‘ওয়ান ম্যান আর্মি’ আসলে কী? কেউ যদি কোনওদিন সেই প্রশ্নটা করেন, তাহলে নিশ্চিতভাবে ২০২৪-২৫ সালের বর্ডার-গাভাসকর ট্রফিতে জসপ্রীত বুমরাহের কথা বলতেই হবে। যে সিরিজে একজনও ব্যাটার ও বোলার তাঁকে ধারাবাহিকভাবে সহযোগিতা করলেন না, সেখানে ‘ম্যান অফ দ্য সিরিজ’ নির্বাচিত হলেন বুমরাহ। সিরিজে নিলেন ৩২টি উইকেট। অথচ ব্যাটাররা (যশস্বী জয়সওয়াল, কেএল রাহুল, ঋষভ পন্ত, নীতীশকুমার রেড্ডিরা মাঝে জ্বলে ওঠেন) ধারাবাহিকভাবে রান করলেন না। রোহিত শর্মা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন। সহজ ব্যাটিং পিচে একটি শতরান বাদ দিয়ে ডুবিয়েছেন বিরাট কোহলিও। আর বোলিংয়ের ক্ষেত্রে বুমরাহ যখন অস্ট্রেলিয়ানদের নাকানি-চোবানি খাওয়ালেন, তখন অন্য বোলাররা চাপটাই ধরে রাখতে পারলেন না। আর সেটার ফল যা হওয়ার, তাই হয়েছে। অনেকের মতে, বুমরাহের ব্যক্তিগত নৈপ্যুণতা না থাকলে সিরিজের ফলটা ১-৩ না হয়ে ০-৫ বা ০-৪ হতে পারত। আর যদি বুমরাহ সিডনিতে পুরোটা থাকতেন, তাহলে সিরিজের ফলটা ২-২ হতে পারত।
‘শরীরের সঙ্গে সবসময় লড়াই করা যায় না’, বললেন বুমরাহ
কিন্তু চোটের জন্য বুমরাহ সেই ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’ হয়ে লড়াইয়ের সুযোগটা পেলেন না। সিডনিতে দ্বিতীয় দিনে লাঞ্চের পরে পিঠের ব্যথার জন্য মাঠ ছাড়ার পরে আর বোলিংই করতে পারলেন না। ফলে চতুর্থ ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার কাজটা মারাত্মক সোজা হয়ে যায়। যা নিয়ে হতাশা ঝরে পড়ল বুমরাহের গলায়। তিনি বলেন, ‘(চোটের বিষয়টা) কিছুটা বিরক্তিকর। কখনও কখনও নিজের শরীরকে সম্মান করতে হয়। শরীরের সঙ্গে (সবসময়) লড়াই করতে পারেন না। কখনও কখনও আপনাকে সেটা মেনে নিতে হবে। সিরিজের সবথেকে মশলাদার উইকেটে বল করতে খুব ভালো লাগত। ’
অত্যধিক ‘ওয়ার্কলোড’-র দিকে ইঙ্গিত বুমরাহের?
আর বুমরাহের সেই মন্তব্যের পরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে যে বর্ডার-গাভাসকর ট্রফিতে অত্যধিক 'ওয়ার্কলোড' সামলাতে হয়েছে (বিশেষত মেলবোর্নে চতুর্থ দিনে), সেটাকেই দুষলেন ভারতের তারকা পেসার? কারণ প্রায় পুরো সিরিজেই বুমরাহ ছাড়া বাকি বোলাররা ডুবিয়েছেন। বারবার বুমরাহকে বোলিংয়ে আনতে হয়েছে। বাকিদের ব্যর্থতায় তাঁর উপর অমানুষিক ধকল গিয়েছে। প্রতিটা মুহূর্তে চাপ নিয়ে বোলিং করেছেন। সিডনির প্রথম ইনিংস ধরে পুরো সিরিজে ১৫১.২ ওভার বল করেছেন বুমরাহ। যা শুধুমাত্র মিচেল স্টার্ক এবং প্যাট কামিন্সের থেকে কম। বুমরাহ যদি চোট না পেতেন, তাহলে তাঁদেরকেও ছাপিয়ে যেতেন।
ব্যাটারদের দুষলেন বুমরাহ?
সেই পরিস্থিতিতে বুমরাহ যদি অত্যধিক 'ওয়ার্কলোড'-কে দুষে থাকেন, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। তবে বুমরাহের কথা থেকে সংশ্লিষ্ট মহল একটা বিষয়ে নিশ্চিত যে সিরিজ হারের জন্য ব্যাটারদের ভালোমতো দুষেছেন ভারতীয় তারকা। সরাসরি কিছু বলেননি। কিন্তু সিরিজের সেরা পুরস্কার নিতে এসে বুমরাহ জানান, টেস্ট জিততে গেলে চাপ শুষে নিতে হবে। মানিয়ে নিতে হবে পরিস্থিতির সঙ্গে। টিকে থাকতে হবে চাপের মুখে।