এক ওভারে দুটি ভয়ংকর শট মেরে নিজেই নিজেকে বকা দিলেন ঋষভ পন্ত। হেডিংলে টেস্টের চতুর্থ দিনের প্রথম ঘণ্টায় যখন দুই ইংল্যান্ড পেসার বেশ ভালো করছেন, সেইসময় দুটি ভয়ংকর শট খেলার চেষ্টা করেন ভারতের সহ-অধিনায়ক। দু'বারই বরাতজোরে বেঁচে যান। কিন্তু সেই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে ওই দুটি শট খেলার কোনও দরকারই ছিল না। আর সেটা নিজেও বুঝতে পারেন পন্ত। তাই ক্রিজের অপর প্রান্তে দাঁড়িয়ে নিজেই নিজের সঙ্গে কথা বলতে থাকেন। নিজেই নিজেকে বকাঝকা করতে থাকেন ভারতের তারকা ব্যাটার। আর নিজেকে বোঝাতে থাকেন যে কী ভুলভাল শট খেলছি। মাথা ঠান্ডা করে খেলতে হবে। স্টাম্প মাইকে পন্তকে বলতে শোনা যায়, ‘এরকম খেলার দরকার নেই। ঠিক আছে? মারতে হলে সোজা মারতে হবে। জোরজবরদস্তি করার কোনও দরকার নেই।’ পরে পন্তের কথা অনুবাদ করে টেস্ট সিরিজের সরকারি সম্প্রচারকারী স্কাই স্পোর্টসে ধারাভাষ্যকার দীনেশ কার্তিক বলেন, ‘ও যেটা করেছে, সেজন্য নিজের উপরেই হতাশ। তবে আমি আশা করব যে ও নিজের কথা শুনবে।’
৪ বলের মধ্যে ২ ভয়াবহ শট পন্তের
আর সত্যিই নিজেকেই নিজে বকাঝকার করার মতোই শট খেলেছিলেন পন্ত। ৩৩ তম ওভারের তৃতীয় বলে ব্রাইডন কার্সকে স্লগ সুইপ মারার চেষ্টা করেন। যে বোলার ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার ছুঁইছুঁই গতিতে বল করছেন, দিনের প্রথম ঘণ্টার খেলা চলছে এবং বোলাররা ভালো ছন্দে আছেন, তখন সেই শটটা একেবারেই কাম্য নয়। কিন্তু পন্ত সেই কাজটাই করতে যান। বলটা তাঁর ব্যাটের কাণায় লেগে উপরের দিকে উঠে যায়।
আরও পড়ুন: ৪টি ক্যাচ পড়ার পরেও ৫ উইকেট নিলেন বুমরাহ! প্রায় অর্ধেক ইনিংসেই ছুঁলেন রেকর্ড
সেইসময় পন্তের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হচ্ছিল, ভারতের সহ-অধিনায়ক ধরেই নিয়েছেন যে এবার তাঁকে ড্রেসিংরুমে ফিরে যেতে হবে। কিন্তু হেডিংলেতে বেশ জোরে হাওয়া দেওয়ার কারণে বলটা স্লিপ ফিল্ডারদের থেকে দূরে চলে যায়। বলটা বাউন্ডারির দিকে টেনে নিয়ে যায় হাওয়া। সেইসঙ্গে চার হয়ে যায়। আর হাওয়ার সুবাদে বেঁচে যান ভারতের সহ-অধিনায়ক।
আরও পড়ুন: আম্পায়ার কথা না শোনায় রেগে গিয়ে বল ছুড়লেন পন্ত, আইসিসির ব্যানের মুখে পড়বেন?
কিন্তু জীবনদান পেয়েও নিজেকে শুধরে নেননি পন্ত। পঞ্চম বলের পরে ইংরেজ পেসার তাঁকে উদ্দেশ্যে করে কিছু একটা বলেন। সম্ভবত তাতেই মনোযোগ হারিয়ে ফেলে ষষ্ঠ বলে স্কুপ মারতে যান। কিন্তু সেই পরিকল্পনা সফল হয়নি। বলটা ফুল লেংথে ছিল। আর সুইং হচ্ছিল। ফলে শটটা মারতে গিয়ে উলটে পড়েও যান পন্ত। সেই পরিস্থিতিতে এলবিডব্লুয়ের জন্য জোরালো আবেদন করেন ইংরেজরা। রিভিউয়ে দেখা যায় যে বলটা আগেই পন্তের ব্যাটে লেগেছে। তারপর আছড়ে পড়েছে তাঁর প্যাডে।
নিজেই নিজেকে ঝাড় দিলেন পন্ত
আর সেই জীবনদান পেয়ে নিজেই নিজেকে বকতে থাকেন পন্ত। নিজেকে শান্ত হতে বলেন। তারইমধ্যে কিছুটা যেন মনসংযোগও হারিয়ে ফেলেন। কারণ ৩৪ তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ব্যাট করার জন্য পুরো তৈরি হয়ে গিয়েছেন কেএল রাহুল এবং বোলার ক্রিস ওকস ছুটে আসছিলেন, সেইসময় ব্যাটের গ্রিপ ঠিক করতে থাকেন পন্ত।
আরও পড়ুন: ৬ ক্যাচ ফস্কে চরম লজ্জার নজির ভারতের, বুমরাহের ম্যাজিকের পরে দারুণ ইনিংস রাহুলের
পন্তকে ইংরেজদের থেকে বাঁচালেন রাহুল
তার জেরে বোলারকে থামিয়ে দেন রাহুল। তাতে স্বভাবতই কিছুটা বিরক্ত হন ওকস। কেন এমন করেছেন রাহুল, তা জানতে চান রাহুল। হাত দেখিয়ে তিনি বোঝান যে এক্সট্রা কভারের ফিল্ডার নড়াচড়া করছিলেন। তাই এরকম করেছেন। যদিও ধারাভাষ্যকার তথা ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক নাসের হুসেন বলেন, ‘ঋষভ পন্তকে ধাক্কা দিয়ে বাসের সামনে ফেলে দিল না কেএল রাহুল। পন্ত তখনও প্রস্তুত হয়নি। কিন্তু ও এক্সট্রা কভারের দিকে হাত তুলে ওকসকে দাঁড় করিয়ে দিল।’