মুহুর্মুহু অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে স্বজনহারার কান্না। একইসঙ্গে বেঁচে থাকার শেষ চেষ্টায় আকুল আর্তনাদ। বড় রাস্তার পাশে জমা হচ্ছে মৃতদেহের স্তূপ। রেললাইনের উপর পড়ে রয়েছে বিচ্ছিন্ন অঙ্গ–প্রত্যঙ্গ। কোথাও পড়ে রয়েছে কাটা হাত, কাটা পা। কোথাও আবার রক্তে–মাংসে দলা পাকিয়ে গিয়েছে ফুটফুটে শিশুর দেহ। যাঁদের শরীরে প্রাণটুকু রয়েছে, তাঁরা বাঁচার জন্য কাতরাচ্ছিলেন। আবার অনেককে টেনে–হিঁচড়েও বের করে আনা যাচ্ছিল না। শনিবার বাহানাগাজুড়ে শুধুই এমন হাড়হিম দৃশ্য দেখে শিউরে উঠেছে গোটা দেশ। সেখানে এই পরিস্থিতিতে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালে যাঁরা আহত হয়ে ভর্তি রয়েছেন তাঁদের দেখতে আসেন।
এদিকে রাজ্যপাল পৌঁছন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফিমেল মেডিসিন বিভাগে। সেখানে চিকিৎসাধীন উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের বাসিন্দা প্রতিমা বিবিকে তিনি দেখতে যান। দ্রুত তাঁর আরোগ্য কামনা করে অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের এই মহিলা প্রতিমা বিবিকে রাজ্যপাল তাঁর তহবিল থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা সাহায্য করেন। রাজ্যপালের কনভয় তারপর শিয়ালদা এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যায়। সেখানের মেল সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালি রামপুর গ্রামের বাসিন্দা ৩৫ বছরের শংকর দাস। তার ডানদিকের পাঁজরের দুটি হাড় ভেঙে গিয়েছে। রাজ্যপাল হাসপাতালের অধ্যক্ষ পিতবরণ চক্রবর্তী এবং হাসপাতাল সুপার ইন্দিরা দে পালের সঙ্গে কথা বলেন। রাজ্যপাল আহত পরিযায়ী শ্রমিক শংকর বাবুকে তাঁর তহবিল থেকে ৫০ হাজার টাকা সাহায্য করেন।
অন্যদিকে আজ, রবিবার বালেশ্বরে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছলেন কংগ্রেস সাংসদ অধীররঞ্জন চৌধুরী। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে তাঁকে এবং এআইসিসি-ইনচার্জ এ চেল্লা কুমারকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রয়োজনীয় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেও বলেছেন। বালেশ্বর ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ২৮৮ বলে দাবি রেলের। আহত হাজারের বেশি। রেল দুর্ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরেও উদ্ধার কাজ চলছে মৃতদেহের। আজ, রবিবারও চলছে এই উদ্ধারকাজের প্রক্রিয়া। উদ্ধারকারী দলের এক সেনাকর্মীরা বলেন, ‘যেভাবে ট্রেনের কামরাগুলি দুমড়েমুচড়ে গিয়েছে এবং একটি অন্যটির উপর উঠে গিয়েছে, তাতে দেহ উদ্ধার বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। গ্যাস কাটার দিয়ে বগি না কাটা পর্যন্ত দেহ বের করে আনা যাচ্ছে না।’