ভুল চিকিৎসার জন্য মৃত্যু হয়েছিল রোগীর। এরজন্য চিকিৎসককেই দায়ী করেছিল পরিবার। শেষে চিকিৎসায় গাফিলতি প্রমাণিত হওয়ায় চিকিৎসককে মোটা অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিল জাতীয় ক্রেতা সুরক্ষা আদালত বা ন্যাশনাল কনজিউমার ফোরাম। ওই চিকিৎসককে ২৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। যদিও চিকিৎসক প্রথম থেকেই দাবি করে আসছেন, তিনি রোগীর ভুল চিকিৎসা করেননি এবং তাঁর দেওয়া ওষুধে কোনওভাবেই রোগীর মৃত্যু হওয়া সম্ভব নয়।
আরও পড়ুন: লাইসেন্স ছাড়াই অস্ত্রোপচার চারু মার্কেটে, পা কেটে বাদ গেল রোগীর
মামলা সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার সূত্রপাত ২০১৫ সালের জুন মাসে। হিমাংশুকুমার দাস নামে ওই রোগী কলকাতার বাঘাযতীনের একটি পলিক্লিনিকে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন। সেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কবীর দত্তের কাছে তিনি চিকিৎসা শুরু করেন। প্রথমে ওই চিকিৎসক বেশ কিছু উপসর্গ দেখে রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়েছিলেন। কিন্তু, তাতে রোগীর সমস্যার সমাধান না হওয়ায় চিকিৎসক রোগীর যক্ষ্মা রয়েছে কিনা তা জানার জন্য থুতু পরীক্ষা ও মান্টু টেস্টের পরামর্শ দেন। তবে তা পরীক্ষা করার পর রিপোর্টে রোগীর যক্ষ্মা ধরা পড়েনি। তারপরেও চিকিৎসক ওই রোগীকে যক্ষ্মার ওষুধ রিফাম্পিসিন ও আইসোনিয়াজ়িড দেন। সেই ওষুধ খাওয়ার কয়েক দিনের পরেই রোগীর লিভারে সমস্যা দেখা দেয় এবং শেষ পর্যন্ত লিভার ফেল করে মৃত্যু হয় ওই রোগীর।
মৃতের স্ত্রী কণিকা দাসের অভিযোগ, ওষুধ খাওয়ার কয়েক সপ্তাহ পরে তার স্বামীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। গায়ের রং হলুদ হয়ে যাওয়ায় প্রস্রাবের রং পরিবর্তন ঘটে। পরে তিনি স্বামীকে আবার ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু, চিকিৎসক সেই ওষুধগুলি চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু, সেই ওষুধ খাওয়ার পরে একসময় দেখা যায় রোগীর শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে ওঠে। শেষ পর্যন্ত রোগীকে কেপিসি হাসপাতাল ও পরে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন তাদের কাছে আসল বিষয়টা পরিষ্কার হয়।
সেখানে চিকিৎসকরা জানান যক্ষ্মা না থাকা সত্ত্বেও ওই ওষুধ চালিয়ে যাওয়া ঠিক হয়নি। অবশেষে পিয়ালেস হাসপাতালে লিভারসহ মাল্টি অর্গান ফেলিওর হয়ে মৃত্যু হয় ওই রোগীর। এর পরে ওই মহিলা স্বামীর মৃত্যুর বিচার চেয়ে প্রথমে জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করেন। এরপর মামলাটি ওঠে রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে। শেষে জাতীয় ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা ওঠে। সেখানে চিকিৎসককে ২৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। একইসঙ্গে গত সাত বছরের বার্ষিক ৬ শতাংশ হারে সুদ দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এর পাশাপাশি চিকিৎসকের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করার জন্য রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলেও আবেদন রয়েছে ওই মহিলার। তবে চিকিৎসক দাবি করেছেন যে ওই রোগীর লিভার ঠিক ছিল। তিনি যে ওষুধ দিয়েছিলেন তারফলে লিভারের ক্ষতি হওয়ার কোনও কারণ নেই।