কপালে টানা বড় লাল তিলক, মাথায় উস্কোখুস্কো ঝাঁকড়া চুল, মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, চোখে অদ্ভুত এক ভয়ঙ্কর দৃষ্টি সবটা নিয়ে 'ভোগ' গল্পের 'অতীন'-এর একেবারে যথার্থ প্রতিচ্ছবি অনির্বাণ ভট্টাচার্য। সকলের প্রত্যাশা পূরন করে ‘অতীন’ হওয়ার জন্য কতটা প্রস্তুতি নিতে হয়েছিল অভিনেতাকে? হিন্দুস্থান টাইমস বাংলাকে একান্ত সাক্ষাৎকারে জানালেন অনির্বাণ।
'অতীন'-এর একটা ছবি ইতিমধ্যেই দর্শকদের মধ্যে তৈরি হয়ে রয়েছে, চরিত্রের প্রস্তুতি নিতে গিয়ে বাড়তি কতটা চাপ নিতে হল?
অনির্বাণ: অনেকে এই চরিত্রটাকে নিজের মত করে একটা রূপ দিয়েছেন। কিন্তু তার ওপর নির্ভর করে তো অভিনেতা চরিত্র প্রস্তুত করেন না। কারণ একে একজনের রূপদান তো এক এক রকম। আমি ‘অতীন’কে যে ভাবে বুঝেছি, পরিচালক আমাকে যেভাবে বলেছেন, গল্প চিত্রনাট্য যেভাবে লেখা ছিল সেগুলোই আমার চরিত্রটাকে প্রকাশ করার আধার।
কিন্তু বিষয়টা হচ্ছে যে যেহেতু এটা একটা অত্যন্ত জনপ্রিয় গল্প। ‘অতীন’কে অনেকেই মনে মনে এক রকম ভাবে ভেবেছেন। সেটা ১ মে থেকে মানুষের মিলিয়ে দেখার পালা। তাঁরা সেটা দেখবেন কতখানি মিলল বা কতখানি মিলল না। আমার পক্ষ থেকে সততার সঙ্গে 'অতনী'কে পর্দায় ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি।
অনেক সময় অনেক চরিত্র অভিনেতাদের যাপনে ছাপ রেখে যায়, 'অতীন'-এর চরিত্রটা খুব গভীর, সে কী দিয়ে গেল অনির্বাণকে?
অনির্বাণ: না এক্ষেত্রে আমার সঙ্গে সেরকম কিছু হয়নি। তবে এই ধরনের ঘটনা অনেক সময় অভিনেতাদের সঙ্গে ঘটে থাকে। তবে তার জন্য নির্দিষ্ট কিছু প্রসেস আছে। যদি একজন অভিনেতা সেটার মধ্যে দিয়ে যান, তখন এটা হওয়া সম্ভব। কিন্তু আমি ‘অতীন’কে সেই প্রসেসের মাধ্যমে তুলে ধরিনি।
সিরিজের শ্যুটিং চলাকালীন আমাকে একটা নির্দিষ্ট শারীরিক অবস্থা, মুখ, চোখ, দাড়ি নিয়ে থাকতে হয়েছিল। 'অতীন' ততদিন পর্যন্ত আমর সঙ্গে ছিল। শ্যুটিং যেদিন শেষ হয়, সেদিন আমি দাড়ি-গোঁফ কেটে ফেলার সঙ্গে সঙ্গে ‘অতীন’ও আমাকে ছেড়ে চলে যায়।
এই যে শারীরিক অবস্থার কথা বললেন তাঁর জন্য আলাদ কতটা প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়েছিল? মানে কোন বিশেষ শরীর চর্চা বা ডায়েট এইসব…
অনির্বাণ: না না, সেটার জন্য একেবারে বেসিক মেকআপ করেছিলাম। তবে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল চোখের বদল। মানুষের শরীরে যখন কোনও বদল আসে সেটা প্রাথমিক ভাবে চোখে ধরা পড়ে। সেই জন্যই ডাক্তারদের কাছে গেলে তাঁরা সবার আগে চোখ দেখেন। চোখ দেখলেই বোঝা যায় যে জ্বর হয়েছে, বা শরীরটা ভালো নেই। একজন সুস্থ মানুষের চোখে একটা প্রাণবন্ত ব্যাপার থাকে। তাই একজন অভিনেতাকে প্রাথমিক ভাবে চোখটাকে সত্য করে তুলতে হয়। তাছাড়া দাড়ি, গোঁফ, জামাকাপড় এসব দিয়ে তো বদলে দেওয়াই যায়। ভিতর থেকে অভিনেতাকে যেটা বদলে দেয় সেটা হচ্ছে তার চোখ।
গল্পে একটা পর্যায়ে দেখানো হয়েছে অতীন ভীষণ ভাবে আস্তিক হয়ে পড়ে, আপনি আস্তিক?
অনির্বাণ: আমি সুপার ন্যাচারাল, ভূত, ভগবান ইত্যাদিতে বিশ্বাস করি না। কিন্তু আমি অবশ্যই মনে করি যে বিজ্ঞানের ব্যাখ্যার বাইরেও কিছু একটা জিনিস ঘটে।
কখনও কোনও অতিপ্রাকৃতিক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন?
অনির্বাণ: আমি যদি কোনদিনও সেটার মুখোমুখি হই বা প্রত্যক্ষ করি, বা আমার শরীর মন দিয়ে উপলব্ধি করি, সেদিন থেকে আমার বিশ্বাস আসবে হয়তো। কিন্তু এখনও পর্যন্ত আমার এই ধরনের কোনও অভিজ্ঞতা হয়নি, যেখান থেকে আমার এই ক্ষেত্রে বিশ্বাস জন্ম নেবে।
কিন্তু এই সব ক্ষেত্রে নিজে বিশ্বাস না করেও, তেমন চরিত্রকে পর্দায় বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা কতটা কঠিন?
অনির্বাণ: অভিনেতাদের কাজই তাই। তাঁদের নিজেদের কোনও বিশ্বাসের অস্তিত্ব নেই। অভিনেতাদের কোনও একটা চরিত্র হয়ে উঠতে গেলে সেই চরিত্রের বিশ্বাসকে গ্রহণ করতে হয়, নিজের শরীর-মনের ওপর বসাতে হয়। অভিনেতা কোনও রাজনৈতিক দলের নেতা নন, যে বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করতে চাইবেন।
অভিনেতা পরমব্রতর সঙ্গে একাধিক কাজ হয়েছে, পরিচলক পরমব্রত কেমন?
অনির্বাণ: পরমদা খুব সেনসিটিভ, ওঁর অভিজ্ঞতা তো বিরাট। পরমদার যা যা গুণ এই পুরো জিনিসটাই তিনি তাঁর পরিচালনার ক্ষেত্রে দেন। ওঁর সেট খুব শান্ত থাকে।অভিনেতাদের জন্য এই সেটটা একেবারে আদর্শ। পরম দা, এতদিন ধরে কাজ করে ওঁর অভিজ্ঞতা, কারিগরি বুদ্ধি এবং ক্রিয়েটিভ নলেজ দিয়ে নিজে পরিচালনার ক্ষেত্রটায় এমন একটা অবস্থা তৈরি করতে পেরেছেন, যা অভিনেতাদের অসম্ভব ভাবে সুখী করে তোলে।
পরমব্রত নিজেও অভিনেতা তাই কী শিল্পীদের দিকটা এতটা বোঝেন?
অনির্বাণ: হ্যাঁ, আমার মনে খানিকটা তাই। আমি এরকম যত জন পরিচালকের নির্দেশনা কাজ করেছি, অর্থাৎ যাঁরা পরিচালনার পাশাপাশি অভিনয়টাও করেন, যেমন- অপর্ণা সেন, অঞ্জন দত্ত, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় সবার ক্ষেত্রেই অভিনেতাদের প্রতি একটা আলাদা কেয়ার থাকে।
আপনি নিজেও অভিনয়ের পাশাপাশি পরিচালনা করেন, এই কাজটা করতে গিয়ে কি পরিচালনার ক্ষেত্রে কোনও মতামত দিয়েছেন পরমব্রতকে?
অনির্বাণ: না না, আমার অভিনেতা সত্ত্বাটা সম্পূর্ণ আলাদা। আমি এক্ষেত্রে অভিনয় করতেই যাই। সেখানে আমাকে পরিচালক যেভাবে বলেন আমি সেভাবেই করার চেষ্টা করি। যদি আমার চরিত্র নিয়ে কিছু বলার থাকে, সেটা হয়তো তাঁকে আমি বলতে পারি। কিন্তু সেটা একটা অভিনেতার দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই বলি। সেটা তিনি কোন লেন্সে ধরবেন বা কোথায় ক্যামেরা বসিয়ে জিনিসটা ধরবেন সেটা একান্তই তার নিজস্ব সিদ্ধান্ত।
এখন তো ভূত বা অলৌকিক গল্প দর্শকরা বেশ পছন্দ করছেন, আপনি প্রায়ই বলেন ভূতের গল্প আপনাকে টানে, এরপর অলৌকিক ছবির পরিচালক হিসেবে অনির্বাণকে দর্শক পেতে পারেন কি?
অনির্বাণ: দেখা যাক। আমি এখনই নিশ্চিত করে তো কিছু বলতে পারব না। তবে আমি নিজে ভূতের ছবি বা অলৌকিক ছবি দেখতে ভালোবাসি। আমি নিজেই তার দর্শক। এটা বর্তমানে বুঝতে পারছি যে, বাঙালি দর্শকদেরও ভূতের ছবির প্রতি একটা আকর্ষণ আছে। খুব ভালো ভালো যে ছবি হয় তা নয়। তবে পরমদা এক্ষেত্রে একা হাতেই অনেকটা দর্শক তৈরি করতে পেরেছেন। সেটার উপর নির্ভর করে যদি আরও কিছু ভূতের ছবি হয়। দেখা যায় যে তার একটা দর্শক তৈরি হয়েছে। তবে হয়তো একটা ভূতের ছবি করা যেতে পারে। তবে আমি এখন পর্যন্ত কিছু ভেবে দেখিনি।
তখন কি আপনার পরিচালনায় পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়কে ক্যামেরার সামনে দেখা যেতে পারে?
অনির্বাণ: এটাও এই মুহূর্তে ভেবে দেখিনি। আসলে এগুলো তো অনেকটা দূরের ব্যাপার।