বড় বিপাকে মডেল-অভিনেতা দিনো মোরিয়া। মিঠি নদী পলি অপসারণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় মুম্বই ও কেরলের ১৫টিরও বেশি জায়গায় একযোগে তল্লাশি চালিয়েছে ইডি। আর তালিকায় রয়েছে অভিনেতা দিনো মোরিয়া, বিএমসি–র এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার প্রশান্ত রামুগাড়ে এবং একাধিক ঠিকাদারের বাসভবন।প্রায় ৬৫ কোটির আর্থিক তছরুপের অভিযোগে এই তল্লাশি চালানো হয়েছে, যার তদন্ত চলছে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-এর অধীনে। এর আগে মামলাটি নথিভুক্ত করেছিল মুম্বই পুলিশের ইকনমিক অফেন্সেস উইং।
অভিনেতা দিনো মোরিয়া শিবসেনা নেতা আদিত্য ঠাকরের ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। তাঁকে এর আগে দু’বার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে মুম্বই পুলিশ। এখন ইডি তাঁর আর্থিক লেনদেন ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট নথিপত্র খতিয়ে দেখছে।জানা গিয়েছে, তদন্তের স্বার্থে শুক্রবার সকালে অভিনেতার বাড়িতে ইডির টিম পৌঁছে গিয়েছিল। এই ঘটনায় ইকনমিক অফেন্স উইং ১৩ জনকে গ্রেফতারও করে। অবৈধ তহবিলের প্রবাহ সনাক্ত করতে ইডি এখন অভিযানের সময় জব্দ করা আর্থিক নথি পর্যালোচনা করছে। জানা গিয়েছে, মিঠি নদী পলি অপসারণ মামলার প্রধান অভিযুক্ত কেতন কদমের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ ছিল দিনো মোরিয়া এবং তাঁর ভাই সান্টিনো মোরিয়ার। ইকনমিক অফেন্সেস উইং তদন্তে নেমে এ তথ্য জানতে পেরেছে। এরপরেই অভিনেতা ও তাঁর ভাইকে তলব করে আধিকারিকরা। তবে এবার অভিনেতার উপর চাপ বাড়তে চলেছে।
সূত্রের খবর, মিঠি নদীর পলি কেলেঙ্কারির প্রধান অভিযুক্ত কেতনের সঙ্গে ঠিক কী বিষয়ে বাতালাপ করেছেন অভিনেতা, তা জানতেই তলব করা হয়েছিল। তাই পরপর দুদিন ইকনমিক অফেন্সেস উইং-এর অফিসে হাজিরা দিয়েছিলেন অভিনেতা। দিনো মোরিয়া এবং তাঁর ভাই স্যান্টিনোকে ৮ ঘন্টা জেরা করেছিলেন তদন্তকারীরা। তদন্তকারীদের মতে, গ্রেফতারকৃত অভিযুক্ত কেতন কদমের স্ত্রী এবং সান্টিনো মোরিয়া ২০২০ সালে কোভিড মহামারীর সময় যৌথভাবে ইউবিও রাইডেজ প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কোম্পানিটি আনুষ্ঠানিকভাবে একটি বৈদ্যুতিক কার্ট (বাগি) পরিষেবা প্রদানকারী হিসাবে নিবন্ধিত ছিল। কিন্তু সন্দেহজনক আর্থিক লেনদেন সহজতর করার জন্য এটিকে পাইপলাইন- সম্পর্কিত ব্যবসা হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছিল। সূত্রমতে, নদী পরিষ্কার প্রকল্পের চুক্তি বদ্ধ সংস্থাগুলির মধ্যে অভিনেতার সঙ্গে যুক্ত একটি সংস্থাও রয়েছে। এই সংস্থাগুলির মাধ্যমে তহবিল অন্যত্র স্থানান্তরিত করা হয়েছে। এই কেলেঙ্কারিতে মিঠি নদী পরিষ্কারের জন্য বরাদ্দকৃত কোটি কোটি টাকার অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। অভিযুক্তের তালিকায় বেশ কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা এবং বেসরকারি ঠিকাদারও রয়েছেন।
মিঠি নদী পলি অপসারণ কেলেঙ্কারি কী?
এই কেলেঙ্কারিটি মিঠি নদী পরিষ্কারের জন্যে মুম্বই পৌর কর্পোরেশন দ্বারা ব্যবহৃত স্নাজ পুশার এবং ড্রেজিং মেশিনের ক্রয় ও বিক্রয়ের সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত। মিঠি মুম্বইয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী। মুম্বইয়ের বন্যা প্রতিরোধের লক্ষ্যে এই নদীখাত পরিষ্কারের জন্য বরাদ্দ করেছিল প্রশাসন। সেখানেই কোটি কোটি টাকার লেনদেনে অনিয়ম ঘটেছে বলে অভিযোগ। এরমধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত টেন্ডার, জাল নথি, যেগুলোর মধ্যে গরমিলের অভিযোগ উঠেছে। আরও অভিযোগ রয়েছে যে, কোচির একটি সংস্থা থেকে ৩ কোটি টাকার বিনিময়ে নদীর পলি নিষ্কাশনের জন্যই মেশিনগুলি ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। নদীর পলি অপসারণের জন্যে যে অর্থ প্রদান করা হয়েছিল তা কখনই খরচ করা হয়নি। ঠিকাদাররা ভুয়ো স্লিপ এবং লগবুক জমা দিয়ে টাকা নয়ছয় করেছে বলে অভিযোগ। তদন্তে উঠে এসেছে যে, এই কেলেঙ্কারির প্রধান অভিযুক্ত কেতন কদম এবং জয় যোশী। তাঁদের দুজনের বিরুদ্ধে ম্যাটপ্রপ সংস্থার সঙ্গে যোগসাজশে কোটি কোটি টাকার কেলেঙ্কারির অভিযোগ রয়েছে।