কোনও একজনের বা একাংশের ভুল কিংবা দোষের শাস্তি কি বাকিদেরও দেওয়া যায় - যাঁদের সঙ্গে আদতে সেই ভুল বা দোষের কোনও সম্পর্ক নেই? কলকাতা পুরনিগমের নয়া একটি বিজ্ঞপ্তি ঘিরে এই প্রশ্ন উঠছে। প্রশ্ন তুলছেন শহরের বিভিন্ন রুফটপ (ছাদের উপর) রেস্তোরাঁর মালিক ও কর্মচারীরা।সংবাদমাধ্যমে উঠে আসা তথ্য অনুসারে - বড়বাজারের ঋতুরাজ হোটেলে অগ্নিকাণ্ড ও মৃত্যুর পর দিঘা থেকে ফিরেই সেই ভবনের আশপাশ এবং পার্ক স্ট্রিটের ম্যাগমা হাউসের রেস্তোরাঁগুলির সামনের অংশ ও আশপাশ পরিদর্শন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। তাঁর বক্তব্য, সমস্ত রেস্তোরাঁকে যাবতীয় অগ্নিনির্বাপণ বিধি মেনে চলতে হবে, যথেচ্ছভাবে যেখানে সেখানে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার মজুত করে রাখা যাবে না, এবং ছাদে কোনও রেস্তোরাঁ করা যাবে না, ছাদ খালি রাখতে হবে।এই ঘটনার পরই কলকাতা পুরনিগম স্থির করেছে, শহরে যত রুফটপ রেস্তোরাঁ রয়েছে, সেই সমস্ত বন্ধ করতে হবে। এমনকী, এই মর্মে পুরনিগম কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞপ্তিও জারি করে ফেলেছে এবং তা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট বরোগুলিতে। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, বরো কর্তৃপক্ষ এই নির্দেশ কার্যকর করা হচ্ছে কিনা, তা দেখবে।কিন্তু, প্রশ্ন হল - যাঁরা সমস্ত নিয়ম মেনে, যথাযথ আপতকলীন ব্যবস্থা রেখে, লাইসেন্স নিয়ে রুফটপ রেস্তোরাঁ এত দিন ধরে চালিয়ে যাচ্ছেন, তাঁরা কেন হঠাৎ করে ব্যবসা বন্ধ করবেন? রুফটপ রেস্তোরাঁর মালিক ও কর্মচারীরা পুরনিগমের এই বিজ্ঞপ্তিতে দিশেহারা বোধ করছেন। তাঁদের বক্তব্য, এই রেস্তোরাঁ চালিয়ে এত মানুষের পেটের ভাত জোটে। রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে গেলে তাঁরা কী খাবেন? তাঁদের বিকল্প রোজগারের ব্যবস্থা কে করবে? এসব প্রশ্নের উত্তর আপাতত অধরা।সূত্রের দাবি, এই প্রেক্ষাপটে রুজিরুটি বাঁচাতে পুরনিগমের সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন রুফটপ রেস্তোরাঁগুলির মালিক ও কর্মচারীরা। উল্লেখ্য, এর আগে একইভাবে কলকাতা শহরে হুক্কা বার বন্ধের কথা ঘোষণা করেছিলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। কিন্তু, সেই পদক্ষেপের বিরুদ্ধেও কলকাতা হাইকোর্টে মামলা রুজু হয় এবং পুরনিগম তাতে হেরে যায়। ফলে আজও কলকাতা শহরে হুক্কা বার বন্ধ করা যায়নি।তাই, অতীতকে মাথায় রেখে এবং রুফটপ রেস্তোরাঁগুলির মালিক ও কর্মীচারীদের রুজি বাঁচানোর প্রচেষ্টার বিষয়টি সামনে রেখেই প্রশ্ন উঠছে আদৌ কি এভাবে শহরের সমস্ত রুফটপ রেস্তোরাঁ বন্ধ করতে পারবে কলকাতা পুরনিগম? নাকি ফের একবার আদালতে তাদের পরাজিত হতে হবে?একইসঙ্গে, এই সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন রুফটপ রেস্তোরাঁর মালিক ও কর্মচারীরা। তাঁদের বক্তব্য, কেউ নিয়ম না মানলে প্রশাসন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক। কিন্তু, এভাবে কিছু লোকের অন্য়ায়ের জন্য বাকি সকলের পেটে লাথি মারলে কীভাবে চলবে? সেক্ষেত্রে তো আদালতের দ্বারস্থ না হয়ে আর কোনও উপায় নেই!