কিছুদিন আগেই হইচইয়ে মুক্তি পেয়েছিল ‘ডাইনি’ সিরিজটি। এই সিরিজে মুখ্য ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল মিমি চক্রবর্তীকে। সম্প্রতি এই সিরিজকে রোজগেরে গিন্নি খ্যাত পরমা বন্দ্যোপাধ্যায় 'যাত্রা টাইপ' বলে কটাক্ষ করেন। এরপরই কড়া জবাব দেন যাত্রাশিল্পী কাকলি চৌধুরী। তিনি কেবল একা নন, বর্তমানে যাত্রা শিল্পের সঙ্গে জড়িত অনেকেই পরমার কথার বিরোধিতা করেন। এবার সমাজমাধ্যমের পাতায় যাত্রা শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে বাবা সন্তু মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতিচারণ করে কলম ধরলেন অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়।
স্বস্তিকা সমাজমাধ্যমের পাতায় তাঁর বাবার অভিনীত যাত্রার পোস্টার শেয়ার করে লেখেন, ‘বহু বছর আগে একটা বড় কাগজের জন্য বাবা একটা লেখা লিখেছিল- ‘যাত্রা করে ফাতরা লোকে’। ক'দিন আগে থেকে দেখছি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই নিয়ে খুব চর্চা হচ্ছে। তাই ভাবলাম নিজের বাড়ির ফাতরা লোকটাকে নিয়ে কিছু লিখি। আমার বাবা শ্রী সন্তু মুখোপাধ্যায় ২০ বছর বা তারও বেশি বছর ধরে যাত্রা করেছেন। প্রথম যাত্রাপালার নাম ছিল 'রাজভিখারী'। আমি সম্ভবত তখন ক্লাস ওয়ানে পড়ি। মহাজাতি সদন-এ প্রথম শো দেখতে গেছিলাম। পোস্টারটাও এখনও মনে আছে। বাবার এক মুখ দাড়ি। দেখে খুব কেঁদে ছিলাম। ওই বয়সে নিজের বাবা স্টেজে উঠে অন্য কেউ হয়ে গেছে সেই বোধটা থাকে না। যা দেখছি সেটাই জলজ্যান্ত সত্যি। তারপর থেকে এটাই রীতি হয়ে গেল। প্রথম শো দেখতে বাড়ির সবাই যেতাম।'
আরও পড়ুন: হুমা কুরেশির ইদের পার্টিতে এক রহস্যময়ীর সঙ্গে এক গাড়িতেঅক্ষয়ের ছেলে আরব? ভাইরাল ভিডিয়ো
যাত্রা মঞ্চস্থ করা তো সহজ কথা নয়। তার বহু আগে থেকেই চলত প্রস্তুতি। স্ক্রিপ্ট লেখা থেকে কাস্টিং, মিউজিক সবকিছু নিয়ে অভিনেত্রীর বাবা ব্যস্ত থাকতে। তবে একা তাঁর বাবা নন, তাঁর মা-ও যাত্রার মহিলা চরিত্রের জন্য জামাকাপড় কিনতন। রিহার্সালে সবার জন্য রান্না করে নিয়ে যেতে। স্বস্তিকার কথায়, ‘বাবাকে কোনও দিনই দেখিনি ষ্টারসুলভ আচরণ করে শুধু নিজেরটুকু নিয়ে মেতে থাকতে। কাজটা ওঁর, শোটা ওঁর, পুরোটাই ওঁর - তাই তার সব দায়ভার ওঁর, ভালোটাও, খারাপটাও। তাই বোধহয় আমার মধ্যেও সেটাই সেডিমেন্ট হয়ে জেঁকে বসেছে। আর্টিস্ট হওয়াটাই আসল কথা, স্টার নয়।’
অভিনেত্রীর জানান, প্রত্যেক বছর বাইরের প্রথম শো হত চন্দ্রকোনা রোডে। সেই সময় ডাকাত পড়ার ভয় থাকত রাস্তায়, তাই তাঁদের যাওয়া বারণ ছিল। তবে কাছাকাছি শো থাকলে নায়িকা ও তাঁর বোন যেতেন। তবে বাবার জন্য যাত্রা জগতের প্রথম সারির সব অভিনেতাদের সান্নিধ্য লাভ করার সুযোগ পান স্বস্তিকা।
আরও পড়ুন: আল্লু অর্জুনের সঙ্গে জুটি বাঁধতে চলেছেন প্রিয়াঙ্কা! অ্যাটলির কোন ছবিতে দেখা যাবে তাঁদের?
তবে স্মৃতিচারণের ফাঁকেই অভিনেত্রী যাত্রা শিল্পের কঠিন দিকটিও তুলে ধরেন। নায়িকা জানান, বাবাকে দেখে তিনি বুঝতেন এই কাজ কতটা কঠিন। তাই তাঁর কাছে বার বার যাত্রা করার জন্য ডাক এলেও তিনি সাহস করে এগিয়ে যেতে পারেননি। স্বস্তিকার কথায়, ‘নিজে অভিনয় করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত বুঝি যে সমস্ত মিডিয়ামের মধ্যে যাত্রাটাই সবচেয়ে কঠিন। ঝড় জল যাই হোক না কেন সময়ে পৌঁছতেই হবে। সময়ে পালা শুরু করতে হবে। ৬০ হাজার লোক হলেও, প্যান্ডেল খুলে দিতে হলেও, শেষ মানুষটাকেও কিন্তু সমস্ত কথা, সমস্ত শব্দ, গানের প্রত্যেকটা কলি পরিষ্কার করে শোনাতে হবে। যাত্রাপালা লোকে শুনতে যায়। সামনের সারি ছাড়া সবাই তো দেখতে পায় না। নট্য কোম্পানি, ভারতী অপেরা আরও যারা আজও যাত্রা প্রডিউসার আছেন প্রত্যেক বছর আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আমি কোনদিন হ্যাঁ করিনি, করবও না কারণ পারব না। আমি মাচা করেছি, গেয়ে নেচে মানুষকে আনন্দ দিয়ে টাকা রোজগার করেছি। কিন্তু যাত্রা করতে গিয়ে বাবার নখের ছিঁটেফোটা অভিনয়টুকু করতেও পারব না আর যাত্রাকে যে উচ্চমার্গে বাবা তাঁর-সহ শিল্পীদের এবং বাকি সমস্ত ডিপার্টমেন্ট-এর মানুষদের সঙ্গে নিয়ে যেতে পেরেছিলেন সেই কাজ করতে গিয়ে ডাহা ফেল করে আর সন্তু মুখোপাধ্যায়-এর নামটা ডোবাতেও পারব না।’