হিমোগ্লোবিন হল লোহিত রক্তকণিকা (RBC) তে উপস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন। শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন সরবরাহ করতে কাজ করে হিমোগ্লোবিন। শরীরে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি থাকলে ক্লান্তি, দুর্বলতা, মাথা ঘোরা এবং রক্তাল্পতার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই, সুষম খাদ্যাভ্যাস, সঠিক জীবনধারা এবং নিয়মিত ব্যায়াম করে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
যদি হিমোগ্লোবিনের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়, তাহলে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন এবং প্রয়োজনে আয়রন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করুন। আবার প্রাকৃতিক প্রতিকারের মাধ্যমেও, আপনি বাড়িতে বসেই শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বজায় রাখতে পারেন। এর জন্য, প্রথমেই জানা জরুরি যে বয়স অনুসারে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কত হওয়া উচিত এবং কীভাবে এটির ভারসাম্য রক্ষা করা যেতে পারে।
বয়স এবং লিঙ্গ অনুসারে স্বাভাবিক হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কত
বয়স এবং লিঙ্গ অনুসারে স্বাভাবিক হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ভিন্ন ভিন্ন হয়।
- ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী ছেলেদের ক্ষেত্রে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ১২-১৫.৫ গ্রাম/ডেসিলিটার হওয়া উচিত। যেখানে ১৮ বছরের বেশি বয়সী প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের হিমোগ্লোবিন ১৩.৫ থেকে ১৭.৫ গ্রাম/ডেসিলিটার হওয়া উচিত।
- ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক মাত্রা ১০-১৫.৫ গ্রাম/ডেসিলিটার এবং প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাদের ক্ষেত্রে ১২.০ থেকে ১৫.৫ গ্রাম/ডেসিলিটার।
শরীরে হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর জন্য প্রাকৃতিক প্রতিকার
যদি আপনার শরীরে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি থাকে, তাহলে আপনার খাদ্যতালিকায় আয়রন, ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন বি১২ এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করতে পারে এমন কিছু প্রাকৃতিক এবং ঘরোয়া প্রতিকার এখানে দেওয়া হল:
- গুড় এবং ছোলা খান: গুড় এবং ভাজা ছোলা খেলে হিমোগ্লোবিন দ্রুত বৃদ্ধি পায়। গুড় আয়রনের একটি প্রাকৃতিক উৎস এবং ছোলা প্রোটিন এবং ফাইবার সমৃদ্ধ।
- আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খান: হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে আয়রন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শরীরের আয়রনের চাহিদা পূরণের জন্য, পালং শাক, মেথির মতো সবুজ শাকসবজি খান। বিটরুট এবং ডালিম উভয়ই রক্ত বৃদ্ধিতে খুবই কার্যকর। এছাড়াও, ডুমুর এবং খেজুরে প্রাকৃতিক আয়রন পাওয়া যায় যা হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। সজিনার পাতায় প্রচুর পরিমাণে আয়রন এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়।
- ভিটামিন বি১২ গ্রহণ: ভিটামিন বি১২ এর অভাব শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে। দুধ, দই, পনির এবং ডিমের মতো দুগ্ধজাত দ্রব্য খান। নিরামিষাশীদের জন্য ফোর্টিফাইড সিরিয়াল এবং সয়া পণ্য ভালো বিকল্প হতে পারে।
- ভিটামিন সি: ভিটামিন সি শরীরে আয়রনের শোষণ বাড়াতে সাহায্য করে, যার ফলে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। কমলা, লেবু, মিষ্টি লেবু, আমলকী এবং টমেটো ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। গাজর এবং বিটের রস পান করলে হিমোগ্লোবিন দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
- ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার: ফলিক অ্যাসিড নতুন লোহিত রক্তকণিকা গঠনে সাহায্য করে। এই চাহিদা পূরণের জন্য, সয়াবিন, ব্রকলি, চিনাবাদাম, ছোলা এবং ভাত খান। কমলালেবু এবং পেঁপেও ফলিক অ্যাসিডের চমৎকার উৎস।
ডিসক্লেমার: এই প্রতিবেদনের তথ্য সাধারণত পরামর্শমূলক। সাধারণ তথ্যের ভিত্তিতে এই খবর। বিস্তারিত জানতে, পরবর্তী যে কোনও পদক্ষেপ করার আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।