লখনউ লোকসভা কেন্দ্রটি ঐতিহাসিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি লোকসভা কেন্দ্র। উত্তরপ্রদেশের লখনউ পশ্চিম, লখনউ উত্তর, লখনউ পূর্ব, লখনউ সেন্ট্রাল এবং লখনউ ক্যান্ট এই পাঁচটি বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে লখনউ লোকসভা কেন্দ্রটি গঠিত। ১৯৫২ সাল থেকেই এই কেন্দ্রে লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে, বর্তমানে এই কেন্দ্রটিতে কোনও সংরক্ষণ নেই। ১৯৯১ সাল থেকে এই কেন্দ্রটি ভারতীয় জনতা পার্টির দখলে থেকেছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী এই কেন্দ্র থেকে বহুবার সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। বেশ কয়েকবার হারের পর অবশেষে ১৯৯১ সালে তিনি জয়লাভ করেন এই কেন্দ্র থেকে। পঞ্চম দফায় ২০ মে এখানে ভোটগ্রহণ করা হবে।
রাজনৈতিকভাবে এখনও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লখনউ কারণ বর্তমানে কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এখান থেকে সাংসদ। এবারও তিনি প্রার্থী। বিপক্ষে রয়েছেন সমাজবাদী পার্টি রবিদাস মেহরোত্রা। কার্যত একতরফা লড়াইয়ে ব্যবধান বৃদ্ধি করাই চ্যালেঞ্জ রাজনাথের। তবে অতীত ঘাঁটলে দেখা যাবে লখনউ চিরকাল গেরুয়া গড় ছিল না। বরং বারবার পছন্দ বদল করেছে উত্তরপ্রদেশের রাজধানী। ১৯৫২ এবং ১৯৫৫ সালেই লখনউ কেন্দ্র থেকে জাতীয় কংগ্রেসের প্রার্থী যথাক্রমে বিজয়লক্ষ্মী পন্ডিত এবং শেওরাজবতী নেহেরু জয় লাভ করেন। প্রথম লোকসভা নির্বাচন থেকেই এই কেন্দ্রে অখিল ভারতীয় জনসংঘ উল্লেখযোগ্য জনসমর্থন পেয়ে আসছিল। ১৯৫৭ নির্বাচনে অটলবিহারী বাজপেয়ী ৩৩.৪৪ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থান দখল করেন। এবারও জয়ী হয় জাতীয় কংগ্রেসের পুলিনবিহারী ব্যানার্জি।
১৯৬২ সালে ফের অটলবিহারী বাজপেয়ীকে হারিয়ে জাতীয় কংগ্রেসের বিকে ধন ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে জয়ী হন। ১৯৬৭ সালে কেন্দ্রটি জাতীয় কংগ্রেসের হাতছাড়া হয়। নির্দল প্রার্থী আনন্দনারায়ণ মোল্লা এই কেন্দ্র থেকে সংসদ নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে এই কেন্দ্র থেকে ৭১ শতাংশ ভোট পেয়ে জাতীয় কংগ্রেস প্রার্থী জয়ী হন। ১৯৭৭ সালে এক ধাক্কায় ৪৮ শতাংশ ভোট কমে যায় জাতীয় কংগ্রেসের, জনতা দলের পক্ষ থেকে সেম্বতি নন্দন বহুগুনা ৭২ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে জয়ী হয়। ১৯৮০ নির্বাচনে জাতীয় কংগ্রেসের থেকে শিলা দেবী ৪৭ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হন। ১৯৮৪ সালের নির্বাচনে জাতীয় কংগ্রেস প্রার্থী আরও একবার এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হন। এই নির্বাচনে প্রথমবার বিজেপি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এবং ১২ শতাংশ ভোট পায়। ১৯৮৯ সালের নির্বাচনে জনতা দলের মান্ধাতা সিং ৩৪ শতাংশ ভোট পেয়ে এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে দীর্ঘদিন ধরে পরাজয়ের পর অবশেষে অটল বিহারী বাজপেয়ী ৫১ শতাংশের কাছাকাছি ভোট পেয়ে জাতীয় কংগ্রেসের প্রার্থীকে পরাজিত করেন। বিজেপির টিকিটে ১৯৯১ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত পরপর পাঁচটি লোকসভা নির্বাচনে অটলবিহারী বাজপেয়ী এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হন।
২০০৯ সালে লালজি ট্যান্ডন ৩৪ শতাংশ ভোট পেয়ে এই কেন্দ্র থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের লোকসভায় রাজনাথ সিং এই কেন্দ্র থেকে ৫৪ শতাংশ ভোট পেয়ে সংসদ হয়েছিলেন। ২০১৯ সালেও ফের একবার রাজনাথ সিং এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হন, গতবারের তুলনায় তার ভোটের শেয়ারও কিছুটা বৃদ্ধি পায়। এবার দেখে নেওয়া যাক লখনউ কেন্দ্রের অন্তর্গত বিধানসভা কেন্দ্রগুলির গত নির্বাচনের ফলাফল। ২০২২-এর বিধানসভায় লখনউ পশ্চিম এবং লখনউ সেন্ট্রাল এই দুটি কেন্দ্রে সমাজবাদী পার্টির পক্ষ থেকে যথাক্রমে আরমান খান এবং রবিদাস মেহরোত্রা বিধায়ক নির্বাচিত হন। অন্যদিকে লখনউ উত্তর, লখনউ পূর্ব এবং লখনউ ক্যান্ট এই কেন্দ্র তিনটিতে ভারতীয় জনতা পার্টির পক্ষ থেকে যথাক্রমে নিরাজ বোরা, আশুতোষ ট্যান্ডন এবং ব্রজেশ পাঠক জয়ী হয়েছিলেন। বিজেপি এই কেন্দ্রে গত নির্বাচনগুলিতে ব্যাপক পরিমাণ জনসমর্থন পেয়েছে, দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সমাজবাদী পার্টি। সবমিলিয়ে অনেকটাই এগিয়ে বিজেপি, ইন্দ্রপতন হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে চূড়ান্ত ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে ৪ জুন অবধি।