সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ছবি মানেই চরিত্রের ভাঙাগড়া, নানান এক্সপেরিমেন্ট, সঙ্গে থাকবে বাঙালিয়ানার ছোঁয়া। থ্রিলার বানাতে তিনি সিদ্ধহস্ত। এবার আলোচনায় সৃজিতের কপ ইউনিভার্সের ছবি ‘দশম অবতার’। ছবি মুক্তির আগে হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার সঙ্গে আড্ডা দিলেন পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়।
সৃজিত মুখোপাধ্যায়
যখনই কোনও ছবি বানিয়েছেন, অন্যরকম ভাবনা নিয়েই বানিয়েছেন। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ছবি মানেই চরিত্রের ভাঙাগড়া, নানান এক্সপিরিমেন্ট, আর সঙ্গে থাকবে বাঙালিয়ানার ছোঁয়া। আর থ্রিলার বানাতে তিনি সিদ্ধহস্ত। এবার আলোচনায় সৃজিতের কপ ইউনিভার্সের ছবি ‘দশম অবতার’। যেখানে আবারও ফিরছে সৃজিতের হাতে গড়া জনপ্রিয় চরিত্র ‘প্রবীর রায় চৌধুরী’। ছবি মুক্তির আগে হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার সঙ্গে আড্ডা দিলেন পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়।
সৃজিত: ‘দ্বিতীয় পুরুষ’ মুক্তির দিন সকালে বুম্বাদা আমায় ফোন করেছিলেন, জিজ্ঞেস করেন , ‘কী ব্যাপার, প্রবীর কোথায়!’ আমি তখন বলি, প্রবীর তো মাথায় গুলি করার পর মারা গিয়েছে। তাঁকে ফেরত আনতে গেলে প্রিকুয়্যাল করে আনতে হবে। সেটা আমি কিছুদিন পর লিখব। সেই ভাবনা থেকেই 'দশম অবতার'।
ছবির নাম ‘দশম অবতার’, যেটা আসলে কল্কি অবতার, এখানে কি কোনও পৌরাণিক যোগ আছে?
সৃজিত: অবশ্যই পৌরাণিক যোগ আছে, সেটা আমরা ছবিটা দেখলেই বুঝব। আসলেঅর্ণব রায়ের লেখা উপন্যাস থেকে ‘মহাভারত মার্ডারস’ বলে একটা ওয়েব সিরিজ আমার করার কথা ছিল। এটা নিয়ে যখন জংলি পিকচার্সের সঙ্গে কথা হচ্ছিল, ওরা বলেছিল, সিজন-২ টাও সাজেস্ট করতে। তখন সিজন-২ তে আমি দশাবতার মাডার্স বলে একটা গল্পের কথা বলি। যেটা ছিল হিন্দু মাইথোলজি (পুরাণ)-র সঙ্গে সিরিয়াল কিলিং-এর একটা কম্বিনেশন। সেই গল্পটা নিয়েই প্রবীর ও ভিঞ্চি দা-র বিজয় পোদ্দারকে ফেরত এনে 'দশম অবতার' বানিয়েছি।
ঐতিহ্যবাহী বাংলা মদের ঠেক ‘বারদুয়ারী’তে শ্যুটিংয়ের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
সৃজিত: খুবই মজার অভিজ্ঞতা ছিল সেটা (হালকা হেসে)। আমরা দুম করে ঢুকে শ্যুট করে বের হয়ে এসেছি। কেউ জানত না সেটা। অনেকে যাঁরা সেখানে বসে মদ্যপান করছিলেন, হঠাৎ দেখলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। তাঁরা অবশ্য প্রথমে কোনও প্রতিক্রিয়া দেখাননি, ভেবেছেন হয়ত নেশা হয়েছে। এরপর যখন ক্যামেরা দেখেছেন, তখন তো একপ্রকার লাফালাফি শুরু করে দেন।
আগে কখনও 'বারদুয়ারী'তে গিয়েছিলেন নাকি?
সৃজিত: হ্যাঁ, তা গিয়েছি।বারদুয়ারী এবং খালাসীডাঙা, দুটোতেই যাওয়ার অভিজ্ঞতা আছে, তবে সেটা কলেজে পড়ার সময়। কলেজ থেকে অনেকেই তখন যেত।
একদম শুরুর দিন থেকে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করছেন আর এটা ২০২৩। বন্ডিংটা কেমন?
সৃজিত: বন্ডিং তো যত দিন গিয়েছে ততই মজবুত হয়েছে। বুম্বাদা নিজেই একজন ইনস্টিটিউশন। ওঁর থেকে অনেক কিছু শেখার আছে, যেমন ডেডিকেশন, ডিসিপ্লিন। আর প্রিকুয়্যাল জিনিসটা খুব কঠিন। যে কোনও অভিনেতার সঙ্গে কাজ করাটা এক্ষেত্রে বেশ শক্ত। এটা সেই অভিনেতার সঙ্গেই করা সম্ভব, যিনি ভীষণ ডিসিপ্লিনড। যখন বুম্বাদাকে আমি প্রিকুয়্যালের কথা বলি, তখনই আমায় জিজ্ঞেস করেছিলেন, আমি কত বছর পিছোতে চাইছি। আমি বলি গল্পে ১৫ বছর তো পিছিয়ে যেতেই হবে। এরপর যেদিন লুক সেট হল, সেদিন তিনি এক্কেবারেই দারুণ। টাইট বাইসেপস, ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি, চুল ছোট করে ছাঁটা। ডিসিপ্লিনড অভিনেতা ছাড়া প্রিকুয়্যাল সম্ভব নয়।
জয়ার চরিত্রটা শুনেছি শুভশ্রীর করার কথা ছিল। আপনি না বললেন, নাকি শুভশ্রী করতে চাননি?
সৃজিত: আসলে আমরা তো জানতাম না যে ও প্রেগন্যান্ট (অন্তঃসত্ত্বা)। পরে শুনলাম। এই চরিত্রটাতে অনেক দৌড়ঝাঁপের বিষয় আছে, বিভিন্ন জায়গায় শ্যুটিংয়ের কথা ছিল। তখন আমরা দুজনেই সহমত হই যে এটা খুবই রিস্ক নেওয়া হয়ে যাবে।
কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় শ্যুটি হয়েছে তো?
সৃজিত: আমরা ৪৬টা লোকেশনে শ্যুট করেছি। দ্বিতীয় পুরুষ যেমন চায়না টাউন এলাকায় শ্যুট হয়েছে। ওই এলাকাটাকে তুলে ধরা হয়েছে, তেমনই দশম অবতারের শ্যুটিং কলকাতার অলিগলিতে হয়েছে।
আপনার হাত ধরে বাংলা ছবিতে নতুন ঘরানা তৈরি হয়েছে। এখন যে ‘মশলা’ ছবির রমরমা, এধরনের ছবি বানাতে ইচ্ছে হয়?
সৃজিত: আসলে ‘মশলা’ তো সব ছবিতেই থাকে। আমার ছবিতেও থাকে। আর্ট ফিল্মেও মশলা থাকে। তবে কোন মশলা, কী পরিমাপে কে দিচ্ছে, সেটাই আসল বিষয়। আমি আমার পরিমাপের যা রেঞ্জ, সেটাই দিয়ে এসেছি, এখনও তাই করছি। তবে হ্যাঁ, 'নির্বাক'-এ যে পরিমাপে মশলা গিয়েছে, 'জুলফিকর'-এ সেটা যায়নি। আমি আমার স্বাক্ষর, নিজস্বতা বজায় রেখে যেভাবে যতটা দেওয়া যায়, সেটাই করব। এমন বিষয় নয় যে আমাকে কারওর মতো ছবি বানাতে হবে। আমার যেমন ছবি দেখতে ভালো লাগে সেভাবেই বানাব।