শুভব্রত মুখার্জি:- বৃষ্টি বিঘ্নিত সেঞ্চুরিয়ন টেস্ট ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে গিয়েছে। মাত্র তিনদিনেই ভারতকে হারিয়ে দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। বলা যায় দক্ষিণ আফ্রিকার পেসারদের দাপুটে বোলিংয়ের সামনে দাঁড়িয়ে খড়কুটোর মতন উড়ে গিয়েছেন ভারতীয় ব্যাটাররা। দুই ইনিংসের কোনটিতেই তারা ২৫০ রান ও করতে সমর্থ হয়নি। ভারতীয় ব্যাটারদের মধ্যে ব্যতিক্রম বলতে প্রথম ইনিংসে কেএল রাহুল এবং দ্বিতীয় ইনিংসে বিরাট কোহলি। ম্যাচে একমাত্র ভারতীয় ব্যাটার হিসেবে শতরান করেছেন রাহুল। আর তাঁর ইনিংসটিকে ম্যাচ চলাকালীন ইনিংস বিরতির সময়ে এত সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করেছেন প্রাক্তন ভারতীয় অলরাউন্ডার ইরফান পাঠান যে তাঁকে মন্ত্রমুগ্ধের মতন শুনতে দেখা যায় কিংবদন্তি সুনীল গাভাসকরকেও।
সেঞ্চুরিয়ন টেস্টের প্রথম দিনের লাঞ্চের বিরতির সময়ে কেএল রাহুলের ব্যাটিং বিশ্লেষণ করতে গিয়ে ইরফান পাঠান বলেন, ‘দেখুন টেকনিকের নিরীখে দেখতে গেলে বা বলতে গেলে এটা বলব যে সানি স্যার (সুনীল গাভাসকর) সবসময়ে বলে একজন ব্যাটারের কিভাবে বলকে একেবারে ঠিক তাঁর মাথার নীচ দিয়ে খেলা উচিত। একজন ব্যাটারের ক্ষেত্রে সবসময়ে একটা আলোচনা হয় যে সে কতটা তাঁর পা বলটা খেলতে গিয়ে স্ট্রেচ করছে। সেটা সামনের দিকে হতে পারে এমনকি পিছনের দিকেও হতে পারে। রাহুলের ক্ষেত্রে দেখছি রাহুল বলকে একেবারে কাছে আসতে দিয়েছে। তারপর খেলেছে। পাশাপাশি আজকে ওর ব্যাটিংয়ের আরও একটা দিক হল ওঁর ব্যাটের পজিশন। ব্যাটের যে অ্যাঙ্গেলটা রয়েছে সেটার সঙ্গে ওর হাতের সামঞ্জস্য ছিল না। একটু পিছনের দিকে ছিল (হাত)। এর ফলে যেটা হচ্ছিল ও (রাহুল ) অতিরিক্ত সময় পাচ্ছিল বল খেলার। আর এটা না হলে ব্যাটার সমস্যায় পড়ত। বলকে হয়তো নিজের পায়ে পাতাতেই মেরে বসত। আর এতে করেই ব্যাটারের ব্যাটের কানায় লাগার সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যাবে।’
এরপর পাঠান উপলব্ধি করেন তিনি হয়ত কিছুটা বেশি সময় নিয়ে ফেলেছেন। তৎক্ষণাৎ তিনি সুনীল গাভাসকরের কাছে ক্ষমাও চেয়ে নেন। গাভাসকর অবশ্য পাঠানের এই ক্ষমা মজার ছলে গ্রহণ করেননি। তার কারণ ও তিনি খুব ভালোভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। পাঠান বলেন, ‘সরি স্যার।’ জবাবে গাভাসকর বলেন ‘ও আমাকে সরি বলেছে। তবে আমি ওঁর এই ক্ষমা চাওয়াটা গ্রহণ করছি না। কারণ আজকে আমি নতুন কিছু শিখেছি। যতদিন কেউ এই সুন্দর খেলাটার ছাত্র থাকবে ততদিন সে শেখার সুযোগ পাবে। প্রতিদিন শিখতে পারলে এটা সেই ব্যক্তিকেই খুব সাহায্য করবে। আমি কখনও এমনভাবে ভাবিনি। তবে একজনের ব্যাটিং নিয়ে এই পর্যালোচনা অত্যন্ত গভীর পর্যালোচনা। কোন ক্রিকেটারের ব্যাটিং টেকনিক নিয়ে মারাত্মক এক পর্যালোচনা বলা যায়। আমি এই ডিটেল ব্যাখ্যাতে একেবারেই বিস্মিত না। কারণ পাঠান নিজে একজন অলরাউন্ডার। ও (পাঠান) রাহুলের ব্যাটিংয়ের পর্যালোচনা করেছে একজন বোলারের দিক থেকে।ফলে এতসুন্দর, এত নিখুঁত বর্ণনা দিয়েছে।’