেন। তবে, গানটি কখনও একটি ধর্মীয় ছুটির গান ছিল না।
Jingle Bells-এর চিরন্তন ঐতিহ্য
Jingle Bells আজও ছুটির মরসুমের সবচেয়ে স্থায়ী এবং প্রিয় গানের মধ্যে একটি। এর আকর্ষণীয় সুর, উৎসবমুখর লিরিক্স এবং আনন্দময় প্রকৃতি এটিকে একটি চিরন্তন প্রিয় করে তুলেছে, যা সমস্ত বয়সের মানুষের মাঝে আনন্দ নিয়ে আসে। এটি যখন কোনও শপিং মলে, একটি পার্টিতে, অথবা একটি পারিবারিক সমাবেশে শোনা যায়, তখন Jingle Bells ছুটির আনন্দ ছড়িয়ে দেয়।
আগামী বছরগুলোতে, Jingle Bells সম্ভবত ক্রিসমাসের উদযাপনের একটি আইকনিক অংশ হিসেবে রয়ে যাবে, নিশ্চিতভাবে তার আনন্দময় সুরটি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে আরও জাঁকজমকভাবে বাজবে।